বহরমপুর পুর এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
বাংলার প্রায় প্রতিটি ভোটেই কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহার নিয়ে টানাপড়েন চলে। এ বারের ভোটে সেই আধাসেনা মোতায়েনের ক্ষেত্রে বাড়তি ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে পর্যবেক্ষকদের। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার (সিইও)-কে চিঠি লিখে কমিশন জানিয়েছে, রাজ্য স্তরে বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হবে বিশেষ সাধারণ এবং পুলিশ পর্যবেক্ষকের তত্ত্বাবধানে। আর জেলা স্তরে সেই যৌথ দায়িত্ব সাধারণ এবং পুলিশ পর্যবেক্ষকের।
কমিশন চিঠিতে লিখেছে, সিইও, রাজ্য পুলিশের নোডাল অফিসার এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর কো-অর্ডিনেটরকে নিয়ে তৈরি কমিটি একত্রে নিরাপত্তা এবং রাজ্য ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর দায়িত্ব ভাগের রূপরেখা তৈরি করবে। বিশেষ পর্যবেক্ষক ও বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক যৌথ ভাবে অনুমোদন দিলে তা কার্যকর হবে। তাঁরা কোনও সংশোধনের প্রস্তাব দিলে সেই অনুযায়ী রূপরেখা পরিমার্জিত হবে। জেলা স্তরে জেলাশাসক (ডিস্ট্রিক্ট ইলেকশন অফিসার) এবং পুলিশ সুপার যৌথ ভাবে আধাসেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা তৈরি করার পরে সেটি দেখাবেন সংশ্লিষ্ট সাধারণ এবং পুলিশ পর্যবেক্ষককে। তাঁরা ছাড়পত্র দিলে তবেই তা বলবৎ হবে। তাঁরা সংশোধনের প্রস্তাব দিলে সেই অনুযায়ী তা পরিমার্জিত হবে।
পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার-সহ কমিশন-কর্তাদের বুধবারের বৈঠকে বাহিনী ব্যবহারের এই ব্যবস্থার কথা জানানো হয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, নাগরিকেরা যাতে পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি বুঝতে পারেন, সেই ভাবে তাঁদের দৃশ্যমান থাকতে হবে। যোগাযোগও রাখতে হবে ভোটারদের সঙ্গে। গাফিলতি হলে কমিশন দ্রুত এবং কঠোর পদক্ষেপ করবে। প্রবীণদের জন্য ভোটকেন্দ্রে যথাযথ ব্যবস্থা রয়েছে কি না, তা দেখার দায়িত্বও পর্যবেক্ষকদের।
সূত্রের খবর, ব্যয় পর্যবেক্ষকদের মতোই বেশি সংখ্যায় সাধারণ এবং পুলিশ পর্যবেক্ষক রাজ্যে আসছেন। কমিশন-কর্তাদের অনেকেই মনে করছেন, সাধারণ, পুলিশ ও ব্যয়— তিন স্তর মিলিয়ে কমবেশি ৫০০ পর্যবেক্ষক আসতে পারেন বঙ্গে। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে এক জন পর্যবেক্ষক নজরদারির দায়িত্ব পাবেন। কোথাও ছোট দু’তিনটি বিধানসভা কেন্দ্র একত্র করেও এক জনকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। তবে গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল কেন্দ্র-পিছু এক জন পর্যবেক্ষকই দায়িত্ব পাবেন। প্রতিটি কেন্দ্রে তিন জন পুলিশ পর্যবেক্ষক দেওয়ার বিষয়ে কমিশনে ভাবনাচিন্তা চলছে।
সূচি চূড়ান্ত হয়নি। তবে কর্তাদের অনেকের ধারণা, দু’-এক দিনের মধ্যেই বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে এবং মৃণালকান্তি দাস রাজ্যে আসতে পারেন। উত্তর এবং দক্ষিণবঙ্গের পরিস্থিতিতে পৃথক ভাবে নজর দিতে পারেন তাঁরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানানো হয়েছে, উত্তরবঙ্গ সম্পর্কে মৃণালকান্তি দাসের আগে থেকে অনেকটাই ধারণা রয়েছে। ফলে সেখানকার পরিস্থিতি দ্রুত বুঝে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে তাঁর অসুবিধা হবে না। গত লোকসভা ভোটে বিবেক দুবে ছিলেন রাজ্যের বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক। কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে রাজ্য পুলিশের সমন্বয় বাড়িয়ে ভোট-হিংসা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। ফলে এখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি যথেষ্ট ওয়াকিবহাল।