ফাইল চিত্র।
বেলা ১১টা। শিলিগুড়ি কলেজের গণনা কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসছিলেন শিলিগুড়ির বিদায়ী বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য। গণনার গতিমুখ তখনই তিনি আন্দাজ করে নেন। এর পর যতই সময় পেরিয়েছে, তাঁর আশঙ্কা প্রমাণ করে বিজেপি প্রার্থী শঙ্কর ঘোষ জিতে যান শিলিগুড়ি কেন্দ্র থেকে। সিপিএম ছেড়ে সদ্য বিজেপিতে যাওয়া নেতা। দ্বিতীয় স্থানেও নেই বাম জমানার দাপুটে পুরমন্ত্রী অশোক। দ্বিতীয় স্থানে তৃণমূলের ওমপ্রকাশ মিশ্র। পরবর্তীকালে আর কোনও নির্বাচনে দাঁড়াবেন না বলেও এ দিন জানান অশোক।
অশোক বলেন, ‘‘লোকসভার ধারাই অব্যাহত শিলিগুড়ি এবং উত্তরবঙ্গের আর কয়েকটি জেলায়। মানুষ বিজেপি, তৃণমূল একজনকে বেছে নিয়েছে। সব জায়গায় প্রত্যাখ্যান করেছে। আমার হারও রাজনৈতিক। ব্যক্তিগত নয়।’’ তিনি বলেন, ‘‘সার্বিক ভাবে রাজ্যে বিজেপির একটা শিক্ষা হয়েছে। এটা আমাকে আনন্দ দিয়েছে।’’ অশোক যেখানে ২৮ হাজার ৮৩৫ ভোট পেয়েই থেমে গিয়েছেন। সেখানে শঙ্কর পান ৮৯ হাজার ৩৭০ ভোট। শঙ্কর বলেন, ‘‘লড়াইটা কঠিন ছিল না, আগেই বলেছিলাম।’’
অশোকের কাছেই রাজনীতির হাতেখড়ি শঙ্করের। তাই গুরু-শিষ্যের লড়াই বলেই অনেকে দেখছিলেন। যদিও এই সম্পর্ক তাঁরা মানতে চাননি। শঙ্কর এ দিন বলেন, ‘‘তিনি আমার অভিভাবকসম। নানা আন্দোলনে পাশাপাশি কাজ করেছি। লড়াইটা রাজনৈতিক। ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয় নয়। আশা করি তাঁর শুভেচ্ছা, আশীর্বাদ নিয়ে শিলিগুড়ির মানুষের জন্য কাজ করতে পারি।’’ দ্বিতীয় স্থানে তৃণমূল প্রার্থী ওমপ্রকাশ মিশ্র। তাঁকে ৩৫ হাজার ৫৮৬ ভোটে হারিয়েছেন শঙ্কর। এ দিন শুরু থেকেই গণনা কেন্দ্রে ঠায় বসে থেকেছেন শঙ্কর, ওমপ্রকাশ। বামেদের আফসোস, লোকসভায় তাদের যে ভোট বিজেপিতে গিয়েছিল তা ফেরানো যায়নি।
একই কারণে মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি এবং ফাঁসিদেওয়াতেও বিজেপির জয় বলে মনে করা হচ্ছে। হেরেছেন দু’বারের জয়ী কংগ্রেসের দুই প্রার্থী। মাটিগাড়ায় বিজেপি আনন্দ বর্মণ ৭০ হাজার ৮৪৮ ভোটে তৃণমূলের রাজেন সুনদাসকে হারিয়েছেন। ওই আসনে কংগ্রেসের শঙ্কর মালাকার অনেক পিছিয়ে পড়েন। আনন্দ বলেন, ‘‘জেতার আশা ছিলই। এখন মানুষের জন্য কাজ করতে হবে।’’
ফাঁসিদেওয়ায় জিতেছেন বিজেপির দুর্গা মুর্মু। তৃণমূল প্রার্থী ছোটন কিস্কুকে ২৭ হাজার ৭১১ ভোটে হারিয়েছেন। দুর্গা পান ১ লক্ষ ৫ হাজার ৬৫১ ভোট। সংযুক্ত মোর্চার সুনীল তিরকি ১২ হাজার ৮১৫ ভোট পান। ছোটনের দাবি, জোটের ভোট বিজেপির দিকে দিয়েই বিপত্তি ঘটেছে। সূনীলের দাবি, ‘‘জাতি, ধর্মের নামে ভোট হয়েছে। এত খারাপ ফল হবে ভাবিনি।’’