ব্রিগেডে সমাবেশের প্রস্তুতি। শুক্রবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
রাজ্যে বিরোধী জোট প্রক্রিয়ার গতি বাড়াতে সাহায্য করল কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন!
ব্রিগেড সমাবেশের যখন আর দু’দিনও বাকি নেই, সেই সময়েই বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করে কমিশন জানিয়ে দিয়েছে, আগামী মঙ্গলবার থেকেই প্রথম দফার ভোটের মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। তার ফলে, জোটের বাকি কাজ সম্পূর্ণ করতে এখন দ্রুত তৎপর হতে হচ্ছে সব পক্ষকেই। বামেদের সঙ্গে আসন-রফা প্রায় হয়ে গিয়েছে আব্বাস সিদ্দিকির ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ)। সমঝোতা সম্পূর্ণ করার জন্য আলোচনা এগোতে চেয়ে কংগ্রেসকে এ বার চিঠি দিয়েছে আইএসএফ। প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বও আজ, শনিবার প্রথমে সিপিএমের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন। তার পরে কথা হবে আইএসএফের সঙ্গে।
আইএসএফের প্রধান পৃষ্ঠপোষক আব্বাস অবশ্য শুক্রবার বামেদের ভূমিকার প্রশংসা করে ব্রিগেডে দলবদ্ধ ভাবে শামিল হওয়ার জন্য সকলের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি নিজেও রবিবার ব্রিগেডের মঞ্চে থাকবেন। তাঁর বক্তব্য, তরুণ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ, দুর্নীতিমুক্ত বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ব্রিগেড সমাবেশকে ‘সফল’ করতে হবে। মূল উদ্যোক্তা সিপিএমের দাবি, সাম্প্রতিক কালের মধ্যে এ বারের ব্রিগেড ‘ঐতিহাসিক’ হবে। সব ঠিকঠাক থাকলে ব্রিগেড থেকেই প্রথম পর্যায়ের প্রার্থী ঘোষণাও করে দিতে চায় আলিমুদ্দিন। পরে আসরে নামলেও ব্রিগেড সমাবেশে ভাল সংখ্যায় লোকজন হাজির করার জন্য তৎপর হয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্বও।
এ সবের মধ্যেই চর্চায় ফিরে এসেছে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নাম। দু’বছর আগে অসুস্থ শরীর নিয়ে ব্রিগেড ময়দানে উপস্থিত হলেও গাড়ি থেকে নামতে পারেননি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। এখন তাঁর শরীর গত কয়েক মাসের চেয়ে একটু ভাল। কিন্তু ব্রিগেডের মাঠে তাঁকে যেতে দেওয়ার ঝুঁকি নিতে চিকিৎসকেরা এখনও রাজি নন। বামেদের তরফে চেষ্টা চলছে বুদ্ধবাবুর বার্তা ব্রিগেডে পৌঁছে দেওয়ার। এই নিয়ে প্রশ্নের জবাবে এ দিন আলিমুদ্দিনে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘‘বহু মানুষই চান, বুদ্ধবাবু আবার সামনে আসুন। তাঁরা বুঝতে পারছেন, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে অন্যায় হয়েছিল। রাজ্যের স্বার্থে তাঁর শিল্পায়নের চেষ্টাকে যে ভাবে ভেস্তে দেওয়া হয়েছিল, তার ক্ষতি অনেকেই এখন বুঝতে পারছেন। বুদ্ধবাবুর মনোবল চাঙ্গা, তিনি আমাদের অভিভাবক। কিন্তু সমস্যা শরীর-স্বাস্থ্য নিয়ে।’’ সেলিমের সংযোজন, ‘‘শরীর যদি সহযোগিতা করে, তা হলে তাঁকে আবার সশরীর দেখা যাবে।’’
ফুরফুরা শরিফে এ দিনই আব্বাস বলেছেন, ‘‘বামেদের সঙ্গে আমাদের সমস্যা মিটে গিয়েছে। বামেরা আমাদের ৩০টি আসন ছেড়েছে। কথা চলছে ৪-৫টি আসনের বিষয়ে। কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে রফা-সূত্র এখনও মেলেনি। আলোচনার জন্য আমাদের তরফ থেকে কংগ্রেসকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি, সমস্যা দ্রুত মিটে যাবে।’’ বামেদের সঙ্গে আলোচনা অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ভাবে এগিয়েছে এবং নিজেদের পছন্দের আসনের বেশির ভাগই তাঁরা পেয়েছেন বলেও আব্বাস জানিয়েছেন। এই সূত্রেই তাঁর বক্তব্য, ‘‘বাম-কংগ্রেসের কাছে নন্দীগ্রাম আসনটি আমাদের ছাড়ার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এক পিরজাদা ওখানে লড়াই করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। সময় এলেই তাঁর নাম ঘোষণা করা হবে।’’ নন্দীগ্রাম আসনে এ বার প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বামেদের তরফে ওই আসনটিতে সিপিআই প্রার্থী দেয়। এ বার ওই আসন আইএসএফ-কে শেষ পর্যন্ত ছেড়ে দেওয়া হলে নন্দীগ্রামের লড়াই আকর্ষক হয়ে উঠতে পারে।
সিপিএমের সেলিম এ দিন ফের স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এমআইএম বাংলায় কী করবে, এই নিয়ে ভেবে তাঁরা ত্রিপাক্ষিক জোটে ‘জলঘোলা’ চান না। এই প্রেক্ষিতে কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘হাতে আর সময় নেই। জোটের প্রক্রিয়া দ্রুতই মিটে যাবে। বামেদের সঙ্গে প্রথমে আলোচনা করে আইএসএফের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান চূড়ান্ত করে দেওয়া হবে।’’