West Bengal Assembly Election 2021

Bengal Polls: আবেদন করেও ভোটদান হল না বাড়িতে, ক্ষোভ হাওড়ায়

এ বার কমিশনের পক্ষ থেকে নতুন নিয়ম করা হয়েছে যে, ৮০ বছরের ঊর্ধ্বে এবং ভিন্ন ভাবে সক্ষম নাগরিকেরা বাড়িতে বসেই তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।

Advertisement

দেবাশিস দাশ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২১ ০৫:২৪
Share:

হতাশ: বাড়ি থেকে ভোট দেওয়ার আবেদনপত্র পূরণ করার পরে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া স্লিপ নিয়ে গীতারানি মিত্র। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

তাঁদের কেউ বাতের ব্যথায় হাঁটতে পারেন না। কেউ দীর্ঘ দিন ধরে শয্যাশায়ী। কারও আবার দুরারোগ্য ব্যাধিতে দেহের ৮০ শতাংশ অসাড়। এমনই কিছু অসুস্থ প্রবীণ এবং ভিন্ন ভাবে সক্ষম মানুষ ইচ্ছে থাকলেও নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলেন না। অভিযোগ, তাঁদের পরিবারের তরফে জেলা নির্বাচন দফতরে বার বার আবেদন জানানো হলেও বাড়িতে ভোট নিতে কেউ আসেননি। এই ঘটনায় ক্ষিপ্ত সেই সমস্ত পরিবারের প্রশ্নের মুখে পড়তে হল ভোটকর্মী ও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। সোমবার যখন তাঁরা অন্য কয়েকটি বাড়িতে ভোট করাতে যান, তখনই তাঁদের দেখতে পেয়ে ক্ষোভ উগরে দেন বাসিন্দাদের একাংশ। যদিও এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন দফতরের দাবি, যাঁরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আবেদন করেছিলেন, শুধুমাত্র তাঁরাই ভোট দিতে পেরেছেন। সেটাই নিয়ম।

Advertisement

এ বারের বিধানসভা নির্বাচনে কমিশনের পক্ষ থেকে নতুন নিয়ম করা হয়েছে যে, ৮০ বছরের ঊর্ধ্বে এব‌ং ভিন্ন ভাবে সক্ষম নাগরিকেরা বাড়িতে বসেই তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। নির্বাচন দফতরের লোকজনই সমস্ত বিধি মেনে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে গোপন পোস্টাল ব্যালটে ভোট নিয়ে আসবেন। এ দিন দুপুরে শিবপুর বিধানসভা কেন্দ্রের রামরাজাতলা-আড়ুপাড়া এলাকায় এক জন সেক্টর অফিসার ও এক জন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্টর অফিসারের নেতৃত্বে ১১ জনের একটি দল ভোট নিতে এলাকায় ঢোকার পরেই চাঞ্চল্য তৈরি হয়। প্রথম বার এ ভাবে বাড়ি বাড়ি ভোট নেওয়া হচ্ছে দেখে ভিড় জমে যায়। প্রথমে আড়ুপাড়ার হাটপুকুরের তস্য গলির মধ্যে ভবানী মুখোপাধ্যায় নামে বাতে প্রায় অচল ৮০ বছরের এক বৃদ্ধার বাড়িতে ভোট নিতে যায় ১১ জনের ওই দলটি। কমিশনের সমস্ত নিয়ম মেনে প্লাস্টিকের বোর্ড দিয়ে ঘিরে পোস্টাল ব্যালটে ভোট নেওয়া হয়।

এর পরে ওই ভোটকর্মীরা যখন এলাকারই আর এক জন প্রবীণের বাড়িতে ভোট নিতে যাচ্ছিলেন, তখনই স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের ঘিরে ধরেন। বাসিন্দাদের প্রশ্ন, তাঁদের বাড়িতেও তো ৮০ বছরের বেশি বয়সি বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা আছেন। তা হলে তাঁরা ভোট দিতে চেয়েও পারছেন না কেন? এটা কি কমিশনের নীতির বিরুদ্ধে নয়?

Advertisement

তরুণ মিত্র নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আমার মা শয্যাশায়ী। কিছু দিন আগে এক জন বুথ স্তরের অফিসার এসে এ ভাবে ভোট দেওয়ার জন্য একটি ফর্ম দিয়ে গিয়েছিলেন। তার পরে তিনি আর আসেননি। এখন দেখছি, ওঁদের ভুলে আমার মা ভোটটাই দিতে পারলেন না।’’

ওই এলাকারই আর এক বাসিন্দা দেবকুমার মিত্রের অভিযোগ, তাঁর মা গীতারানি মিত্রের বয়স প্রায় ৮৪ বছর। নির্বাচন কমিশনের এক প্রতিনিধি এসে ফর্ম ডি ভর্তি করিয়ে একটা স্লিপ দিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেও ভোটদাতাদের তালিকায় তাঁর মায়ের নাম ওঠেনি। ফলে এ বছর ভোট দিতে পারেননি ওই বৃদ্ধা।

দেবকুমারবাবুর বাড়িতে গেলে তাঁর মা, অশীতিপর গীতারানিদেবী কমিশনের দেওয়া স্লিপ দেখিয়ে বললেন, ‘‘আমি আর হেঁটে বুথে যেতে পারি না। তাই ভেবেছিলাম, এ বার বুঝি বাড়িতে বসেই ভোট দিতে পারব। কিন্তু স্লিপ থাকা সত্ত্বেও ওঁরা বাড়িতে এলেন না।’’

এর থেকেও ভয়াবহ অভিযোগ শোনা গেল হাওড়ার শিবপুরের একটি আবাসনের বাসিন্দা সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে। তিনি বললেন, ‘‘আমার স্ত্রী দীর্ঘ দিন ধরে শয্যাশায়ী। দেহের ৮০ শতাংশ পঙ্গু। সমস্ত শংসাপত্র রয়েছে। আমার বাড়িতে প্রশাসনের প্রতিনিধি এসে ফর্ম-ডি ভর্তি করিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেও নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। আমার স্ত্রী প্রাক্তন সরকারি কর্মী। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও তিনি ভোট দিতে পারলেন না।’’

হাওড়া জেলা প্রশাসনের তরফে প্রথমে ভোটার তালিকা দেখে এমন বয়স্ক ও বিশেষ ভাবে সক্ষম ৮৭ হাজার ভোটারের একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছিল। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কর্তারা জানান, ভোট উৎসবের মতো। তাই অধিকাংশ মানুষই বুথে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে চান। সেই কারণে ৮৭ হাজারের মধ্যে মাত্র চার হাজার নাগরিক বাড়িতে বসে ভোট দিতে রাজি হয়েছেন।

প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি নির্বাচন কমিশনের নতুন নিয়মকে ইচ্ছাকৃত ভাবেই এড়িয়ে যাওয়া হল? ভোট দিতে ইচ্ছুক হওয়া সত্ত্বেও বাদ দেওয়া হল ৮৩ হাজার ভোটদাতাকে? নির্বাচন কমিশনের সমস্ত নিয়ম মেনে আবেদন করা সত্ত্বেও ওই তালিকাভুক্ত মানুষেরা ভোট দিতে পারলেন না কেন?

জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘এই নিয়ম ঘোষণা হওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে যাঁরা আবেদন করেছেন, শুধুমাত্র তাঁদেরই ভোট নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ৮৩ হাজার ভোটদাতার মধ্যে মাত্র চার হাজার বাড়িতে বসে ভোটদানে আগ্রহ দেখালেন কেন, সে বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement