প্রতীকী ছবি
চড়া রোদে মাঠের বুক চিরে চিকচিক করে বইছে মহানন্দা। বৈশাখের শুরুতেই স্পষ্ট নদীর শীর্ণ রূপ। ‘শ্রী’ হারালেও কমেনি নদী স্রোত। ‘ধর্মের’ চোরা স্রোতও বইছে মহানন্দার দু’পাড়ের দুই বিধানসভা ইংরেজবাজার ও মালদহে। দুই কেন্দ্র ঘিরেই বিঘের পর বিঘে আম বাগান। রয়েছে দু’টি পুরসভাও। ঢাকে কাঠি পড়তেই উন্নয়নের নিরিখে ভোটের ফল পেকেছে মালদহ ও ইংরেজবাজারে। তবে ছবিটা বদলেছে এবারের লোকসভায়। সেই ফলকেই হাতিয়ার করে ফল পাকার আশায় গেরুয়া শিবির। ভোট ময়দানে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়তে নারাজ তৃণমূল, সংযুক্ত মোর্চাও।
ইতিহাস গবেষকদের দাবি, দেড়শো বছর আগে ব্রিটিশ আমলে মহানন্দা নদীর এক পাড়ে ইংরেজবাজার ও অন্য পাড়ে গড়ে ওঠে পুরাতন মালদহ পুরসভা। বছর দু’য়েক আগে সার্ধশতবর্ষ পালন হয় দুই পুরসভাতেই। দুই শহরের আনাচে-কানাচে চোখে পড়বে ব্রিটিশদের স্মৃতি বিজরিত বহু নির্দশন। শহর ছাড়তেই আম বাগান। চোখে আরাম দেওয়া সবুজ ঘেরা সেই বাগানগুলিও যেন বহন করছে ইংরেজবাজার ও মালদহের ইতিহাস।
একসময় দুই বিধানসভা দখল নিয়ে লড়াই হত বাম-কংগ্রেসের। কখনও কংগ্রেস, কখনও বামেরা দখল নিয়েছে দুই কেন্দ্র। ২০১১ সালেও বাম ও কংগ্রেসের লড়াই দেখেছে ইংরেজবাজার ও মালদহবাসী। ছবিটা বদলে যায় ২০১৬ সালে। মালদহের প্রধান দুই দল বাম ও কংগ্রেস একে অপরের হাত ধরে লড়াই করে রুখে দেয় তৃণমূলকে। হেরে যেতে হয় রাজ্যের তৎকালীন মন্ত্রী তথা হেভিওয়েট নেতা কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরীকেও।
এবার জোটের সামনে তৃণমূলের পাশাপাশি লড়াইয়ে বিজেপিও। লোকসভা ভোটে এই দুই বিধানসভায় বিজেপির উত্থান চিন্তা বাড়িয়েছে। কারণ, ইংরেজবাজারে ৯৪ হাজার এবং মালদহে ৫৪ হাজার ভোটে ‘লিড’ রয়েছে বিজেপির। বিশেষ করে দুই শহরাঞ্চলেই বিজেপির কাছে ধরাশায়ী হয় বিরোধীরা।
বিরোধীদের দাবি, লোকসভা ভোটের বিজেপি ঝড় অনেকটাই ফিকে। মালদহের সংযুক্ত মোর্চা প্রার্থী ভূপেন্দ্র নাথ হালদার বলেন, ‘‘২০১৪ সালে লোকসভা ভোটেও মালদহে এগিয়ে ছিল বিজেপি। ২০১৬ সালে বড় ব্যবধানে আমরা জিতেছি। এ বারও সেই পথেই এগোচ্ছে।’’ যদিও ভোট বিশেষজ্ঞদের দাবি, মালদহের মতো জেলায় ভোটের আকাশে ভাসছে মেরুকরণ। সেই হাওয়া কোন পালে যায় তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।
দুই আসনেই নিশ্চিত জয় ধরে প্রচারে ঝাঁপিয়েছে গেরুয়া শিবির। রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নিয়ম করে প্রচারে আসছেন। প্রধানমন্ত্রীও সভা করছেন মালদহে। এরই মধ্যে, মালদহের বিজেপি প্রার্থী গোপাল সাহা গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। বিজেপির দাবি, প্রার্থী নিয়ে মালদহ বিধানসভায় ক্ষোভ-বিক্ষোভ ছিল ঠিকই। কিন্তু প্রার্থী আক্রান্ত হতেই সব থিতিয়ে গিয়েছে। গোষ্ঠী কাঁটা সরে সহানুভূতির ভোটের আশায় জল মাপছে বিজেপি।
ধর্মের চোরাস্রোতও বইছে দুই কেন্দ্রে। একের পর এক ভোটে বামেদের প্রার্থী ছিল না দুই কেন্দ্রেই। ফলে, বামেদের ভোট গিয়েছে রামে। সেই ভোট ফেরানোই চ্যালেঞ্জ নেতৃত্বের। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, ‘‘কার ভোট কোথায় গিয়েছে ভোটের ফলেই স্পষ্ট হবে।’’
উন্নয়নই হাতিয়ার তৃণমূলের। ‘স্বপ্নের’ ইংরেজবাজার গড়ার ডাক দিয়ে দুয়ারে-দুয়ারে যাচ্ছেন ইংরেজবাজারের তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী। বলেন, ‘‘ধর্ম নয়, উন্নয়নকেই মানুষ বেছে নেন। সেই নিরিখেই সবসময় ভোট হয় মালদহে।’’
রাজনৈতিক দলগুলি যখন ভোট নিয়ে ব্যস্ত, তখন ব্যস্ততা আম বাগানগুলিতেও। তবে আম পাকার আগেই পাকবে ভোটের ফল। নদী পাড়ের দুই কেন্দ্রে শেষ হাসি হাসবে কারা, তা নিয়েই চর্চা আম বাগান থেকে চায়ের ঠেকে।