n বর্ধমানে এক বৃদ্ধের সঙ্গে কথা বলছেন প্রশাসনের এক কর্তা। নিজস্ব চিত্র
অনেক ভোটগ্রহণ কেন্দ্র বা বুথেই শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য ‘র্যাম্প’ থাকে। তার পরেও অনেকে ভোট-প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকেন। আবার বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়া ‘অমানবিক’ বলে মনে করে নির্বাচন কমিশন। করোনা-আবহে বয়স্কদের লাইনে দাঁড়ানো আরও দুশ্চিন্তার। কিন্তু এ সবের মাঝেও তাঁরা যাতে ভোট-প্রক্রিয়া থেকে দূরে না-থাকেন, তা নিশ্চিত করতে চাইছে নির্বাচন কমিশন। সে কারণে মনোনয়ন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরেই অশীতিপর ভোটারদের বাড়ি গিয়ে আলাদা করে ভোট নেওয়ার ব্যবস্থা করবে প্রশাসন। ইতিমধ্যে শারীরিক প্রতিবন্ধী ও অশীতিপর ব্যক্তিদের বাড়ি গিয়ে বুথ লেভেল অফিসারেরা (বিএলও) নির্দিষ্ট ফর্ম (১২ ডি) দিয়ে এসেছেন। ভোটারেরা বাড়ি থেকে ভোট দিতে সম্মত কি না, তা জানাবেন সেখানে। সেগুলি ঠিকমতো পৌঁছেছে কি না, খতিয়ে দেখেছেন জেলার ঊর্ধ্বতন আধিকারিকেরা।
জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) মহম্মদ এনাউর রহমান বলেন, “ফর্মগুলি ঠিকমতো বিলি করা হয়েছে কি না, খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। আমি ও আমার সিনিয়র অফিসারেরা ৮০ বছরের ঊর্ধ্বের মানুষ ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ভোটারদের বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিয়েছি। ফর্ম পূরণ করার পরে, সেগুলি সংগ্রহ করা শুরু হয়েছে।’’ কমিশন জানিয়েছে, মনোনয়ন জমা পড়া থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত ১২ ডি ফর্ম জমা নেওয়া যাবে। যে সব ভোটারদের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ৪০ শতাংশের বেশি, তাঁরাই বাড়িতে বসে এই সুবিধা পাবেন। তবে প্রতিবন্ধকতা সংক্রান্ত শংসাপত্র দেখাতে হবে তাঁদের। ফর্মে সম্মতি জানানোর পরে, তাঁদের জন্য আলাদা কাগজের ব্যালট তৈরি হবে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় যে দিন ভোট হবে, তার পাঁচ দিন আগে ভোট-প্রক্রিয়া শেষ করার জন্য ওই সব ভোটারদের বাড়ি যাবেন কমিশনের কর্মী-আধিকারিকেরা।
কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার ১৬টি বিধানসভায় মোট ভোটার কমবেশি সাড়ে ৪০ লক্ষ। তার মধ্যে অশীতিপর ভোটার ৫০ হাজারের বেশি। প্রতিবন্ধী রয়েছেন ২০ হাজারের মতো। কমিশনের কর্তারা জানিয়েছেন, পুলিশ-সহ চার জন পোলিং অফিসার ওই ভোটারদের বাড়িতে যাবেন। তাঁদের জন্য পৃথক নির্বাচনী নির্ঘণ্ট তৈরি করে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের প্রার্থীদের এজেন্টদের জানানো হবে। কমিশন চায়, বাড়িতে গিয়ে ভোটগ্রহণের নির্দিষ্ট দিনে প্রার্থীদের এজেন্টরাও যেন উপস্থিত থাকেন। সব রকম গোপনীয়তা বজায় রেখেই ভোট নেওয়া হবে। ব্যালট খামে ভরে সিল করে কমিশনের প্রতিনিধিদের হাতে তুলে দেবেন ভোটারই। ভোটকর্মীরা তাঁদের সামনে ফের খাম সিল করবেন। ওই সব খাম নির্দিষ্ট জেলার ট্রেজ়ারিতে রাখা হবে। গণনার দিন প্রথমে গোনা হবে ওই ব্যালট। তবে যাঁরা বাড়িতে ভোট দিতে রাজি নন, তাঁরা আর সবার সঙ্গে বুথে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন।
কমিশনের কর্তাদের দাবি, বিহারেও একই মডেলে ভোট হয়েছিল। করোনা-পরিস্থিতিতে এই প্রক্রিয়া চালু হলেও পরবর্তীতেও তা বজায় রাখার দাবি উঠেছে। কমিশনের দাবি, বয়স, শারীরিক সমস্যার জেরে অশীতিপর বা প্রতিবন্ধীরা বুথে যেতে চান না। রাজনৈতিক দলের সদস্যেরা ওই সব ভোটারের কাউকে কাউকে বিশেষ ব্যবস্থা করে বুথে নিয়ে যান। কমিশনের পর্যবেক্ষণ, সে ক্ষেত্রে প্রভাবিত হয়ে সাহায্যকারীর দলকেই ভোট দেন বেশির ভাগ মানুষ।। বাড়িতে বসে ভোট দিতে পারলে, সে আশঙ্কা থাকবে না। সর্বোপরি সব নাগরিকের ভোট দেওয়া নিশ্চিত করতে চাইছে কমিশন।