প্রার্থী ঘোষণা না হলেও শুরু দেওয়াল লিখন। নিজস্ব চিত্র
তৃণমূল বলছে, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবে। বিজেপি বলছে, উপনির্বাচনের ফল তো অধিকাংশ ক্ষেত্রে শাসক দলের পক্ষেই যায়। এ আর নতুন কি!
খড়্গপুর সদর (শহর) বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল ও বিজেপির মাঝে দাঁড়িয়ে রয়েছে উপনির্বাচনের ফল। গেরুয়া শিবিরের শক্ত ঘাঁটি রেলশহরে বছর দেড়েক আগে জ্বলেছিল ‘আশ্চর্য প্রদীপ’। উপনির্বাচনে জিতেছিলেন তৃণমূলের প্রদীপ সরকার। তৃণমূল দল গঠনের পর প্রথমবার। উপনির্বাচনে দায়িত্ব ছিল শুভেন্দু অধিকারীর। শিবির বদলে তিনি এখন বিজেপিতে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষকে প্রকাশ্যেই খড়্গপুর পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব দিয়েছেন শুভেন্দুকেই। তাই এ বারের বিধানসভা ভোট কাঁথির অধিকারী পরিবারের মেজো ছেলের কাছেও বড় পরীক্ষা। চাচার স্মৃতি আর ব্রিগেডের অক্সিজেন—এই দু’য়ের ভরসায় ভোটের ময়দানে নামবে বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোটও।
রেলশহরে জড়িয়ে রয়েছে অপরাধের ইতিহাস। একসময়ে রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠা রেল মাফিয়াদের ‘টিগারে’ ত্রস্ত ছিল শহরবাসী। ছোটখাটো অপরাধ হচ্ছে এখনও। মাফিয়া গিয়েছে জেলে। তবে বিজেপির অভিযোগ, জেলে বসেই শাসক দলের হয়ে কাজ করছে মাফিয়ারা। তৃণমূলের দাবি, উন্নয়নের সঙ্গে এঁটে উঠতে না পেরেই মানুষকে বিভ্রান্ত করতে মাফিয়ার প্রসঙ্গ আনছে বিজেপি। পুরসভার টেন্ডারে দুর্নীতি, কালো জল সরবরাহের অভিযোগ থেকে সাংসদ তহবিলে উন্নয়নে শহরকে বঞ্চনায় সরব হচ্ছে গেরুয়া শিবির। আবার বিজেপিকে খোঁচা দিতে রেলবস্তির অনুন্নয়নের প্রসঙ্গ টেনে আনছে তৃণমূল। ২০১৯ সালের বিধানসভা উপ-নির্বাচনের ফল ধরে রেখে আরও এগিয়ে যেতে অন্য রণকৌশল সাজাচ্ছে তৃণমূল। নির্বাচনে শহরে নির্ণায়কের ভূমিকা নেওয়া ৩৫শতাংশ তেলুগু ভোটারের ভাষাগত সংখ্যালঘুর স্বীকৃতির সাফল্যে চলছে তৃণমূলের প্রচার। এমনকি শহরে এসে তেলুগুতে বক্তৃতা করে রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা সমর্থনের হাত শক্ত করার আবেদন জানিয়ে প্রচারের সূচনা করেছেন।
রেলশহরে তেলুগু ভোটারদের মধ্যে বরাবর কেন্দ্রের শাসকদলের পক্ষে ভোটদানে ঝোঁক ছিল। ইউপিএ সরকারের আমলে এই ভোটারদের সমর্থনে জিতেছেন শহরের ‘চাচা’ প্রয়াত জ্ঞানসিংহ সোহন পাল। দশবারের বিধায়ক ‘চাচা’র সৌজন্য অবশ্য এখনও প্রাসঙ্গিক। অথচ কেন্দ্রে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠার পরে ২০১৬ সালে সেই ‘চাচা’ পরাজিত হয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কাছে। ২০১১সালে কংগ্রেসের এককভাবে প্রাপ্ত প্রায় ৫৫শতাংশ ভোট ২০১৬সালে কমে বাম-কংগ্রেস জোট মাত্র প্রায় ৩৫ শতাংশে দাঁড়ায়। বিজেপি পায় প্রায় ৩৯ শতাংশ ভোট। তবে চাচা-হীন শহরে গত লোকসভা নির্বাচনে জোটের ভোট আরও প্রায় ২৬শতাংশ কমেছে। প্রায় ৫৭শতাংশ ভোট পেয়ে সাংসদ হয়েছিলেন কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তবে ব্যতিক্রম গত বিধানসভা উপ-নির্বাচন। পুরসভার উন্নয়নকে হাতিয়ার করে বিজেপিতে যাওয়া বাম-কংগ্রেস ভোট টেনে প্রায় ৪৭শতাংশ ভোটে জিতেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী প্রদীপ। বিজেপির ভোট কমে প্রায় ৩৪শতাংশ হয়।
উপনির্বাচনের ফল ধরে রাখার ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল। বিধায়ক তথা পুরপ্রশাসক প্রদীপ বলেন, “শহরে পুরসভার মাধ্যমে রাজ্য সরকার সার্বিক যে উন্নয়ন করেছে তাতে আমাদের জয় নিশ্চিত। বিগত উপনির্বাচনে শহরের বিভিন্ন সমাজ ও ক্লাবগুলি আমাকে এগিয়ে দিয়েছিল। আশা করছি, এবারে উন্নয়নের অঙ্কে আরও দ্বিগুণ সমর্থন পাব। যেখানে কেন্দ্রে বিজেপি সরকার থাকা সত্ত্বেও রেলের শহরে কোনও কাজ করতে পারেননি বিজেপি সাংসদ।” অবশ্য তৃণমূলের এই স্বপ্ন পূরণে পরিপন্থী গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। শহরের বাসিন্দা তৃণমূলের জেলা মুখপাত্র দেবাশিস চৌধুরীর সঙ্গে সুসম্পর্কের অভাব রয়েছে বিধায়ক প্রদীপের। ফলে আশা জাগছে গেরুয়া শিবিরের। তাদের দাবি, উপনির্বাচনের ফল নিয়ে বড়াই করার কিছু নেই। শহরের বাসিন্দা বিজেপির রাজ্য নেতা তথা রাঢ়বঙ্গের মুখপাত্র তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শহরে উন্নয়ন নয়, মাফিয়ারাজ কায়েম করেই তৃণমূল আসন দখল করেছে। তৃণমূলের নিজেদের মধ্যেই গোলাগুলি চলছে। শহরবাসী শান্তি চায়। তাই বিজেপি জিতবে।”
তৃণমূল চায় প্রত্যাবর্তন। বিজেপি চাইছে, পুনরুদ্ধার। কারণ, তৃণমূল ও বিজেপির মাঝে দাঁড়িয়ে রয়েছে উপনির্বাচনের ফল