প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ গঙ্গাপ্রসাদের

Bengal polls : পতাকা খুলে তালা কার্যালয়ে

বিজেপির প্রার্থী বাছাই নিয়ে দলের সিদ্ধান্তে যে গঙ্গাপ্রসাদ বেজায় ক্ষুব্ধ তা অবশ্য রবিবার দুপুরে প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন গঙ্গাপ্রসাদ।

Advertisement

পার্থ চক্রবর্তী

আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২১ ০৭:৫৮
Share:

বন্ধ: কালচিনিতে বিজেপির দলীয় কার্যালয়ে তালা। খুলে নেওয়া হয় পতাকাও। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

প্রার্থী বাছাই নিয়ে দলের সিদ্ধান্তে আলিপুরদুয়ারে কার্যত ‘বিদ্রোহ’ শুরু হয়ে গেল গেরুয়া শিবিরে। সোমবার, কালচিনিতে একের পর-এক পার্টি অফিসে দলের ঝান্ডা খুলে দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দিলেন বিজেপির নেতা-কর্মীরা। অন্যদিকে, তাঁর মতামত না নিয়েই একাধিক কেন্দ্রে প্রার্থী ঘোষণা করা নিয়ে জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মার যে ক্ষোভ রয়েছে তাও তিনি বুঝিয়ে দিয়েছে। তিনি কোনও বড় সিদ্ধান্ত নেন কিনা, তা নিয়েও দলের অন্দরে শুরু হয়েছে জোর চর্চা। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু জেলায় আসছেন এই বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য।

Advertisement

বিজেপির প্রার্থী বাছাই নিয়ে দলের সিদ্ধান্তে যে গঙ্গাপ্রসাদ বেজায় ক্ষুব্ধ তা অবশ্য রবিবার দুপুরে প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন গঙ্গাপ্রসাদ। রবিবার রাতে তাঁকেই তাঁর জয়গাঁর বাড়িতে দলের নেতা-কর্মীদের হাতে ঘেরাও হতে হয়। তারপরই গঙ্গাপ্রসাদ ফেসবুকে মন্তব্য করেন, ‘আমার মনে হয়, আমাদের আত্মসম্মান সমেত বেঁচে থাকা উচিত। যেখানে সম্মান নেই, সেখানে বেশিদিন আমি থাকতে পারব না।’ যা নিয়ে রবিবার রাত থেকেই দলের অন্দরে গুঞ্জন শুরু হয়।

এর পর সোমবার সকালে একটি হোয়াটসঅ্যাপ পোস্টে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের উদ্দেশে তিনি লেখেন যে, এ দিন বিকালে বিজেপির জেলা সভাপতি হিসাবে শেষবার সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি মিলিত হবেন। তারপরই সেই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বেরিয়ে যান গঙ্গাপ্রসাদ। স্বাভাবিকভাবেই জেলা সভাপতির এই পোস্ট ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে বের হওয়া নিয়ে গেরুয়া শিবিরে হইচই শুরু হয়ে যায়। এ দিনই তিনি দলের জেলা সভাপতির পদ ছেড়ে দেবেন কিনা, সেই প্রশ্নে শুরু হয়ে যায় জোর চর্চা। সূত্রের খবর, নিজের ঘনিষ্ঠ মহলে কাউকে কাউকে গঙ্গাপ্রসাদ এমনও জানিয়ে দেন, তিনি নাকি দল ছেড়ে দিচ্ছেন।

Advertisement

বিষণ্ণ: আলিপুরদুয়ার আদালত চত্বরে বিজেপির জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

বিজেপি সূত্রের খবর, এর পরই বিষয়টি নিয়ে আসরে নামেন দলের রাজ্য শীর্ষ নেতারা। ফোন করে তাঁকে বোঝাতে শুরু করেন তাঁরা। তারপরই এ দিনের সাংবাদিক বৈঠক বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। দলের তরফে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের যা জানিয়েও দেওয়া হয়। তবে দুপুরে বিভিন্ন মামলার জামিন নিয়ে আলিপুরদুয়ার আদালতে পৌঁছে গঙ্গাপ্রসাদ সাংবাদিকদের বলেন, “রাজ্য নেতৃত্ব ফোন করে এ দিন চুপ করে থাকতে বলেছেন। আমার বিষয়টা আমি রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়েছি। রাজ্য নেতৃত্ব তা নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেন দেখে, আপনাদের আমি ডাকব। এখনও চ্যাপ্টার ক্লোজ় হয়নি।”

তবে বিজেপি সূত্রের খবর, আলিপুরদুয়ারে অশোক লাহিড়ীর মতো একজন অর্থনীতিবিদকে দল প্রার্থী করায় এই কেন্দ্র নিয়ে গঙ্গাপ্রসাদের ক্ষোভ অনেকটাই কমেছে। কিন্তু কালচিনিতে মোর্চা ছেড়ে বিজেপিতে আসা বিশাল লামাকে প্রার্থী করা ও এখনও পর্যন্ত ফালাকাটায় দলের জেলা নেতৃত্বের প্রস্তাবিত নামকে প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা না করায় তিনি ক্ষুব্ধ। বিজেপি সূত্রের খবর, বিশালকে নিয়ে এ দিনও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলের কালচিনির নেতা, কর্মীরা। এ দিন সেখানে দলের একাধিক কার্যালয়েবিক্ষোভ দেখান তাঁরা। কার্যালয় থেকে বিজেপির পতাকা খুলে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।

ওই কেন্দ্রে বিজেপির আট নম্বর মণ্ডলের সভাপতি নারায়ণ মঙ্গর বলেন, ‘‘প্রার্থী বাছাই নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে নেতা-কর্মীরা এ দিন কালচিনিতে একাধিক পার্টি অফিসে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা ঘোষিত প্রার্থীর সমর্থনে কাজ করবেন না বলেও জানিয়েছেন।’’

বিজেপি সূত্রে খবর, এই পরিস্থিতি সামাল দিতে দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু জেলায় আসছেন। তিনি জানান, বুধবার আলিপুরদুয়ারে আসবেন। তাঁর কথায়, ‘‘গঙ্গাপ্রসাদ শর্মার সঙ্গে দেখা করাটাই আমার আলিপুরদুয়ারে যাওয়ার একমাত্র কারণ নয়। গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা-সহ বাকি সকলকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনটা করাই আমাদের লক্ষ্য।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement