West Bengal Assembly Election 2021

Bengal Polls: গরম ঠেকাতে প্রার্থীদের পাতে চারা মাছ ও টক দই

মুখে মাস্ক দিলেও গ্লাভস্‌ পরা সম্ভব হচ্ছে না বন্দর এলাকার তৃণমূল প্রার্থী ফিরহাদ হাকিমের। প্রচারে অনুগামীরা হাত মেলাতে চাইছেন ‘দাদা’র সঙ্গে।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২১ ০৭:০১
Share:

পথে-প্রচারে: (বাঁ দিক থেকে) সুব্রত মুখোপাধ্যায়, দীপ্সিতা ধর ও রথীন চক্রবর্তী। —নিজস্ব চিত্র।

মাথার উপরে চৈত্রের চড়া রোদ। সঙ্গে ভোট-যুদ্ধের ময়দানে তেতে থাকা উত্তেজনা। সেই সব কিছু সামলে ভোটপ্রার্থীদের চরকি পাক দিতে হচ্ছে অলিগলি থেকে রাজপথে।

Advertisement

গরম থেকে বাঁচতে ভোটের প্রচারে কেউ সঙ্গে রাখছেন জলের বোতল। কেউ আবার রাস্তা থেকে কিনছেন আঙুর। কেউ আবার শরীর ঠান্ডা রাখতে বাড়ি ফিরে চুমুক দিচ্ছেন বাতাসা ভেজানো জলে। চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘‘ভোট প্রচারে খেয়াল রাখতে হবে, শরীর যেন ঠিক থাকে। মাঝপথে অসুস্থ হয়ে পড়লে তো বিপদ।’’ তবে রাজ্যে প্রতিদিন করোনার প্রকোপ বাড়তে থাকলেও বঙ্গ রাজনীতির কুশীলবেরা যে সকলেই কোভিড-বিধি মেনে চলেছেন, তা অবশ্য নয়। প্রত্যেকেই স্বীকার করছেন, ‘‘সবটা সম্ভব হচ্ছে না।’’

যেমন মুখে মাস্ক দিলেও গ্লাভস্‌ পরা সম্ভব হচ্ছে না বন্দর এলাকার তৃণমূল প্রার্থী ফিরহাদ হাকিমের। প্রচারে অনুগামীরা হাত মেলাতে চাইছেন ‘দাদা’র সঙ্গে। তাই কিছুক্ষণ অন্তর স্যানিটাইজ়ার বা সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিচ্ছেন তিনি। এ ছাড়া নিয়ম করে সঙ্গে রাখছেন নুন-চিনি মেশানো জলের বোতল। বললেন, ‘‘বারবার জল খাচ্ছি, রোদ থেকে বাঁচতে টুপি পরছি। তিন-চার বার স্নানও করছি।’’ খাওয়া-দাওয়া নিয়ে সজাগ ফিরহাদ তাই দুপুরের মেনুতে সেদ্ধ খাবারের সঙ্গে রাখছেন ছোট মাছের ঝোল।

Advertisement

প্রার্থীদের জন্য

• দুপুরের কড়া রোদে বাইরে বেরোনো এড়াতে হবে
• সুতির ঢিলেঢালা পোশাক, মাথায় টুপি পরতে হবে
• গরমে হাঁটার চেয়ে গাড়িতে প্রচার বেশি স্বাস্থ্যকর
• পেটের সমস্যা থেকে বাঁচতে বাইরের কাটা ফল, খুলে রাখা খাবার নয়
• নুন-চিনি-লেবুর রস মেশানো জল প্রচুর খেতে হবে, চলবে ডাবের জলও
• প্রবীণ ও কোমর্বিডিটি থাকা প্রার্থীদের নিয়মিত খাওয়ার ওষুধ ভুললে চলবে না
• গরম থেকে সোজা এসি ঘরে ঢোকা যাবে না।
• যতটা সম্ভব মাস্ক পরে, দূরত্ব-বিধি মানতে হবে।

পরামর্শ: অরুণাংশু তালুকদার, মেডিসিনের চিকিৎসক, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ

তবে প্রচারে বেরিয়ে দলীয় কর্মীদের কারও বাড়িতেই দুপুরের খাওয়া সারছেন সোনারপুর দক্ষিণের সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী শুভম বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই দুপুরে কোনও খাবারের তাঁর ‘না’ নেই। তবে রাতে বাড়ি ফিরে মেনুতে ভাত-রুটির সঙ্গে রাখছেন হালকা তরকারি। শুভমের কথায়, ‘‘রোদে খুব ঘাম হচ্ছে। তাই গ্লুকোজ় মেশানো ঠান্ডা জল বারবার খাচ্ছি। বাজার এলাকায় প্রচার থাকলে আঙুর বা অন্য ফল কিনে খাচ্ছি। অনেকে ডাব, টক দইও দিচ্ছেন।’’ আর বিকেলের প্রচার, জনসভার ব্যস্ততার মাঝে চুমুক দিচ্ছেন লিকার চায়ে। ‘‘প্রচারে মানুষ মুখ দেখতে চাইছেন। তাই মাস্ক খুলতেই হচ্ছে।’’— অকপটে স্বীকার করছেন বিজ্ঞানের ওই ছাত্র।

তবে প্রচারের সময়ে খাবার মুখে তুলছেন না বরাহনগরের তৃণমূল প্রার্থী তাপস রায়। তবে প্রচারের শেষে গলা ভিজিয়ে নিচ্ছেন জল কিংবা চিনি ছাড়া লিকার চায়ে। কয়েক মাস আগেই করোনা থেকে সেরে উঠেছেন তাপস। বলছেন, ‘‘বক্তৃতা করার সময়ে মাস্ক তো খুলতেই হচ্ছে।’’ কিন্তু খাওয়াদাওয়া নিয়ে বেশ সংযত ওই প্রবীণ নেতা। এত দিন দলীয় কর্মীদের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজনে একাধিক পদ থাকলেও নিজের পছন্দমতো অল্প পরিমাণে কিছু পদ তুলে নিতেন তাপস। সম্প্রতি মা মারা যাওয়ার পরে প্রচারে বেরিয়ে চা ছাড়া কিছুই খাচ্ছেন না তিনি।

বালির সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী দীপ্সিতা ধরের আবার চায়ের প্রতি কোনও আকর্ষণ নেই। তবে প্রচারে প্রতি দু’মিনিট অন্তর তাঁর দিকে জলের বোতল এগিয়ে দেন সঙ্গে থাকা দলীয় কর্মীরা। ঠান্ডা জল নৈব নৈব চ। তবে প্রচারে কোনও বাড়িতে জল-মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করলে তাতে অবশ্য ‘না’ বলছেন না দীপ্সিতা। বললেন, ‘‘ওতেই তো পেট ভরে থাকছে। দুপুরে দলীয় কর্মীদের বাড়িতে যেমন রান্না হচ্ছে, তাই খাচ্ছি। মাঝমধ্যে টক দইও চলছে।’’

তবে খাবারের বিষয়কে ততটা আমল দিতে না চাইলেও গানই তাঁকে অক্সিজেন জোগায় বলেই জানাচ্ছেন রাজারহাট-গোপালপুরের তৃণমূল প্রার্থী অদিতি মুন্সি। বললেন, ‘‘সকালে রেওয়াজ করে বাড়ি থেকে বেরোই। গাড়িতে যাওয়ার সময়ে বেশি করে গান শুনি। গানই আমার এনার্জি বাড়ায়। দুপুরে স্যান্ডউইচ কিংবা জল বিস্কুট, ফল খেয়ে নিচ্ছি।’’ প্রতিদিন বাড়ি ফিরে অবশ্য শাশুড়ির কড়া শাসনে বাতাসা ভেজানো জলের গ্লাসে চুমুক দিতে হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন অদিতি। প্রচারে রোদচশমা বা ছাতা ব্যবহারও না-পসন্দ তাঁর। ‘‘গরমে-রোদে কর্মী, সাধারণ মানুষ যদি থাকতে পারেন, সেখানে এসব ঠিক নয়।’’— মত অদিতির।

তবে প্রচারে বেরিয়ে হালকা জামাকাপড়ের সঙ্গে সঙ্গে দিনে-রাতে হালকা খাবারের প্রয়োজনীয়তার কথা বিলক্ষণ মেনে চলছেন শিবপুরের চিকিৎসক প্রার্থী রথীন চক্রবর্তী। তাই দিনের মেনুতে রাখছেন হালকা খাবার—ভাত, টক ডাল, টক দই ও চারা মাছের ঝোল। তিনি আরও বলেন, ‘‘জল বেশি করে খাওয়া প্রয়োজন। এই সময়ে শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালান্স ঠিক রাখাটা জরুরি। তাই জলের পাশাপাশি ডাবও খাচ্ছি, কারণ ডাবের জলে পটাশিয়াম থাকে।’’ তবে কারও কিডনির অসুখ থাকলে অবশ্য বেশি ডাব খাওয়া ঠিক হবে না বলেও জানাচ্ছেন রথীন। দুপুরে বিরতিতে শরীর ঠান্ডা করে স্নান করে নেওয়াও জরুরি বলে জানাচ্ছেন ওই চিকিৎসক প্রার্থী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement