দিলীপ ঘোষ এবং রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে বিজেপি-তে যোগ বনির। —নিজস্ব চিত্র
প্রথম ছবি ‘পারব না আমি ছাড়তে তোকে’। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও ছাড়তে পারবেন না তিনি।। ২৪ জানুয়ারি তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এমনই মন্তব্য করেছিলেন অভিনেত্রী কৌশানী মুখোপাধ্যায়। তাঁর সেই ছবির নায়ক থেকে এখন যিনি প্রেমিক, সেই বনি সেনগুপ্ত বুধবার বিজেপি-তে যোগ দিলেন। বনি-র মা পিয়া সেনগুপ্তও কৌশানীর সঙ্গে তৃণমূলে রয়েছেন। কৌশানীর সঙ্গে একই দিনে ঘাসফুলে যোগ দেন তিনি।
বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং তৃণমূল ছেড়ে আসা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে বুধবার পদ্মশিবিরে যোগ দেন বনি। তাঁর সঙ্গে বিজেপি-তে যোগ দেন অভিনেত্রী রাজশ্রী রাজবংশীও। সেখানে বনি বলেন, ‘‘মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। গুরুজনের নির্দেশ মেনে চলব।’’ বিজেপি-র পতাকা হাতে নিয়ে জয় শ্রীরাম ধ্বনিও দেন বনি। যদিও এর আগে , নেতাজির জন্মদিনে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লক্ষ্য করে বিজেপি নেতা ও সমর্থকদের জয় শ্রীরাম ধ্বনির তীব্র নিন্দা করেছিলেন তাঁর মা পিয়া। বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে এই ধরনের আচরণ খাপ খায় না বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি। বনির বিজেপি-তে যোগ দেওয়া নিয়ে এখনও পর্যন্ত কৌশানী বা অভিনেতার পরিবারের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
ভোটের আগে রাজ্য রাজনীতিতে এক দিকে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার হিড়িক পড়েছে, তেমনই আড়াআড়ি ভাগ হয়ে গিয়েছে টলিপাড়াও। পায়েল সরকার, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, যশ দাশগুপ্তের মতো তারকারা যেমন পদ্মশিবিরে যোগ দিয়েছেন, তেমনই পরিচালক রাজ চক্রবর্তী, জুন মাল্য, সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সায়নী দে-র মতো অভিনেত্রীরা আবার ঘাসফুল বেছে নিয়েছেন। তাতে এ বার নয়া সংযোজন বনি। পরিচালক অনুপ সেনগুপ্তর ছেলে বনির বিজেপি-তে যোগদান যদিও কাকতালীয় নয়। বেশ কিছু দিন ধরেই গেরুয়া নেতৃত্বের সঙ্গে কথাবার্তা চলছিল তাঁর।
বিনোদন জগত থেকে রাজনীতিতে পদার্পণের ঘটনা যদিও নতুন নয়, তবে এ বার যাঁরা রাজনীতিতে আসছেন, তাঁরা প্রায় সকলেই মানুষের জন্য কাজ করতে চান বলে দাবি করছেন। কিন্তু টলিপাড়ার একাংশের কাছে আবার এই যুক্তি ধোপে টিকছে না। তাঁদের মতে, রাজনীতিতে না গিয়েও মানুষের জন্য কাজ করা যায়। যাঁরা যাচ্ছেন, তাঁরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্যই যাচ্ছেন। মা ও প্রেমিকার প্রতিপক্ষ শিবিরে বনির যোগদান নিয়েও একই তত্ত্ব উঠে আসছে।
তবে একই পরিবারের সদস্য হয়েও ভিন্ন দলের সদস্যপদ গ্রহণের ঘটনা আগেও দেখা গিয়েছে। দেশের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ বিজেপি-র সদস্য হলেও, তাঁর স্বামী পরাকল প্রভাকর প্রজা রাজ্যম পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। বিজেপি তো বটেই স্ত্রী-র হাতে থাকা অর্থমন্ত্রকের একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনাও করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। রাজ্য রাজনীতিতেও সম্প্রতি তেমনই ঘটনা চোখে পড়ছে। তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহানের সঙ্গে যাঁর ঘনিষ্ঠতা নিয়ে গুঞ্জন টলিপাড়ায়, সেই যশ গিয়েছেন বিজেপি-তে। সম্পর্কে যদিও অনেক আগেই ছেদ পড়েছে, রাজনীতিতেও আলাদা রাস্তায় বেছে নিয়েছেন রাজ ও পায়েল।