যোগদান। নিজস্ব চিত্র।
দূরত্ব ছিলই, জল্পনা সত্যি করে দল ছাড়লেন কাটোয়ার প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অমর রাম। মঙ্গলবার আরও দুই বিদায়ী কাউন্সিলর শ্যামল ঠাকুর ও ভাস্কর মণ্ডলকে নিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। কলকাতায় বিজেপির কার্যালয়ে তাঁদের হাতে পতাকা তুলে দেন বিজেপি নেতা তথা এ বারের প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী।
অমরবাবুদের দাবি, দিনের পর দিন অবমাননা ও দুর্নীতি মেনে নিতে না পেরে তৃণমূল ছাড়লেন তাঁরা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার শরিক হতেই এই সিদ্ধান্ত, দাবি তাঁদের। যদিও তৃণমূলের দাবি, বহু দিন আগে থেকেই দলের হয়ে কাজ করছিলেন না ওঁরা। পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল সভাপতি স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘অমর রামকে দল শহর সভাপতি, পুরপ্রধান করেছিল। বাকিরাও অনেক সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে। বেইমানদের নিয়ে কিছু বলতে চাই না। নিজেদের স্বার্থেই ওঁরা বিজেপিতে গিয়েছেন। এ সবে আমরা কোনও গুরুত্ব দিচ্ছি না।’’
২০১৩ সালে কংগ্রেস পরিচালিত কাটোয়া পুরসভার উপপুরপ্রধান থাকাকালীন তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন অমরবাবু। দিন কয়েক পরেই কাটোয়া শহরের স্টেশনবাজারে দলীয় জনসভায় এসে তৎকালীন তৃণমূল নেতা (অধুনা বিজেপি) মুকুল রায় অমর রামকে শহর তৃণমূল সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করেন। ওই পদেই ছিলেন তিনি। ২০১৫ সালে কাটোয়া পুরসভা তৃণমূলের দখলে এলে তিনি পুরপ্রধান হন। তবে রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে দলীয় কাউন্সিলরদের আনা অনাস্থায় পুরপ্রধানের পদ হারান তিনি। পুরপ্রধান হন রবীন্দ্রনাথবাবু। বিভেদের শুরু সেই থেকেই। তৃণমূলের একাংশের দাবি, দলে কার্যত কোনঠাসা হয়ে পড়েছিলেন তিনি। বারবার রবিবাবুর সঙ্গে দ্বন্দ্ব সামনে আসে। একাধিকবার পুরসভার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, কার্যালয় দখলের অভিযোগও করেন তিনি। কয়েক মাস ধরে ‘বেসুর’ আরও প্রকট হয়।সাংবাদিক বৈঠক করে রবিবাবুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানান এই তিন নেতা। দিন কয়েক আগে কাটোয়া শহরের মাধবীতলা ও দমকলের সামনে তৃণমূলের কার্যালয় লেখা সাইনবোর্ড মুছে দেওয়া হয়। এর পরেই প্রবল হয় দল ছাড়ার সম্ভাবনা।
অমরবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূলকে এত বছর ধরে শুধু দিয়েই গেলাম। বিনিময়ে অসম্মান ছাড়া কিছু পাইনি। আমরা যে তৃণমূলে ছিলাম এটা ওঁদের সৌভাগ্য। কাটোয়ায় পদ্মফুল ফোটানোই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। মানুষ তৃণমূলকে জবাব দেওয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন।’’ এ দিন সন্ধ্যায় মাধবীতলার ওই কার্যালয় ফের তৃণমূল দখল করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। যদিও রবিবাবুর দাবি, ওটা দলের কার্যালয় ছিল, এখনও আছে। বিধায়ক বলেন, ‘‘ওঁরা অনেক আগে থেকেই বিজেপির হয়ে কাজ করত। এ দিন ওঁদের প্রকৃত চেহারা সামনে এল। ওঁরা চলে যাওয়ায় ভাল হয়েছে।’’