নন্দীগ্রামে মমতার বিরুদ্ধে শুভেন্দুই।
নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছেন শুভেন্দু অধিকারীই। শনিবার প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করে জানিয়ে দিল বিজেপি।
শুভেন্দু বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পরেই আলোচনার কেন্দ্রে ছিল নন্দীগ্রাম। যে জমি আন্দোলন থেকে উত্থান মমতার, সেখানে একসময় তাঁর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছিলেন শুভেন্দু। পরবর্তী সময়ে শুভেন্দু এবং অধিকারী পরিবারের গড় হয়ে ওঠে নন্দীগ্রাম। তাই সেখানে জমির দখল টিকিয়ে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল তৃণমূল এবং মমতার কাছে। তাই ফেব্রুয়ারি মাসে তেখালির মাঠে দাঁড়িয়ে নন্দীগ্রাম থেকে নিজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানিয়ে দেন মমতা।
মমতার এই ঘোষণায় স্বভাবতই হইচই পড়ে যায় বিজেপি-র অন্দরে। নন্দীগ্রামকে পাখির চোখ করলেও, তখনও সেখানে কাকে নামানো হবে, তখনও তা ভেবে উঠতে পারেননি গেরুয়া নেতৃত্ব। তবে মমতার ঘোষণার পর থেকেই শুভেন্দুকে সেখানে তৃণমূল দলনেত্রীর বিরুদ্ধে নামানোর দাবি জোরালো হয়ে উঠতে শুরু করে। তার নেপথ্যে শুভেন্দুর ভূমিকাও কম ছিল না। নিজে নন্দীগ্রামে প্রার্থী হতে চান কি না, স্পষ্ট না করলেও, মমতাকে নন্দীগ্রামে ৫০ হাজার ভোটে হারিয়ে ছাড়বেন বলে হুঁশিয়ারি দিতে শুরু করেন তিনি। এমনকি নন্দীগ্রাম থেকে ভোটে লড়লে, শুধু নন্দীগ্রাম থেকেই মমতাকে লড়তে হবে, মুখরক্ষার জন্য ভবানীপুরকে হাতে রাখা চলবে না বলেও সুর চড়াতে শুরু করেন তিনি। বিজেপির অন্য নেতারাও তাতে গলা মেলান।
কিন্তু এমন তর্জন-গর্জনের মধ্যেও শনিবার নন্দীগ্রাম থেকেই দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করেন মমতা। কালীঘাট থেকে ২৯১ আসনে প্রার্থী ঘোষণার সময় বলেন, ‘‘কথা দিলে কথা রাখি আমি। নন্দীগ্রাম থেকেই এ বার ভোটে লড়ছি আমি।’’ মমতার এই ঘোষণার পরই বিজেপির প্রার্থিতালিকার দিকে তাকিয়ে ছিলেন সকলে। শনিবার বিকেলে যাবতীয় জল্পনার অবসান ঘটল।
মমতা নন্দীগ্রামে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণার পরেই তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে তোপ দাগতে শুরু করেন শুভেন্দু। নন্দীগ্রামের মানুষ ভূমিপুত্রকে প্রার্থী দেখতে চায়, তাই মমতার হার নিশ্চিত বলে দাবি করতে শুরু করেন তিনি। এমনকি প্রার্থিতালিকা ঘোষণার আগে শনিবার নন্দীগ্রামের চণ্ডীপুরে পথসভায় গিয়ে মমতাকে ‘বহিরাগত’ বলে কটাক্ষও করেন তিনি, ঠিক যে ভাবে কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে আসছে জোড়াফুল শিবির।
রবিবার ব্রিগেডে বিরাট জনসভা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। তার আগে, শনিবার প্রথম দু’ফার নির্বাচনে ৬০টি আসনের মধ্যে ৫৬টিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিজেপি। এর মধ্যে ১টি ছাড়া হয়েছে আজসুকে। বড়জোড়া, কাশীপুর এবং খড়্গপুর সদরে কাকে প্রার্থী করা হচ্ছে, তা-ও এখনও পর্যন্ত খোলসা করা হয়নি।
এখনও পর্যন্ত যে তালিকা পাওয়া গিয়েছে, তা থেকে জানা গিয়েছে—
• বিনপুরে বিজেপির প্রার্থী হচ্ছেন পালন সোরেন।
• দাঁতনে প্রার্থী হচ্ছেন শক্তিপদ নায়েক।
• নয়াগ্রামে প্রার্থী হচ্ছেন বকুল মুর্মু।
• গোপীবল্লভপুরে বিজেপি প্রার্থী সঞ্জিত মাহাত।
• ঝাড়গ্রামে বিজেপি প্রার্থী সুখময় শতপতি।
• কেশিয়ারিতে বিজেপির প্রার্থী সোনালি মুর্মু।
• খড়্গপুরে বিজেপির প্রার্থী তপন ভুঁইয়া।
• গড়বেতায় বিজেপির প্রার্থী মদন রুইদাস, শালবনিতে রাজীব কুণ্ডু।
• বিষ্ণপুরে বিজেপি প্রার্থী তন্ময় ঘোষ, ইন্দাস থেকে বিজেপি প্রার্থী নির্মল ধাড়া।
• হলদিয়ায় বিজেপির প্রার্থী তাপসী মণ্ডল। নন্দীগ্রামে বিজেপির প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী।
• সবংয়ে বিজেপি প্রার্থী অমূল্য মাইতি। ডেবরায় বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষ।
• তমলুকে বিজেপির প্রার্থী হরেকৃষ্ণ বেরা। ময়নায় বিজেপির প্রার্থী অশোক ডিন্ডা।
• নন্দকুমারে বিজেপির প্রার্থী নীলাঞ্জন অধিকারী।