—প্রতীকী ছবি
পালাবদলের ভোটে তো নয়ই, ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনেও করিমপুরে বিজেপি কোনও ‘ফ্যাক্টর’ ছিল না। এই রঙ্গমঞ্চে তাদের যথার্থ আত্মপ্রকাশ ২০১৯ সালে উপ-নির্বাচনে কলকাতা থেকে আসা প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদারের হাত ধরে। আর এ বার তারাই শাসক দলের প্রধান ‘চ্যালেঞ্জার’।
ভোটের এই প্রস্তুতি পর্বে বিজেপির অন্দরে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, প্রার্থী কে হচ্ছেন? এ বারও বাইরে থেকে কাউকে আনা হবে নাকি ভূমিপুত্রকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে? জয়প্রকাশ কী আবার প্রার্থী হতে পারেন, নাকি সিপিএম থেকে এসে প্রভাব বাড়াতে থাকা প্রাক্তন বিধায়ক সমরেন্দ্রনাথ ঘোষের কপালে শিকে ছিঁড়বে?
বিজেপি সূত্রের খবর, সম্প্রতি দলের তরফে বুথস্তর থেকে শুরু করে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মীদের ফোন করে তাঁদের পছন্দের প্রথম তিনটি নাম জানতে চাওয়া হয়েছিল। তাতে স্থানীয় প্রার্থীর দিকেই বেশি ঝোঁক দেখা গিয়েছে। জয়প্রকাশের মতো ‘বহিরাগত প্রার্থী’র পাল্লা তত ভারী নয়। জয়প্রকাশ নিজেও আর করিমপুর থেকে দাঁড়ানোর ব্যাপারে তত উৎসাহী নন, বরং নদিয়ারই অন্য একটি কেন্দ্রের প্রতি তাঁর আগ্রহ প্রবল বলে দলের একাধিক সূত্রের দাবি। জয়প্রকাশ নিজে অবশ্য বলছেন, “দল যেখানে দাঁড় করাবে, আমি সেখানেই দাঁড়াব। এর বেশি কিছুই বলার নেই।”
যদি ধরে নেওয়া যায় যে এলাকার কাউকে প্রার্থী করতে চলেছে বিজেপি, সে ক্ষেত্রে কে এগিয়ে?
হাওয়ায় কান পাতলে বেশি শোনা যাচ্ছে সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ এবং ২০১৬ সালে তৃতীয় স্থানে শেষ করা বিজেপি প্রার্থী শুভাশিস ভট্টাচার্যের নাম। বাম থেকে রাম হয়ে প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক সমর ঘোষ কতটা কল্কে পাবেন, এ নিয়ে যাঁদের সন্দেহ ছিল তাঁরা আপাতত অনেকটাই ব্যাকফুটে। বিজেপির নিচুতলা বলছে, সমরবাবু অন্য দল থেকে এলেও বেশ মিশে গিয়েছেন। ছোট-বড় সকলকে নিয়েই তিনি চলতে পারেন। তার চেয়েও বড় কথা, করিমপুরে বিজেপির উত্থানের অনেকটাই তো সিপিএমের ভিত ভাঙিয়ে। ফলে কিছু দিন আগেও লাল পার্টি করা কর্মী-সমর্থকদের কাছে সমরবাবু ‘চেনামুখ’, তাঁদের পথও একই রকম। সমরেন্দ্রনাথ বলছেন, “আমি যখন বামপন্থী দলে ছিলাম, আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছি। এখনও তা-ই। আর প্রার্থী হতে কে না চায় বলুন? তবে দলের সিদ্ধান্ত মানতেই হবে।” ১৯৭৭ সালে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের কংগ্রেস সরকারের পতন ঘটিয়ে যে দিন বাম জমানার সূচনা হয়েছিল, সে বার করিমপুরে জিতেছিলেন আর এক সমরেন্দ্র— সিপিএমের সমরেন্দ্রনাথ সান্যাল। সেই থেকে ২০১৬-র আগে পর্যন্ত একটানা ৩৯ বছরে করিমপুরে লাল-সূর্য কখনও অস্ত যায়নি। এই বিধানসভা এলাকাতেই সিপিএমের এককালের রাজ্য সম্পাদক প্রয়াত অনিল বিশ্বাসের বাড়ি ছিল। সেই লাল শুষে এখন গেরুয়ার বাড়বাড়ন্ত। কিন্তু নবান্ন অভিযান আর সদ্য হয়ে যাওয়া ব্রিগেডের সৌজন্যে সিপিএমের মরা গাঙে আপাতত যেন কিছুটা স্রোতের নড়াচড়া দেখা যাচ্ছে। ওইটুকু স্রোতে চিঁড়ে হয়তো তেমন ভিজবে না, কিন্তু বামেরা কিছুটা ভোট ফিরিয়ে নিলে বিজেপির অসুবিধা বাড়বে, সন্দেহ নেই। কতটা তা নির্ভর করবে বাম প্রার্থীর হাতযশের উপর।
জোটের অঙ্কে করিমপুরে সিপিএম প্রার্থীর দাঁড়ানোর কথা। সে ক্ষেত্রে কে এগিয়ে থাকছে দৌড়ে? এই কেন্দ্রে চিরকালই স্থানীয় প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে বামেরা। এ বারেও বেশি শোনা যাচ্ছে স্কুলশিক্ষক সন্দীপক বন্দ্যোপাধ্যায় ও দীর্ঘদিনের কমরেড আসাদুল খানের নাম। সন্দীপক বর্তমানে করিমপুর ১ এরিয়া কমিটির কনভেনর। ১৯৯১ সাল থেকে ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে দলে আসা। ২০১১ সালে দলের সদস্য পদ পান। তিনি বলছেন, “আমি প্রার্থী হতে পারি কি পারি না, তা নিয়ে নানা রকম আলোচনা চলতেই পারে। তবে আমাদের দলে রাজ্য নেতৃত্ব যেটা ঠিক করেন, সেটাই শেষ কথা। এখানে আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই।” জেলা কমিটির সদস্য আসাদুল খানের বক্তব্য হুবহু একই রকম।
২০১৬ সালে করিমপুরে জয়ী মহুয়া মৈত্র তিন বছর পরে কৃষ্ণনগর কেন্দ্রের সাংসদ হয়ে যাওয়ায় উপ-নির্বাচনে তাঁর জায়গায় জিতে আসেন বিমলেন্দু সিংহরায়। তাঁর কি এ বার আর কপাল খুলবে? নাকি টিকিট হাত ফস্কে চলে যাচ্ছে অন্য হাতে? তৃণমূলে কানাঘুষো, সাংসদ তথা জেলা তৃণমূল সভানেত্রী মহুয়ার ঘনিষ্ঠ আজিজুর রাহমান মল্লিক ওরফে রাজু নাকি এ বার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। তা বাদে দলের জন্মলগ্নের কর্মী, বর্তমানে করিমপুর ১ ব্লকের সভাপতি তরুণ সাহার নামও আসছে কোনও-কোনও মহলের জল্পনায়। বিমলেন্দু নিজেই বলছেন, “গত কয়েক দিন ধরে প্রবল মানসিক চাপে আছি। যেটুকু সময় পেয়েছিলাম, যথাসাধ্য কাজ করেছি। এখন প্রার্থী কে হবেন, সেটা নেত্রীর বিষয়।” আর আজিজুর বলছেন, “প্রার্থী হওয়ার স্বপ্ন শুধু আমি কেন, সকলেই দেখে। তবে দল যাঁকে যোগ্য মনে করবে, তাঁকেই
মানতে হবে।”