দিব্যেন্দু অধিকারী, তৃণমূল সাংসদ।
মেজদা শুভেন্দু অধিকারী অনেক আগেই গিয়েছেন গেরুয়া শিবিরে। ভাই সৌমেন্দুও সেই পথে হেঁটেছেন মাস তিনেক আগে। বাবা শিশিরও সদ্য অমিত শাহের মঞ্চে উঠেছেন এগরায়। কিন্তু ‘যাব যাব’ করেও বুধবার কাঁথিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী জনসভায় গেলেন না তমলুকের তৃণমূল সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী। তবে তাঁর স্ত্রী সুতপা গিয়েছিলেন। মঞ্চে নয়, স্রেফ মোদীকে দেখতে। সভায় যাওয়ার আগেও সেটাই বলে গিয়েছেন সুতপা। তাঁর কথায়, ‘‘আমি তো ওঁকে শুধু দেখতে যাচ্ছি। মঞ্চে আমি থাকব না।’’ মঞ্চে সুতপার থাকার কথাও নয়। তিনি রাজনীতিক নন যে, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী সভার মঞ্চে থাকবেন। কিন্তু শ্রোতা হিসেবে থাকলেও মোদীর সভাস্থলে তাঁর উপস্থিতি ‘বিশেষ বার্তা’ বহন করেছে। বিশেষত, সেই উপস্থিতি যখন ‘সোচ্চার এবং প্রকাশ্য’।
কিন্ত দিব্যেন্দু কেন মোদীর সভায় গেলেন না, তার সঠিক উত্তর এখনও মেলেনি। যদিও বিস্তর জল্পনা রয়েছে। কারণ, বাবার আগেও দিব্যেন্দুকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল। বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় কাঁথির বাড়িতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সভায় যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বাবা ও ছেলেকে। পরে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণপত্র দিয়ে আসেন কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্য। সে চিঠি পাওয়ার পরে দিব্যেন্দু ‘ভাবছি’, ‘যেতে পারি’, ‘সম্ভাবনা আছে’ ইত্যাদি বলে এসেছেন। মঙ্গলবার পর্যন্তও সেটাই ছিল তাঁর অবস্থান। তবে কখনওই ‘যাব না’ বলেননি। মঙ্গলবার রাতেও দিব্যেন্দু জানিয়েছিলেন, বুধ-সকালে সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু মুখে কিছু না বললেও মোদীর সভা শুরু হতেই জানা যায়, সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি দিব্যেন্দু। আরও কিছুটা অপেক্ষা? নীলবাড়ির লড়াই পর্যন্ত তিনি তৃণমূল শিবিরেই থেকে যাবেন? তা নিয়ে রহস্য এবং জল্পনা আপাতত জিইয়েই রাখলেন ‘শান্তিকুঞ্জ’-এর সেজ অধিকারী। বাড়ির চার রাজনীতিক সদস্যের মধ্যে এখনও পর্যন্ত তিনিই শুধু রয়ে গেলেন তৃণমূলে। কিন্তু পাশাপাশিই, স্ত্রী-কে প্রধানমন্ত্রীর সভায় পাঠিয়ে ‘বার্তা’ও দিয়ে রাখলেন বলেই মনে করছেন রাজ্য-রাজনীতির কারবারিরা। কারণ, দিব্যেন্দু হলদিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি কর্মসূচিতে এলাকার সাংসদ হিসেবে যাওয়ার আমন্ত্রণ ফেরাননি। কাঁথির সভা অবশ্য ছিল পুরোদস্তুর রাজনৈতিক। সেই কারণেই কি সাময়িক বিরতি? জল্পনায় ঠাঁই পাচ্ছে সেই সম্ভাবনাও।
দিব্যেন্দুর ঘনিষ্ঠদের একাংশের দাবি, কৌশলগত কারণেই আপাতত তিনি বিজেপি-তে সরাসরি যোগ দিতে চাইছেন না। কারণ, বাবা শিশির বিজেপি-তে যোগ দেওয়ায় তাঁর সাংসদপদ খারিজ করার জন্য লোকসভার স্পিকারকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল। দিব্যেন্দু মোদীর মঞ্চে গেলে তাঁর বিরুদ্ধেও তেমনই ব্যবস্থা নেওয়া হবে, বলা বাহুল্য। সেজো অধিকারী সেই ঝুঁকি এখনই নিতে চাইছেন না বলে খবর। কিন্তু তিনি যে সম্পর্ক একেবারে বিচ্ছিন্ন করেননি, তার স্বাক্ষর রেখেছেন স্ত্রী-কে প্রধানমন্ত্রীর সভায় পাঠিয়ে। যাকে রসিকজনেরা ব্যাখ্যা করছেন ‘সতীর পুণ্যে পতির পুণ্য’ বলে।
তবে দিব্যেন্দুর বিজেপি-যোগ নিয়ে পদ্মশিবিরে আগ্রহ রয়েছে। কারণ, তিনি দলে এলে বাংলায় সাংসদ শক্তিতে তৃণমূলকে টপকে যেতে পারবে বিজেপি। গত লোকসভা নির্বাচনে এই রাজ্য থেকে তৃণমূলের সাংসদ হয়েছিলেন ২২ জন। বিজেপি-র ১৮ জন। ইতিমধ্যেই বর্ধমান পূর্বের তৃণমূল সাংসদ সুনীল মণ্ডল বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন। খাতায়কলমে লোকসভায় এখনও তিনি তৃণমূলের সাংসদ। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তিনি পদ্মশিবিরে। সুনীলের যোগদানের পরেই রাজ্য বিজেপি দাবি করে, বাংলা থেকে লোকসভায় তাদের সাংসদ সংখ্যা ১৯ হয়েছে। তৃণমূল কমে হয়েছে ২১। তার পরে শিশিরও বিজেপি-র মঞ্চে ওঠায় পদ্মের দাবি অনুযায়ী তৃণমূলের শক্তি আরও একটু কমে হয়ে গিয়েছে ২০। অন্য দিকে, বিজেপি ২০ জন সাংসদের দাবিদার হয়ে উঠছে। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি শিবিরের আশা ছিল, মোদীর সভায় দিব্যেন্দু চলে এলে লোকসভায় বাংলার সাংসদ শক্তিতে তৃণমূলকে টপকে যাবে বিজেপি। পদ্মের সংখ্যা হবে ২১ আর জোড়াফুলের সাংসদ ১৯ জন। কিন্তু সেই স্বপ্ন বুধবার অধরাই রয়ে গেল।