Saltlake

Bengal Election: অতীত আতঙ্ক কাটিয়ে নির্বিঘ্নেই ভোট বিধাননগরে

আশঙ্কা মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় স্বস্তির শ্বাস ফেলেছেন বিধাননগর বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটারেরা। শনিবার টুকরো কিছু গন্ডগোল ছাড়া বড় অশান্তি হয়নি।

Advertisement

আর্যভট্ট খান ও কাজল গুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২১ ০৬:০২
Share:

অপেক্ষা: ভোট দেওয়ার দীর্ঘ লাইনে মহিলা ভোটারেরা। শনিবার, সল্টলেকের ভারতীয় বিদ্যাভবন বুথের সামনে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার স্মৃতি এখনও টাটকা। তাই ভোট ঘিরে অশান্তির একটা আশঙ্কা ছিল ওঁদের অনেকের মনেই। তবে দিনের শেষে সেই আশঙ্কা মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় স্বস্তির শ্বাস ফেলেছেন বিধাননগর বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটারেরা। শনিবার ওই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণে টুকরো কিছু গন্ডগোল ছাড়া বড় অশান্তি হয়নি। বিশেষ করে, প্রবীণ ভোটারেরা জানিয়েছেন, ভয়ের যে বাতাবরণের আশঙ্কা তাঁরা করেছিলেন, এ দিন তা ছিল না। তাই মোটের উপরে শান্তিতেই ভোট দিতে পেরেছেন তাঁরা। বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিধাননগর কেন্দ্রে ৬১ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানা গিয়েছে।

Advertisement

জয়ন্ত সাহা নামে সল্টলেকের এক প্রবীণ বাসিন্দা জানালেন, ২০১৫ সালের পুর নির্বাচনে সল্টলেকের এবি-এসি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্ত্রী ও মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে ভোট দিতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বুথের ভিতরে অশান্তির জেরে কেউই ভোট দিতে পারেননি। এ বার অবশ্য প্রত্যেকেই নিজের ভোটটা দিয়েছেন। জয়ন্তবাবু বললেন, ‘‘সে বার স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ দেখি, ভিতরে কিছু বহিরাগত ঢুকে পড়ে বুথ দখল করার চেষ্টা করছে। লাইনে দাঁড়িয়েই আমি মার খাই। আমার চশমা পড়ে যায়। এর পরে ট্যাক্সি ধরে বাড়ি চলে যাই।’’ জয়ন্তবাবু বলেন, ‘‘এ বার অবশ্য সকাল সকাল আমরা তিন জনই ভোটটা দিয়ে এসেছি ভাল ভাবে। সমস্যা হয়নি।’’

সল্টলেকের আর এক বাসিন্দা গোরা সাহা বললেন, ‘‘আগের বার কিছু বহিরাগত দুষ্কৃতী অশান্তি বাধিয়েছিল। ওরা কোন দলের, তা বুঝতে পারিনি। ওদের হুমকিতে আমরা ছুটে পালিয়ে যাই। আমার এক পাটি চটিও হারিয়ে যায়। পরে আর ফিরে এসে ভোট দেওয়ার সাহস পাইনি।’’ এ বারের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এতটা শান্তিতে আগে কখনও ভোট দিইনি।’’

Advertisement

তবে ভোটপর্ব যে পুরোপুরি ঝামেলাবিহীন ছিল, এমনটাও নয়। এ দিন শান্তিনগর নাওভাঙা অবৈতনিক বিদ্যালয়ে ভোটগ্রহণ চলাকালীন বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে প্রথমে বচসা ও পরে হাতাহাতি বেধে যায়। ইটবৃষ্টিও হয়। বিজেপির অভিযোগ, ওই ভোটকেন্দ্রে তৃণমূল লোক জড়ো করে বুথ দখলের চেষ্টা করেছিল। বিজেপি প্রার্থী সব্যসাচী দত্ত সেখানে যান। তাঁর অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল বাইরের লোক জড়ো করে বুথ দখল করছিল। আমরা বাধা দিতেই ওরা আমাদের তিন জন কর্মীকে মারধর করে। তাতে ওই তিন জন জখম হয়েছেন।’’ ঘটনাস্থলে পৌঁছন তৃণমূল প্রার্থী সুজিত বসুও। তিনি বলেন, ‘‘এই বুথে শান্তিপূর্ণ ভোট হচ্ছিল। বিজেপি এসে ভোট বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করে। সাধারণ মানুষ রুখে দাঁড়ান। আমাদের এক এজেন্ট ওদের ছোড়া ইটে আহত হয়েছেন।’’

এর কিছু ক্ষণ পরেই নয়াপট্টিতে তৃণমূলের বিদায়ী কাউন্সিলর জয়দেব নস্করের বাড়ির সামনে উত্তেজনা ছড়ায়। জয়দেববাবুর অভিযোগ, ‘‘বিজেপি প্রার্থী সব্যসাচী দত্ত আমার বাড়ির সামনে এসে হুমকি দেন। এমনকি, কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক জওয়ান আমার পেটে বন্দুক ঠেকিয়ে শীতলখুচির কথা মনে করিয়ে হুমকি দেন। আমি কমিশনে অভিযোগ জানাব।’’ যদিও সব্যসাচীবাবু এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

সল্টলেকের প্রবীণ বাসিন্দা প্রীতিকুমার সেনকে ২০১৫ সালের পুর নির্বাচনে বুথের মধ্যে মাটিতে ফেলে মারধর করার ঘটনায় চাঞ্চল্য
তৈরি হয়েছিল। এ দিন অবশ্য তিনি সস্ত্রীক ভোট দিয়েছেন। প্রীতিকুমারবাবু বলেন, ‘‘অনেক দিন পরে এত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হল। এটাই তো কাম্য।’’ সল্টলেকের ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রবীণ বাসিন্দা রামশঙ্কর মালব্য জানান, এর আগে ভোটে যে ভয়ের পরিবেশ ছিল, বহিরাগতদের দাপট ছিল, এ বার তা দেখা যায়নি।

সিএল ব্লকের অরবিন্দ স্কুল অব এডুকেশনের ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে এসে এক প্রবীণ নাগরিক সঙ্ঘমিত্রা পাল বললেন, ‘‘করোনা আবহে ভোট কেমন হবে, তা নিয়ে আশঙ্কা ছিল। ভোট দিতে এসে দেখলাম, ওঁরা ভোটকেন্দ্রে ঢোকার আগে শরীরের তাপমাত্রা মাপছেন। হাতে স্যানিটাইজ়ার দিচ্ছেন। এমনকি, ভোট দেওয়ার আগে হাতে প্লাস্টিকের গ্লাভসও দেওয়া হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement