সিরিয়ালের দুই ‘কাদম্বিনী’(ছবির দু’পাশে)। কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়(মাঝে)।
দু’বছর আগেও জিকে (সাধারণ জ্ঞান) চর্চা আর বাংলার ইতিহাস চর্চার বাইরে খুব একটা কেউ কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের কথা জানতেন না। কাদম্বিনী আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্রে পাশ করা প্রথম বাঙালি মেয়ে, সমাজজীবনে নিন্দিত হয়েছেন সারা জীবন। এ বার তিনি বাংলার ভোটে প্রতিশ্রুতির যুদ্ধে জুড়ে গেলেন। সৌজন্য বিজেপি-র নির্বাচনী ইস্তাহার।
বাংলার নির্বচনী ইস্তাহারে ‘কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় স্বাস্থ্য পরিকাঠামো তহবিল’-এর কথা বলেছে বিজেপি। ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। জিতলে প্রতিটি জেলায় মেডিক্যাল কলেজ ও জেলা হাসপাতাল তৈরির প্রতিশ্রুতি। প্রতিটি ব্লকে স্বাস্থ্য কেন্দ্র। প্রত্যেক গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র। গোটা প্রকল্পের শিরোনামে থেকে যাবেন কাদম্বিনী।
ভোটের ইস্তাহারই কি বাঙালিকে এই বিস্মৃতপ্রায় অগ্রণী মহিলা যোদ্ধার কথা মনে করিয়ে দিল? সেটা কিন্তু বলা যাবে না।
এই গণপরিচয়টা হয়েছে গত বছরেই। টিভি সিরিয়ালে বর্তমান বাঙালির সংসারে সংসারে ঠিক সেই বছরেই কাদম্বিনী পরিচিত হলেন, যে বছর গোটা বিশ্বের চিকিৎসাবিজ্ঞান এক অভূতপূর্ব প্রতিরোধের মুখে। করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের বছর। ২০২০। বাংলা টেলিভিশন ধারাবাহিকে কাকতালীয় ভাবেই শুরু হল কাদম্বিনীর জীবনযুদ্ধের কথা। এবং একটা নয়, একসঙ্গে দুটো সিরিয়াল দুটো টিভি চ্যানেলে। প্রায় একসঙ্গে শুরু। একটার নাম ‘কাদম্বিনী’। অন্যটা ‘প্রথমা কাদম্বিনী’। যার একটা শেষ হয়ে গিয়েছে আগেই। অন্যটা শেষ হল কিছু দিন আগে।
ভোটের প্রার্থিতালিকায় সিরিয়াল পাড়ার ছোঁয়া তো আগেই লেগেছে। কাদম্বিনীকে এনে এ বার কি প্রতিশ্রুতির নির্বাচনী রাজনীতিতেও ভূমিকা রাখল বাংলা টেলিউড? বিজেপি এটা মানতে নারাজ। দলের সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুর কথায়, ‘‘ধারাবাহিক দেখে নয়। বিজেপি-র স্মরণে, মননে সব সময়ে মণীষীরা থাকেন।’’
আর কী বলছে টেলিপাড়া? ‘কাদম্বিনী‘র অভিনেত্রী ঊষসী রায় বললেন, ‘‘যে দলই ঘোষণা করুক না কেন, কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়কে যে অবশেষে সামনে আনা হচ্ছে, তা জেনেই ভাল লাগছে।’’ এই সূত্রে যে তাঁর নামও উঠছে, তাতে নিজেকে ধন্য বলে মনে করছেন অভিনেত্রী।
খুশি আর একটি ধারাবাহিক ‘প্রথমা কাদম্বিনী’-র পরিচালক স্বর্ণেন্দু সমাদ্দারও। তিনি বলেন, ‘‘আমরা অনেকে মিলে একজোট হয়ে এই ধারাবাহিকের কাজ করেছি। আমাদের কাজের যদি কোনও অবদানও থাকে কাদম্বিনী দেবীর নামে প্রকল্প ঘোষিত হওয়ার পিছনে, তবে তা আনন্দের।’’
বাঙালি নারীর অধিকারের লড়াইয়ে কাদম্বিনীর ভূমিকা নানা ভাবে আলোচিত। নিজে চন্দ্রমুখী বসুর সঙ্গে প্রথম বাঙালি মেয়ে স্নাতক, বেথুন কলেজ থেকে। অনেক সামাজিক বাধা ডিঙিয়ে শুধু ডাক্তারি পাশ করেননি, ডাক্তারিও করেছেন। মহিলাদের উজ্জীবিত করেছেন স্বাবলম্বী জীবনের জন্য। পরিবারও সামলেছেন এর মধ্যে। ব্রাহ্ম পরিবারের মেয়ে ছিলেন। তথাকথিত হিন্দু ধর্মের সঙ্গে তাঁর বিরোধ বেধেছে। উগ্র হিন্দুরা তাঁকে ‘স্বৈরিনী’ বলে কার্টুন পর্যন্ত ছেপেছে। এমন এক মেয়ের নাম নীলবাড়ির লড়াই-এর এক নির্বাচনী ইস্তাহারে। দুই সিরিয়ালের স্পর্শ দেখছেন অনেকে।