রামপুরহাটে পথে সবুজ আবির। নিজস্ব চিত্র।
এগারোর পালাবদল বা ষোলোর প্রত্যাবর্তনে বীরভূমে যে ফল হয়নি তৃণমূলের, তা হল এ বার। ১১টি বিধানসভা আসনের মধ্যে তারা পেল ১০টি। ২০১৬ সালে ৯টি আসন পেয়েছিল শাসকদল। এ বার নানুর ও রামপুরহাটে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তৃণমূল-বিজেপির হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চললেও শেষ হাসি হেসেছেন শাসকদলের প্রার্থীরাই। কার্যত বিরোধী শূন্য বীরভূমে একমাত্র ব্যতিক্রম দুবরাজপুর, যেখানে বিজেপি জয় পেয়েছে।
লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে চার পুরশহর বিজেপির দিকে ঝুঁকেছিল। এ বার গ্রামাঞ্চলের ভোটার তো বটেই, শহরের ভোটেরও অনেকটাই পুনরুদ্ধার করতে সমর্থ হয়েছে তৃণমূল। তার উজ্জ্বল নমুনা বোলপুর ও সিউড়ি কেন্দ্রে বিজেপি-র দুই ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় ও জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের পরাজয়। একই ভাবে রামপুরহাট ও সাঁইথিয়া শহরের ভোটারেরা এ বার নিরাশ করেনি শাসকদলকে। পাশাপাশি বোলপুরে জয়ের হ্যাটট্রিক করলেন চন্দ্রনাথ সিংহ।
লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে দুবরাজপুর, সিউড়ি, সাঁইথিয়া রামপুরহাট ও ময়ূরেশ্বর বিধানসভা এলাকায় এগিয়ে ছিল বিজেপি। শুধু তাই নয়, নলহাটি বাদে সিউড়ি, সাঁইথিয়া, রামপুরহাট বোলপুর, দুবরাজপুর সব ক’টি শহরে মুখ থুবড়ে পড়েছিল শাসকদল। সেই শক্তিতে বলীয়ান বিজেপি ভেবে নিয়েছিল অন্তত চার থেকে পাঁচটি আসন পাবে তারা। সে ইচ্ছে পূরণ হল না। বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য রামকৃষ্ণ রায়ের কথায়, ‘‘হাওয়া অনুকূলে বলে আমাদের মনে হয়েছিল। তবে, আমরা সঠিক ভাবে মানুষের কাছে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছি।’’
জেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের আবার ব্যাখ্যা, তৃণমূলের এই ঘুরে দাঁড়ানোর পিছনে মূলত তিনটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, কেন লোকসভায় কম ভোট পেল দল, তার আত্মসমালোচনা করে মাঝের দু’বছরে ধাপে ধাপে সেটা মেরামত করার চেষ্টা করা হয়েছে দলের পক্ষ থেকে।
দ্বিতীয়ত, নির্বাচনে জিততে হলে মজবুত সংগঠন লাগে। সেখানেই কোথাও যেন তফাত গড়ে গিয়েছে দু’পক্ষের। ’১৯ সালের নির্বাচনে জেলার দুই লোকসভা আসন নিজেদের কব্জায় রাখতে সমর্থ হলেও সংগঠন যে টোল খেয়েছে, সেটা বিলক্ষণ বুঝেছিলেন নেতৃত্ব এবং জেলায় দলের কাণ্ডারী অনুব্রত মণ্ডল সেই ক্ষত নিরাময়ের চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন আপ্রাণ। বুথস্তরের সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছেন তিনি।
তৃতীয়ত, জেলা তৃণমূলের নেতাদের ব্যাখ্যায়, ‘দিদিকে বলো’ থেকে ‘দুয়ারে সরকার’-এর মাধ্যমে সরকার যে-ভাবে প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছতে চেয়েছে, তা-ও তাঁদের সুফল দিয়েছে।
জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘২০১১ সালে হাওয়া ছিল তৃণমূলের পক্ষে। পাঁচ বছর পরে মানুষ ভোট দিয়েছেন আমাদের সরকারের কাজের নিরিখে। আর এ বার সাংগঠনিক শক্তি।’’ তাঁর দাবি, সরকারি নানা প্রকল্প, তাঁদের লাগাতার দলীয় কর্মসূচি এবং উল্টো দিকে বিজেপির আক্রমণাত্মক মনোভাব, আগ্রাসন, মানুষ তৃণমূলকেই বেছেছেন।
তৃণমূল নেতাদের আরও দাবি, বিজেপি সমানে মেরুকরণের তাস খেলে গিয়েছে। যেটা বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে মেলে না। এর ফলে, কেবল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজনই নন, হিন্দু ভোটের একটা বড় অংশও বিজেপি-র বিপক্ষে চলে গিয়েছে। যা গত লোকসভা নির্বাচনে তাদের সঙ্গে ছিল। রাজনীতি সচেতনেরা বলছেন, সংযুক্ত মোর্চা কার্যত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গিয়েছে। যে ভোট প্রায় পুরোটাই শাসকদলের পক্ষে গিয়েছে।