শিশির অধিকারী।
তিনি কি এখনও তৃণমূলে আছেন? বুধবার সকালে বাড়ি থেকে বেরোতেই সংবাদমাধ্যম প্রশ্ন করেছিল কাঁথির তৃণমূল সাংসদ শিশির অধিকারীকে। নিজের বাড়ি ‘শান্তিকুঞ্জ’ থেকে বেরিয়ে কোভিডের দ্বিতীয় ডোজ নিতে যাচ্ছিলেন তিনি। তখনই সংবাদমাধ্যম ঘিরে ধরে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদকে। তিনি এখনও তৃণমূলে আছেন কি না প্রশ্ন করতেই শিশির বলেন, “কে বলল আমি তৃণমূলে আছি? লোকে তাই বলে নাকি?” সুযোগ দিলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী সভায় যেতে পারেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। শিশিরের কথায়, “যে দিন শুভেন্দু (বিজেপি-তে) চলে গিয়েছে, সেই ডিসেম্বর থেকে আমার বাপ-ঠাকুরদা-চৌদ্দ পুরুষ তুলে গালাগালি করা হয়েছে। মিরজাফর, বেইমান বলা হচ্ছে! কার খেয়েছি, কার ভোগ করেছি আমরা জানি না। মেদিনীপুরের লোক জানে আমরা ভোগী না ত্যাগী।”
প্রসঙ্গত, আগামী ২৪ মার্চ কাঁথিতে নির্বাচনী জনসভা করার কথা প্রধানমন্ত্রীর। সেই সভায় শিশিরকে আমন্ত্রণ জানাতে ইতিমধ্যেই তাঁর বাড়িতে গিয়েছেন বিজেপি-র সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। শিশির-লকেট সাক্ষাৎ যে মধুর হয়েছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু সেই সাক্ষাতের ফল হিসেবে তিনি মোদীর সভায় যাবেন কি না, সে প্রশ্নে এখনও ধোঁয়াশা রাখছেন শিশির। বলছেন, “ডাকলে যাব। আমার কোনও আপত্তি নেই।’’ শুভেন্দু বললে তবেই তিনি মোদীর সভায় হাজির হবেন বলে ঘনিষ্ঠমহলে জানিয়েছেন প্রবীণ রাজনীতিক। নন্দীগ্রাম থেকে শুভেন্দু লড়ছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। যে নন্দীগ্রামের ল়ড়াই নিয়ে সরগরম বাংলার বিধানসভা ভোট। বাংলা তো বটেই, গোটা দেশের নজরে রয়েছে নন্দীগ্রাম আসন। যুযুধান মমতা-শুভেন্দুর কারণেই। নন্দীগ্রামে মমতা নিজে কেন প্রার্থী হলেন, তার কারণও নিজের মতো করে ব্যক্ত করেছেন বর্ষীয়ান সাংসদ তথা শুভেন্দুর পিতা। তাঁর কথায়, “উনি (মমতা) তো জাম্প করে এসেছেন! ওঁর কেন্দ্র তো ভবানীপুর বা টালিগঞ্জ। শুভেন্দু দল ছেড়েছে। তাই তাকে উৎখাত করতেই এসেছেন নন্দীগ্রামে।”
নন্দীগ্রামের বিরুলিয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর আহত হওয়ার ঘটনা নিয়েও বুধবার মুখ খুলেছেন শিশির। ওই ঘটনাকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে দাবি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। হুইলচেয়ারে নির্বাচনী প্রচারে বেরিয়েও মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, কেউ বা কারা তাঁর গাড়ির দরজা চেপে দিয়েছিল। সে জন্যই তাঁর বাঁ-পায়ের গোড়ালিতে আঘাত লেগেছে। দু’পক্ষের চাপানউতরে ভোটের আগেই সরগরম রাজ্য রাজনীতি। ওই ঘটনা প্রসঙ্গে তৃণমূল সাংসদ কটাক্ষের সুরেই বলেছেন, “যা কীর্তি করেছেন, তা বড় লজ্জার ব্যাপার। এটা জেলার পক্ষে লজ্জার। নন্দীগ্রামবাসীর পক্ষেও লজ্জার।” অল্প সময়ের মধ্যেই হাসপাতাল থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ছাড়া পাওয়া নিয়েও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি শিশির। প্রসঙ্গত, নন্দীগ্রামের ঘটনা ঘটেছিল গত বুধবার। সেদিন রাতেই মুখ্যমন্ত্রীকে এনে ভর্তি করানো হয়েছিল কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে। শুক্রবারেই বাড়ি ফেরেন হুইলচেয়ার-বাহিত মমতা। কারণ, চিকিৎসকরা মনে করেছিলেন, বাড়িতে রেখেও তাঁর চিকিৎসা করা যেতে পারে। তার পর মমতা রবিবার কলকাতার রাস্তায় হুইলচেয়ারে বসেই ময়দানের গাঁধীমূর্তি থেকে হাজরা পর্যন্ত মিছিলে অংশ নেন। সোমবার থেকে হুইলচেয়ার-বন্দি হয়েই শুরু করেন নির্বাচনী প্রচার। শিশিরের বক্তব্য, ‘‘এতটাই গুরুতর ভাবে অসুস্থ হয়ে থাকলে উনি এত তাড়াতাড়ি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেন কী ভাবে!’’
তৃণমূলে থেকে কি তিনি কোনও কাজই করতে পারেননি? শিশিরের জবাব, “আমি তো প্রতারিত হয়েছি! বন্দর হয়নি। দু’দিন আগে জাহাজ মন্ত্রী এসেছিলেন। তিনি বলছিলেন, বন্দর করে দেব। মঙ্গলবার নিতিন গডকড়ি এসেছিলেন। তিনিও বলেছেন, বন্দর হবে।” শিশিরের সংযোজন, “আমি গভীর বন্দর চাই। রাজ্য সরকার তো গভীর বন্দর করতে পারবে না। রাজ্য সরকারকে করতে হলে ছোট বা মাঝারি বন্দর করতে হবে। তা দিয়ে আমাদের কী হবে?”