প্রতীকী ছবি।
গত বিধানসভা নির্বাচনে দুর্গাপুর পূর্ব আসনে পরাজিত হয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার। জেলা তৃণমূল সূত্রে দাবি, হারের ময়না-তদন্তে জানা যায়, দলীয় নেতৃত্বের একাংশের ‘অন্তর্ঘাতে’র কারণেই ওই কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন বাম-কংগ্রেস জোটপ্রার্থী সিটু নেতা সন্তোষ দেবরায়। এ বারও সেই প্রদীপবাবুকেই দুর্গাপুর (পূর্ব) আসনে প্রার্থী করেছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলীয় সূত্রে দাবি করা হয়েছে, ‘সর্ষের মধ্যে থাকা ভূত’দের উপরে নজরদারি চালাচ্ছেন দলের নেতারা, যাতে ২০১৬-র পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
২০১১ বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সমর্থনে এই কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী প্রয়াত নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর জয়ের ব্যবধান ছিল আট হাজারের বেশি। কিন্তু পাঁচ বছরের মধ্যেই চিত্র বদলে যায়। ২০১৬ নির্বাচনে নিখিলবাবুর পরিবর্তে প্রার্থী করা হয় প্রদীপবাবুকে। তখনই নিখিলবাবুকে প্রার্থী হিসাবে চেয়ে পোস্টার পড়েছিল কাঁকসায় বেশ কয়েকটি জায়গায়। ২০১৬ নির্বাচনে জেতা আসনে প্রায় ন’হাজারের বেশি ভোটে পরাজিত হন প্রদীপবাবু। তার পরে হারের ময়না-তদন্তে নামে তৃণমূল।
তৃণমূলের একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, যাঁরা প্রদীপবাবুকে প্রার্থী হিসাবে মানতে চাননি, তাঁরা ভোট-প্রচার থেকে কার্যত সরে দাঁড়িয়েছিলেন। দলীয় ‘অর্ন্ততদন্তে’ তাঁদের চিহ্নিত করা হয়। এ বার তাঁদের উপরে ‘নজরদারি’ চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের এক জেলা নেতা।
তৃণমূল সূত্রে এ-ও জানা গিয়েছে, গত বার প্রদীপবাবু প্রার্থী হওয়ার পরে, তাঁকে দলের দুর্গাপুরের এক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে প্রচারে যেতে বলা হয়েছিল। তাঁকে নিয়েই সর্বত্র প্রচার করেছিলেন প্রদীপবাবু। দলের একাংশের মতে, এর ফলে, দলের অন্য নেতারা প্রচারে সে ভাবে গা লাগাননি।
প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘আগের বার দলের একাংশের থেকে কাঙ্খিত সহযোগিতা পাইনি। আশা করি, এ বার সে পরিস্থিতি হবে না।’’ এ প্রসঙ্গে দলের জেলা সভাপতি অপূর্ব মূখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘সে
সময় কী হয়েছিল জানা নেই। তবে এ বারের নির্বাচনে সকলে এককাট্টা হয়ে লড়াইয়ের ময়দানে
নামছেন, এটা নিশ্চিত।’’
দুর্গাপুরের ডিএসপি টাউনশিপের ১-১০ নম্বর ওয়ার্ড, বিধাননগর, বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা এমএএমসি, এইচএফসিএল এবং বিওজিএল টাউনশিপের ২৩-২৮ নম্বর ওয়ার্ড এবং কাঁকসা ব্লকের গোপালপুর, মলানদিঘি ও আমলাজোড়া পঞ্চায়েত নিয়ে গড়ে উঠেছে দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্র। গত লোকসভা ভোটের নিরিখে দুর্গাপুর (পূর্ব) কেন্দ্রটি তৃণমূলের কাছে বেশ কঠিন বলেই অভিমত জেলার রাজনীতির ওঠাপড়ার নিয়মিত পর্যবেক্ষকদের একাংশের। ওই আসনে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল ৯০,৪৫৫। তৃণমূল পেয়েছিল ৬৩, ৮৬৪ ভোট। আর বাম-কংগ্রেস জোট-প্রার্থীর ঝুলিতে গিয়েছিল মাত্র ৩৩,৮৮৩টি ভোট। তবে এই হিসেবকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল। দলের বক্তব্য, এ বারের প্রেক্ষিত সম্পূর্ণ আলাদা।
প্রার্থী ঘোষণার পরে, প্রদীপবাবু এখনও তাঁর কেন্দ্রে প্রচারে আসেননি। দলীয় সূত্রে খবর, আজ, মঙ্গলবার তিনি দুর্গাপুর আসতে পারেন। অপূর্ববাবু বলেন, ‘‘প্রদীপবাবু সরকারি কাজে যুক্ত। পদত্যাগ করে তিনি আসবেন। সে কারণে সময় লাগছে।’’