উত্তর হাওড়ার একাধিক জায়গায় বোমা ফাটার পরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
সার্বিক ভাবে হাওড়া শহরে ভোট হল শান্তিপূর্ণ। তবে ব্যতিক্রম রইল উত্তর হাওড়া। শনিবার ভোটের দিন এই কেন্দ্রে শেষরাত থেকে মুহুর্মুহু বোমার শব্দে যে ঘুম ভেঙেছিল বাসিন্দাদের, তা বজায় থাকল সন্ধ্যা পর্যন্ত। বহুতলের উপর থেকে বোমা ফেলে, ভোটদাতাদের মারধর করে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে রাখার চেষ্টা চলল দিনভর। অভিযোগ, কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশের সামনে এই ঘটনা ঘটলেও দু’পক্ষই ছিল কার্যত দর্শক। তবে এত কিছুর পরেও ভোটদানে উৎসাহে কমতি ছিল না। ভয় সরিয়ে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছেন প্রবীণ নাগরিকেরা। এ কথা মানছে শাসক ও বিরোধী দু’পক্ষই।
এ দিন কয়েকটি বুথে ইভিএম-বিভ্রাট ঘটলেও ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছিল শান্তিপূর্ণ ভাবে। একে কোভিড পরিস্থিতি, তার সঙ্গে গোলমালের আশঙ্কা থাকলেও সকাল থেকে হাওড়া শহর ও লাগোয়া গ্রামীণ এলাকা সাঁকরাইলে বিভিন্ন বুথের সামনে ছিল ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। তবে করোনা-বিধি মানার ক্ষেত্রে যেমন ভোটারদের একাংশকে সতর্ক হতে দেখা যায়নি, তেমনই নির্বাচন কমিশনের তরফেও প্রায় কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি। যদিও ভোটকর্মীরা কোভিড-বিধি মেনে ভোটদানের ব্যবস্থা করেছিলেন।
এ দিন হাওড়া সদরের বাকি আটটি কেন্দ্রে যখন ছিল উৎসবের মেজাজ, তখন ব্যতিক্রমী ছিল উত্তর হাওড়া। সকালে ভোট শুরু হতে না হতেই এলাকা কেঁপে ওঠে বোমার শব্দে। অভিযোগ, সারা দিন বিভিন্ন জায়গায় চলেছে বোমাবাজি। বোমার আওয়াজ পেয়ে পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী যখন ঘটনাস্থলে ছুটেছে, তখন বোমা পড়েছে অন্য দিকে। গোলাবাড়ির শৈল মুখার্জি রোডের বাসিন্দা অশোক দারকানি বলেন, ‘‘ভোরে বোমার আওয়াজে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। বেলা বাড়তে ফের শুরু হয় বোমাবাজি। আমার পরিবারের কেউ ভয়ে ভোট দিতে যেতে চাইছিলেন না। কিন্তু আমি তাঁদের বলি, ভোট দিতেই হবে।’’
শুধু বোমাবাজি নয়। ভোটারদের একাংশের অভিযোগ, বাড়ি এবং বুথের ১০০ মিটারের মধ্যে তাঁদের ভয় দেখানো হয়েছে। দেওয়া হয়েছে মারধরের হুমকি। স্থানীয় দম্পতি শৈলেশ আগরওয়াল ও তাঁর স্ত্রী রিনা আগরওয়াল বলেন, ‘‘আমরা যাতে ভোট দিতে না আসি, তার জন্য মারধরের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তা সত্ত্বেও আমরা ভোট দিয়েছি।’’
আতঙ্ক সরিয়ে চতুর্থ দফার নির্বাচনে মানুষ যে অবাধে ভোট দিতে পেরেছেন, তা মানছেন শাসক এবং বিরোধীরা। হাওড়া জেলা তৃণমূলের চেয়াম্যান অরূপ রায় বলেন, ‘‘কিছু জায়গায় কেন্দ্রীয় বাহিনী অতি সক্রিয়তা দেখিয়েছে। তবে মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ভোট দিয়েছেন।’’ একই দাবি করেছেন বিজেপির জেলা সভাপতি সুরজিৎ সাহা। তাঁর কথায়, ‘‘গণতন্ত্রের রায় আমাদের দিকেই যাবে।’’ প্রচুর মানুষ যে ভাবে ভোট দিয়েছেন, তাকে অত্যন্ত ভাল লক্ষণ বলে বর্ণনা করেছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদারও।