প্রতীকী ছবি।
বার বার আশ্বস্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। তা সত্ত্বেও ভিভিপ্যাট বা ভোটার ভেরিফায়েবল পেপার অডিট ট্রায়াল যন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলছে মহল। এই অবস্থায় ওই যন্ত্রের নিরপেক্ষতা প্রমাণের জন্য ভোট শুরু হওয়ার আগেই ‘মক পোল’ বা মহড়া ভোটের সময় ৩০ মিনিট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল কমিশন। স্বচ্ছতা প্রমাণের স্বার্থেই এটা করা হচ্ছে বলে কমিশনের দাবি।
আগেকার বিভিন্ন নির্বাচনে ভোট শুরুর ৬০ মিনিট আগে মহড়া ভোট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীদের সামনে ভিভিপ্যাটের কার্যকারিতার প্রমাণ দিতে হত প্রিসাইডিং অফিসারদের। এ বার সেই সময় বাড়িয়ে ৯০ মিনিট করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী সকাল ৬টার পরিবর্তে এ বার ভোর সাড়ে ৫টায় মহড়া ভোট শুরু করে দেওয়ার জন্য প্রিসাইডিং অফিসারদের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। সংশ্লিষ্ট সূত্রের ব্যাখ্যা, ভোটার এবং রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের মন থেকে ভিভিপ্যাট নিয়ে যাবতীয় সন্দেহ-আশঙ্কা দূর করতে ভোট শুরুর আগেই প্রিসাইডিং অফিসারদের কাজে কিছুটা বদল আনা হল।
নিয়মবিধি অনুযায়ী সব দলের প্রতিনিধিদের সামনে মহড়া ভোটে ন্যূনতম ৫০টি ভোট দিতেই হবে ভোটকর্মীদের। তাতে ‘নান অব দ্য অ্যাবাভ’ (তালিকাভুক্ত কাউকেই ভোট নয়) বা নোটা-সহ সব প্রার্থীর খাতায় অন্তত তিনটি করে ভোট পড়তে হবে। এই প্রক্রিয়া শুরুর সময় রাজনৈতিক দলের পোলিং এজেন্টদের কেউ না-এসে পৌঁছলে অথবা এক জন এসে পৌঁছলে ১৫ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন প্রিসাইডিং অফিসার। তাতেও কাজ না-হলে প্রক্রিয়াটি শুরু হয়ে যাবে। মহড়া ভোট চলাকালীন কোনও পোলিং এজেন্ট পৌঁছে গেলে তিনি সেই প্রক্রিয়ায় হাজির থাকতে পারবেন। এক বার ভিভিপ্যাট চালু হলে যন্ত্রের প্রযুক্তিগত পরীক্ষার রিপোর্ট হিসেবে সাতটি স্লিপ জমা হবে। তার সঙ্গে মহড়া ভোটের ন্যূনতম ৫০টি ভোটের স্লিপ জমবে ওই যন্ত্রে। প্রত্যেকের সামনে প্রিসাইডিং অফিসারকে প্রমাণ দিতে হবে, মহড়া ভোটের স্লিপ-সংখ্যা এবং ভিভিপ্যাটের কন্ট্রোল ইউনিটের ফল মিলে গিয়েছে। পোলিং এজেন্টরা সন্তুষ্ট হলে তাঁরা এবং প্রিসাইডিং অফিসার একটি সম্মতিপত্রে সই করবেন। মহড়া ভোটের প্রতিটি স্লিপের উল্টো দিকে কমিশনের নির্দিষ্ট স্ট্যাম্প দেওয়া হবে। সেগুলি একটি কালো খামে ভরে সিল করবেন প্রিসাইডিং অফিসার। খামটি কমিশনের দেওয়া একটি প্লাস্টিক বাক্সে ভরে পুনরায় সিল করা হবে। তাতেও প্রত্যেকের সই থাকবে। তার পরে প্রিসাইডিং অফিসার কন্ট্রোল ইউনিট এবং মহড়া ভোটের ফল মুছে প্রত্যেককে দেখিয়ে দেবেন যে, মেশিনে আর কোনও ভোট নথিবদ্ধ নেই। যন্ত্রে ফলাফল দেখার সুইচ (রেজাল্ট সেকশন) এবং ‘ক্লিয়ার বাটন’-এর এলাকাটিও সিল করে সংশ্লিষ্ট সকলের সই নেওয়ার পরে মহড়া ঙোটের প্রক্রিয়া শেষ হবে। তার পরে শুরু হবে ভোটগ্রহণের মূল পর্ব। ভোটগ্রহণের শেষে প্রিসাইডিং অফিসার যন্ত্রের উপর থাকা ‘ক্লোজ়’ বোতামটি টিপবেন। তবেই ভোটগ্রহণ পর্ব সরকারি ভাবে শেষ হবে।
এক ভোট-অফিসার জানান, আগের বিভিন্ন নির্বাচনেও মহড়া ভোটের সময় ন্যূনতম ৫০টি ভোট দেওয়ার কথা বলত কমিশন। কখনও কখনও প্রয়োজন হলে উপস্থিত সকলের মত নিয়ে নিয়ম কিছুটা শিথিল করা হত। ‘‘কিন্তু এ বার কমিশনের স্পষ্ট নির্দেশ, এই প্রক্রিয়ায় কোনও ধরনের শিথিলতা রাখা চলবে সব রাজনৈতিক দলের পোলিং এজেন্টকে ভিভিপ্যাটের কার্যকারিতা সম্পর্কে সন্তুষ্ট করে ভোট শুরু করতে হবে,” বলেন ওই অফিসার।
গণনার সময় কোনও অভিযোগ উঠলে অথবা অন্য কোনও দরকারে কন্ট্রোল ইউনিটের ফল, প্রিসাইডিং অফিসারের ডায়েরি, ভোটারদের রেজিস্টার, ভোটার স্লিপ এবং ভোটার তালিকায় চিহ্নিত ভোটদাতার সংখ্যার সঙ্গে ভোটদানের পরে ভিভিপ্যাটে জমা থাকা ভোট স্লিপ মিলিয়ে দেখা হবে। সব ঠিক থাকলে ধরে নেওয়া হবে, ভোট-প্রক্রিয়ায় ভুলভ্রান্তি হয়নি।