সদাইপুরের চিনপাইয়ে নিজস্ব চিত্র
উন্নয়নের প্রশ্নে তো বটেই, ‘তোলাবাজি’, মহিলাদের উপরে ‘আক্রমণ’ থেকে ‘লাশের রাজনীতি’—বীরভূমে ভোট প্রচারে এসে এমন নানা প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর সরকারকে আক্রমণ করলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রসাদ নড্ডা।
সোমবার প্রথমে সাঁইথিয়ায় রোড-শো করেন নড্ডা। সেখানে ভালই ভিড় হয়েছিল। পরে সিউড়ি ও দুবরাজপুরের দুই দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে সদাইপুরের চিনপাইয়ে নড্ডা একটি জনসভা করেন। এ দিন সভার ‘সম্মানজনক’ জমায়েত নড্ডাকে হতাশ করেনি। এর আগে রাজ্যের একাধিক জায়গায় ভিড় না-হওয়ায় নড্ডাকে সভা বাতিল করতে হয়েছে বলে দাবি করেছে তৃণমূল। এ দিন অবশ্য ভিড় খুব খারাপ ছিল না। পড়ন্ত বিকেলের সভায় উপস্থিত জনতার উদ্দেশে নাড্ডার আহ্বান, ‘‘বাংলার সংস্কৃতি বাঁচাতে, বাংলা ভাষা বাচাতে, তুষ্টিকরণ সমাপ্ত করতে, মহিলাদের সম্মানরক্ষায় এবং তোলাবাজি, স্বৈরতন্ত্র্য ও গুন্ডাগিরি শেষ করতে হলে তৃণমূলকে বিদায় দিয়ে পদ্ম ফোটানোর প্রয়োজন।’’
সোমবারই বীরভূমের পুলিশ সুপার-কে বদলি করেছে নির্বাচন কমিশন। এ দিন নড্ডা সে প্রসঙ্গ তুলেছেন। বীরভূমে প্রার্থীদের উপরে আক্রমণের প্রসঙ্গ তুলেও রাজ্যে আইনের শাসন ‘ভেঙে পড়া’র উদাহরণও টেনেছেন নড্ডা। বলেছেন, ‘‘এই জেলায় আমাদের ১১ জন প্রার্থীর মধ্যে এক মহিলা-সহ পাঁচ জনের উপরে হামলা হয়েছে। এ কেমন শাসন? সোমবার বীরভূমে এসপি বদল হয়েছেন। আমাদের ক্ষমতায় আনুন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে দেখাব।’’
সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে কথায় কথায় নড্ডা বলে উঠেছেন, ‘‘দিদি এত রাগ কেন?’’ তাঁর কথায়, ‘‘বাংলা ভাষা কত মিষ্টি, কত সুন্দর। কিন্তু, আমি বুঝতে পারছি না মমতাজি এই ভাষায় তেতো কেন গুলে দেন। ওঁর এত রাগ কেন?’’ বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতির সংযোজন, ‘‘মোদীজি এত আদরের সঙ্গে ওঁকে দিদি সম্বোধন করেন। আর দিদি কী কী সব কথা মোদীজিকে বলছেন, অমিত শাহকে বলছেন!’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এটা কি বালার সংস্কৃতি? তাহলে কে বহিরাগত, আমরা না তিনি? বরং আমরাই বাংলার আপনজন। কারণ বাংলার ভাষা, সংস্কৃতি রক্ষা করছি।’’
বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে গরহাজির থাকা নিয়েও মমতাকে তীব্র কটাক্ষ করেন জে পি নড্ডা। বলেন, ‘‘দিদির এত অহঙ্কার কেন, বুঝতে পারি না। প্রধানমন্ত্রী যখন মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠক ডাকেন, সেখানে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর যাওয়া উচিত কিনা, আপনারাই বলুন। বাংলার অধিকারের কথা বলা উচিত নয় কি? কিন্তু, দিদির অহঙ্কার প্রধামন্ত্রীর বৈঠকে যেতে বাধা দেয়।’’
‘বাংলা তার মেয়েকেই চায়’— শাসকদলের এই স্লোগানকে হাতিয়ার করে পাল্টা নারী সুরক্ষা নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীর দিকে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন নড্ডা। বলেছেন, ‘দিদি’ যে বাংলার মেয়ে, তা তাঁরা অস্বীকার করেন না। এর পরেই তাঁর অভিযোগ, ‘‘শোভা মজুমদারও (নিমতার অশীতিপর বৃদ্ধা) বাংলার মা ছিলেন। ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন। কিন্তু মমতাজি একটা শব্দও উচ্চারণ করেননি।’’ তাঁর দাবি, নারী পাচার সবচেয়ে বেশি হয় বাংলায়। ধর্ষণও। এখানে মহিলারা সবচেয়ে বেশি গার্হস্থ্য হিংসা শিকার। অভিযোগ করতে না পারার সংখ্যাও বাংলায় বেশি। এর পরেই নড্ডার আহ্বান, ‘‘২ তারিখে পদ্মফুল ফুটিয়ে ওঁকে বিশ্রামে পাঠান। আইনের সাহায্যে মহিলাদের সুরক্ষার দায়িত্ব আমাদের।’’