চলছে ধস্তাধস্তি। বুধবার ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
পোস্টাল ব্যালটে ভোটদানকে ঘিরে বিজেপি-তৃণমূল অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগে দিনভর সরগরম রইল বোলপুর শহর।
বুধবার বোলপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও বাঁধগোড়া কালীকৃষ্ণ বিদ্যালয়ে ছিল ভোটকর্মীদের পোস্টাল ব্যালটে ভোট। বোলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোট প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর থেকেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে ব্যালটে ছাপ্পা করানোর অভিযোগ তুলে সরব হয় বিজেপি। তাদের অভিযোগ, ব্যালটবক্সে তালা লাগানোর আগেই সেখানে ভোট প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়, ভোটদান কক্ষের চারপাশে সন্দেহজনক ভাবে তিন চার জনকে ঘুরে বেড়াতেও দেখা যায়। এমনকি, কেন্দ্রীয় বাহিনীর অনুপস্থিতিতে রাজ্যের পুলিশ দিয়ে ভোট করানো হচ্ছিল বলে অভিযোগ তোলেন বিজেপি কর্মীরা।
এর পরেই বোলপুর উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে বিক্ষোভ দেখাযতে শুরু করেন স্থানীয় বিজেপি কর্মী- সমর্থকেরা। যার জেরে কিছুক্ষণ ভোট প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয় ওই স্কুলে। খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছে যান বোলপুরের বিজেপি প্রার্থী অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি দীর্ঘক্ষণ ভোটার থেকে শুরু করে ভোটের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁর অভিযোগ, “পোস্টাল ব্যালটের ভোটে এখানে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা তৈরি করা হয়েছে, কোনও নিয়ম মানা হয়নি।’’ বোলপুরের তৃণমূল প্রার্থী চন্দ্রনাথ সিংহকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘‘চন্দ্রনাথবাবু এত দুর্বল হবেন না যে, শিক্ষকদের ভোটেও ছাপ্পা মারতে হচ্ছে! আমরা এই ভোট বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।” একই সঙ্গে পুরো ঘটনা নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে বলেও জানান অনির্বাণবাবু। যদিও অভিযোগ মানতে চায়নি তৃণমূল।
বোলপুর বাঁধগোড়া কালীকৃষ্ণ উচ্চ বিদ্যালয়েও এ দিন পোস্টাল ব্যালটে ভোটকর্মীদের ভোট চলছিল। অভিযোগ, সেখানে তৃণমূল কর্মীরা ভোটকর্মীদের প্রভাবিত করছিলেন। ওই স্কুল পরিদর্শনেও যান অনির্বাণবাবু। বিজেপি কর্মীদের অভিযোগ, ভোটকর্মীরা ভোট দিচ্ছেন, অথচ তাঁদেরই বলে দেওয়া হচ্ছে কী ভাবে ভোট দেবেন! তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা তাদের কর্মীদের মারধর করেন। তৃণমূলের বেশ কয়েক জন আহত হন। এই বিষয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল পরে বলেন, “এখানকার বিজেপি প্রার্থী স্কুলে গিয়ে ঝামেলা করে এসেছেন, তাঁর নিরাপত্তায় থাকা সিআরপিএফ জওয়ানদের দিয়ে লাঠিচার্জ করিয়েছেন। তাঁর ওই স্কুলে কেন যাওয়ার প্রয়োজন হল, আমরা সেটাই বুঝতে পারছি না।’’ অনুব্রতের দাবি, এ দিন যা কিছু ঘটনা ঘটেছে, তা বিজেপি প্রার্থীর উস্কানিতেই ঘটেছে। সবাই ওঁকে বলতে শুনেছেন, ‘ধর ধর, মার মার’! এর বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অনুব্রতের এই অভিযোগ প্রসঙ্গে এ দিন সন্ধ্যা সাংবাদিক বৈঠক করে অনির্বাণবাবু দাবি করেন, ওই দুই স্কুলে তৃণমূল আশ্রিত যে সমস্ত দুষ্কৃতী ঢুকে ছিল, তিনি তাদের তাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন শুধুমাত্র। লাঠিচার্জ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘এই অভিযোগের পক্ষে কি কোনও ফুটেজ দেখাতে পারবেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি?’’ একই সঙ্গে অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে মানহানি মামলার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী।