West Bengal Assembly Election 2021

Bengal polls: শোভন-বৈশাখীর সঙ্গে পদ্মের ‘ব্রেক-আপ’, নেপথ্যে কি আসল তাগিদ ‘সম্মানরক্ষার’

রাজনীতির অঙ্গনে পারিবারিক কলহের আবহ পছন্দ ছিল না রাজ্য বিজেপি-র বড় অংশের। তাতেই সিলমোহর দিয়েছেন জেপি নড্ডা, অমিত শাহরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২১ ২১:২৪
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

প্রার্থিত বেহালা পূর্ব আসনে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে প্রার্থী করেনি বিজেপি। ‘বিগ্রহ’ শোভনের এমন ‘অপমান‍’ মানতে না পেরে ফেসবুকে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। মুহূর্তে দলত্যাগের সিদ্ধান্তও পাকা করে ফেলেন রাজ্য রাজনীতির এই বহুচর্চিত জুটি। এ খবর রবিবার সন্ধ্যার। কিন্তু কেন এমন হল? কেন কথা দিয়েও শোভনকে পছন্দের আসনে প্রার্থী করল না বিজেপি?

Advertisement

রবিবার বিজেপি-র প্রার্থিতালিকায় চার সাংসদের জায়গা হয়েছে। তার মধ্যে আবার বাবুল সুপ্রিয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। এ সব নিয়েই সোমবার দিনভর সরগরম বিজেপি-র অন্দরমহল। তবে তার মধ্যেই বারবার আলোচনায় এসেছে শোভন-বৈশাখী প্রসঙ্গ। সেই আলোচনায় রাজ্য নেতাদের অনেকেই বলছেন, এমনটাই হওয়ার ছিল। কিন্তু কেন?

অনেকবারই বিজেপি-র সঙ্গে শোভন-বৈশাখীর দূরত্ব তৈরি হয়েছে। পরে তা মিটমাটের চেষ্টাও চালিয়েছে পদ্মশিবির। এ বার তেমন হবে কি না, সেটাই দেখার। রবিবার সন্ধ্যায় পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন শোভন-বৈশাখী। ২৪ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও তা নিয়ে বিজেপি-র তরফে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। অমিত শাহের সফর নিয়ে ব্যস্ত রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ওঁদের পদত্যাগপত্র পেয়েছেন কি না, সে ব্যাপারে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত‌ কোনও মন্তব্য করেননি। তবে পদত্যাগের চিঠি পাঠিয়ে দিলেও শোভন-বৈশাখীর ভবিষ্যৎ কর্মসূচি নিয়ে এখনও নিশ্চিত নয় রাজ্য বিজেপি। তারা মনে করছে, এখনও শোভন-বৈশাখীকে নিয়ে শেষ কথা বলার সময় আসেনি।

Advertisement

বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পর প্রথম থেকেই সব ব্যাপারে শোভন-বৈশাখী একে অপরের সমান গুরুত্ব চেয়ে এসেছেন। তার অন্যথা হলে দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেছেন। শোভনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও কেন বৈশাখীকে আলাদা করে বলা হয়নি, এমন প্রশ্নে দলের অনেক কর্মসূচিতে আসেননি তাঁরা। শোভনকে রাজ্য কমিটির সদস্য করার পরে বৈশাখীকেও সেখানে ঠাঁই দিতে কার্যত বাধ্য হয়েছিল গেরুয়াশিবির। অনেক বার অনেক কিছু মেনে নিয়েও সব সময় মন পাওয়া যায়নি। রাজ্য বিজেপি-র এক নেতার কথায়, ‘‘কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে আমরা অনেক সময়েই ওঁদের মন যুগিয়ে চলেছি। পুষ্পবৃষ্টি করিয়ে সদর দফতরে স্বাগত জানানো হয়েছে। একই ঘরে পাশাপাশি একই মাপের চেয়ার‌ ও তার উপর একই রঙের ‘ম্যাচিং’ তোয়ালের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। কিন্তু দু‍’জনকে তো আর একই আসনে প্রার্থী করা যায় না!’’

শোভন-বৈশাখী কি এমন দাবি করেছিলেন? ওই নেতার বক্তব্য, ‘‘হুবহু তা নয়। কিন্তু প্রায় একই রকম। পাশাপাশি দু’টি কেন্দ্র চেয়েছিলেন তাঁরা। বৈশাখীকে প্রার্থী করার আর্জি আগেই বাতিল হয়ে গেলেও বেহালা পূর্ব থেকে শোভনকে প্রার্থী করা হবে বলে গত শুক্রবার পর্যন্তও ঠিক ছিল।’’ ওই নেতার বক্তব্য অনুযায়ী, শনিবার দিল্লিতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে প্রার্থিতালিকা নিয়ে বৈঠকের সময়েই শোভনের নাম কাটা যায়।

কেন, তার উত্তরও মিলেছে বিজেপি-র একাধিক নেতার মন্তব্যে। তাঁরা বলছেন, বেহালা পূর্ব কেন্দ্রে শোভন-জায়া রত্না চট্টোপাধ্যায়কে তৃণমূল প্রার্থী করাতেই শোভনকে ওই কেন্দ্র দিতে চাননি নেতারা। কারণ, শোভন ও রত্না মুখোমুখি হলে রাজনৈতিক লড়াইয়ের বদলে ওই আসনে যুযুধান দুই প্রার্থীর পারিবারিক গোলমাল সামনে চলে আসত। তেমন যে হতে পারে, তার ইঙ্গিত আগেই পাওয়া গিয়েছিল। ইতিমধ্যেই রত্না বিভিন্ন ব্যক্তিগত বিষয় এবং শোভনের সঙ্গে বৈশাখীর সম্পর্ক নিয়ে নানা মন্তব্য করেছেন। বিজেপি-র মঞ্চ ব্যবহার করেই তার জবাব দিয়েছেন শোভন। সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন বৈশাখী। আবার পাল্টা বলেছেন রত্না। রাজনীতির অঙ্গনে পারিবারিক কলহের আবহ পছন্দ ছিল না রাজ্য বিজেপি-র বড় অংশের। তাতেই সিলমোহর দিয়েছেন জেপি নড্ডা, অমিত শাহরা।

রত্না বিরোধী দলের প্রার্থী হলেও তিনি একজন মহিলা। তাঁকে যে ভাষায় আক্রমণ করা হচ্ছে, তাতে বিজেপি-র ‘ভাবমূর্তি’ নষ্ট হতে পারে বলেও মনে করছিলেন দলের শীর্ষনেতারা। এ ছাড়াও আরও এক নারীর সম্মানরক্ষার তাগিদ রয়েছে বিজেপি-র। তিনি রায়দিঘির বিদায়ী তৃণমূল বিধায়ক দেবশ্রী রায়। সোমবারই যিনি তৃণমূল ছেড়েছেন। শোনা যাচ্ছে, বিজেপি‌-তে দেবশ্রীর যোগদান ও বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। জল্পনা— এত দিন মূলত শোভন-বৈশাখীর আপত্তিতেই দেবশ্রীকে কাছে টেনেও দলে নিতে পারেনি বিজেপি। এখন সেই সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিজেপি নেতাদের দাবি, সেটা শেষপর্যন্ত না হলেও দেবশ্রী একজন প্রথিতযশা অভিনেত্রী। তাঁর সম্পর্কেও যে ভাবে শোভন-বৈশাখী ‘ব্যক্তিগত’ আক্রমণ করছিলেন, তাতে নিয়েও আপত্তি ছিল বিজেপি রাজ্য নেতৃত্বের। সম্প্রতি শোভনের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছেন দেবশ্রী। তাতে দেবশ্রীর পক্ষে সাক্ষী দেওয়ার কথা প্রকাশ্যেই জানিয়েছেন রত্না। গেরুয়া শিবিরের নেতারাই বলছেন, ওই দুই নারীর সম্মানরক্ষার তাগিদও ছিল বিজেপি-র। কারণ, ভোটের সময় কোনও নারী সম্পর্কেই বিতর্কে জড়াতে চায় না দল।

পাশাপাশি, রাজ্য বিজেপি-র এক শীর্ষনেতার বক্তব্য, ‘‘শোভনের সাংগঠনিক শক্তি কাজে লাগাতে চেয়েছিলাম আমরা। তাই তাঁকে কলকাতা জোনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। জোনের পর্যবেক্ষকও করা হয়েছিল। ৫৬টি বিধানসভা আসনের দায়িত্ব কম কথা নয়। কিন্তু শোভন পাশাপাশিই বান্ধবী বৈশাখীর জন্য ‘সুবিধাজনক’ আসন খুঁজেছেন। দলের সঙ্গে তাঁর যাবতীয় যোগাযোগের ‘সেতু’-ও তাঁর বান্ধবী।’’ বস্তুত, শোভন তাঁর ইস্তফাপত্রে লিখেওছেন, তাঁকে বেহালা পূর্বের বদলে বেহালা পশ্চিমে মনোনয়ন দেওয়ায় এবং বৈশাখী ভোটের টিকিট না পাওয়ায় তাঁরা দু’জনেই দল ছাড়ছেন। ফলে দল হিসেবে বিজেপি-রও সম্মানরক্ষার তাগিদ ছিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement