প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
রাজ্যে ভোটপ্রচারে এসে ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার কোচবিহার রাসমেলা ময়দানে নির্বাচনী জনসভা করেন তিনি। সেখান থেকে মোদী ফের দাবি করেন, আগামী ২ মে নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর বাংলায় বিজেপি সরকার আসবে। তার পরেই রাজ্যে বিকাশ ও প্রগতির কাজ শুরু হবে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।
আট দফার মধ্যে দু’দফার ভোট রাজ্যে আগেই হয়ে গিয়েছে। মঙ্গলবার তিন জেলা— হাওড়া, হুগলি এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণ চলছে। সেই আবহে মোদী নির্বাচনী প্রচারে আসেন কোচবিহারে। মোদীর বলেন, ‘‘দ্বিতীয় দফার নির্বাচনেই দিদির চলে যাওয়া নিশ্চিত হয়েছে। সাধারণ মানুষ বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে লাইন দিয়ে বিজেপি-কে ভোট দিয়েছে। তৃতীয় দফায় ভাল ভোট হচ্ছে। বাংলায় বিজেপি-র এমন ঢেউ চলছে যেখানে দিদির গুন্ডাদের ভয় কিনারায় চলে গিয়েছে।’’
প্রথম দু’দফা শেষে বিজেপি দাবি করেছিল, যে ৬০ আসনে ভোট হয়ে গিয়েছে, তার বেশির ভাগেই তারা জিতছে। মমতা সেই দাবিকে চ্যালেঞ্জ করে বিভিন্ন নির্বাচনী সভায় বিজেপি বিরোধী কথাবার্তা বলছিলেন। সে প্রসঙ্গ তুলে মোদী মঙ্গলবার বলেন, ‘‘দিদি ইদানীং প্রশ্ন করছেন, বিজেপি কি ভগবান যে বলছে দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে তারা জিতে গিয়েছে? আমি দিদির উদ্দেশে বলতে চাই, আমরা সাধারণ মানুষ। আমরা দেশের সেবায় নিয়োজিত। নির্বাচনে কে হারছে কে জিতছে সেটা প্রমাণ করার জন্যে ভগবানকে কষ্ট করতে হয় না। জনগণকে দেখলেই বোঝা যায় কে হারছে আর কে জিতছে। পরিবর্তনের হাওয়া কোন দিকে বইছে, আপনার রাগ আপনার ক্ষোভ এবং ব্যবহার দেখলেই একটি বাচ্চাও বলে দিতে পারবে দিদি আপনি নির্বাচন হেরেছেন।’’
এর পরেই প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘‘কোচবিহারে এসে আমি আপ্লুত আপনারা যে ভালবাসা আমায় দিচ্ছেন ২ মে জেতার পর উন্নয়নের সুদ হিসেবে আমি তা পরিশোধ করব।’’
মঙ্গলবার নিজের ভাষণে নন্দীগ্রাম প্রসঙ্গও তোলেন প্রধানমন্ত্রী। মমতার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আপনাকে প্রতি দিন বলতে হচ্ছে যে, আপনি নন্দীগ্রাম জিতছেন। নন্দীগ্রামে নির্বাচনের দিন পোলিং বুথে আপনি যে খেলা করেছেন, যে কথা বলেছেন, তাতেই বোঝা যাচ্ছে আপনি হেরে গিয়েছেন। যখন আপনার দল ঘোষণা করে দিয়েছে আপনি বারাণসী থেকে লোকসভা নির্বাচন লড়বেন, তখন যে কোনও মানুষই বুঝতে পারবে বাংলা থেকে তৃণমূল সাফ হয়ে গিয়েছে। আপনাকে রাজনীতি করতে হলে বাংলার বাইরে গিয়ে করতে হবে।’’
রাজ্যে এ বারের ভোটে বিজেপি-র বিরুদ্ধে তৃণমূল মেরুকরণের রাজনীতি করার অভিযোগ তুলেছে বার বার। বিজেপি যদিও পাল্টা বলেছে, তোষণের রাজনীতি করে তৃণমূলই মেরুকরণের রাজনীতি শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রীর মুখেও মঙ্গলবার সে কথা উঠে এসেছে। কোচবিহারের সভা থেকে তিনি বলেন, ‘‘দিদি আপনি বলছেন, মুসলিম সম্প্রদায়ের সমস্ত মানুষ এক হয়ে যান। ভোট ভাগ হতে দেবেন না। আসলে আপনি নিজেও বুঝতে পারছেন, মুসলিম সম্প্রদায়ের যে ভোট আপনি পেতেন সেটাও আর পাবেন না। আপনি নির্বাচন কমিশনকে গালি দিচ্ছেন সকাল-সন্ধ্যা। মুসলিম সম্প্রদায়কে আপনি এক হতে বলছেন। তার মানে আপনি নিজেও বুঝতে পারছেন, নির্বাচনে হারছেন।’’
বামফ্রন্টকে সরিয়ে তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছিল যে বার, সেই ২০১১ সালে রাজ্যে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হয়েছিল। মোদী মঙ্গলবার বলেন, ‘‘যখন আপনার দল ক্ষমতায় এসেছিল তখন সেই ইভিএম আপনাকে সাহায্য করেছিল। কিন্তু এখন সেই ইভিএম-এর উপরেই আপনার সন্দেহ। আপনি নির্বাচন কমিশনকে গালি দিচ্ছেন। অর্থাৎ আপনার খেলা শেষ। যে কেন্দ্রীয় বাহিনী আপনি নিজেই চাইতেন এখন সেই বাহিনীর উপর ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর বদনাম করার চেষ্টা করছেন।’’
রাজ্যে দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে ৮০ শতাংশ ভোট পড়েছে। সেই ভোটপর্ব শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে দাবি করে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আপনার গর্ব হওয়া উচিত ৮০ শতাংশ ভোট হয়েছে বলে। কিন্তু আপনি বলছেন, ভোটে সন্ত্রাস হচ্ছে। অর্থাৎ আপনি ভোটে হারছেন সেটা সত্য প্রকাশ পাচ্ছে।’’