প্রতীকী ছবি।
গত লোকসভা ভোটে জেলার দুই কেন্দ্র, আসানসোল ও বর্ধমান-দুর্গাপুরে গড়ে ৩০ শতাংশ করে বুথে পোলিং এজেন্ট দেওয়া সম্ভব হয়নি, এমনই খবর বিজেপি ও সিপিএম সূত্রে। ওই ‘কঠিন’ বুথগুলিতে এ বার কী হবে, তা নিয়ে জল্পনা চলছে দুই শিবিরেই। বিজেপি সূত্রে খবর, ওই ‘কঠিন’ বুথগুলিতে পোলিং এজেন্ট দেওয়ার দায়িত্ব নেবেন তৃণমূল ও বাম দলগুলি থেকে পদ্ম-শিবিরে আসা স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। তাঁদের সেই বার্তা ইতিমধ্যেই দেওয়াও হয়েছে। এ দিকে, বামেদের ‘বিশ্বাস’, পোলিং এজেন্টদের বুথ-ছাড়া করার চেষ্টা হলে মানুষই ‘প্রতিরোধ’ করে তা রুখে দেবেন। বুথ ভিত্তিক বৈঠক করে সংগঠনকে সচল করতে সচেষ্ট তাঁরা।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলায় মোট বুথের সংখ্যা প্রায় ২,৬০০। বিজেপির অভিযোগ, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে আসানসোল ও বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে প্রায় ৩০ শতাংশেরও বেশি বুথে মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁদের পোলিং এজেন্টদের। তা না হলে পোলিং এজেন্টদের বসতেই দেওয়া হয়নি। বিজেপির অন্দরমহলের হিসেব বলছে: পাণ্ডবেশ্বর, আসানসোল (উত্তর) ও বারাবনি বিধানসভা কেন্দ্রে যথাক্রমে ৪০, ৩০ ও ২৫ শতাংশ বুথে পোলিং এজেন্ট ছিল না। বাকি বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতেও গড়ে ২৫ শতাংশ বুথে এজেন্ট ছিল না। বিরোধী এজেন্টদের মারধর করা বা বসতে না দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।
কিন্তু এ বার পরিস্থিতি বদলেছে বলে দাবি বিজেপি নেতৃত্বের। বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের দাবি, ‘‘এ বার পোলিং এজেন্টদের তাড়িয়ে দেওয়ার মতো জায়গায় তৃণমূল নেই। বহু কর্মী তৃণমূল ও বাম-কংগ্রেস শিবির ছেড়ে আমাদের দিকে এসেছেন। তাঁরাই বুথরক্ষা করবেন।’’
উদাহরণ হিসেবে, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ পাণ্ডবেশ্বরে তৃণমূল নেতা দেবাশিস রায় ও চিরন্তন চট্টোপাধ্যায়দের বিজেপি শিবিরে যাওয়ার কথা বলছেন। উঠে আসছে পাণ্ডবেশ্বরের বিদায়ী বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি, দুর্গাপুরের কাউন্সিলর চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখের বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কথাও। ঘটনাচক্রে, পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডে তৃণমূলের দায়িত্বে ছিলেন দেবাশিসবাবু। তিনি বলেন, ‘‘কী ভাবে বুথে পোলিং এজেন্ট বসাতে হয় তা জানি। তৃণমূলের বুথ ম্যানেজমেন্ট আমরাই করতাম। এ বার অন্য চিত্র দেখবে তৃণমূল।’’ চিরন্তনবাবুরও দাবি, ‘‘বুথে বিজেপির পোলিং এজেন্ট থাকবে সারা দিন, এই নিশ্চয়তা দিতে পারি।’’ ভোটের দিন বুথে ‘খোলা মাঠ’ পাবে না তৃণমূল, বলছেন সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া আসানসোল পুরসভার বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর অভিজিৎ আচার্য, ইন্দ্রানী আচার্য-সহ অন্য ‘তৃণমূলত্যাগীরা’ও।
তবে বিজেপির যেখানে ‘দলত্যাগী’রাই ভরসা, সিপিএম সেখানে ‘জন-প্রতিরোধে’র কথা বলছে! সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘পোলিং এজেন্ট না দিতে পারার মতো অবস্থা আমাদের হয়নি। আমরা বুথে-বুথে বৈঠক করছি। ছোটছোট সভা করছি। বুথ থেকে পোলিং এজেন্ট তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে মানুষের প্রতিরোধের মুখে
পড়তে হবে।’’
যদিও, যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসনের প্রতিক্রিয়া, ‘‘পোলিং এজেন্ট দেওয়ার লোক পায় না বিজেপি। একই হাল সিপিএমের-ও। লোকসভায় ওরা পোলিং এজেন্ট না দিতে পেরে আমাদের ঘাড়ে দোষ চাপায়।’’