আক্রান্ত বিজেপি প্রার্থী চন্দন নস্কর। —নিজস্ব চিত্র।
ভোটপ্রচার চলাকালীন বিজেপি প্রার্থী চন্দন নস্করের উপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলআশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। শনিবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার মগরাহাটে এই ঘটনায় প্রার্থী ছাড়াও আরও কয়েক জন আহত হয়েছেন বলে দাবি বিজেপি-র। ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।
বিজেপি সূত্রে খবর, শনিবার সন্ধ্যায় মগরাহাট পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের গোকর্ণী এলাকায় প্রচারে বেরিয়েছিলেন চন্দন-সহ দলের কর্মী-সমর্থকেরা। অভিযোগ, প্রচার চলাকালীন আচমকাই তৃণমূলআশ্রিত জনা কয়েক দুষ্কৃতী লাঠি ও রড নিয়ে বিজেপি কর্মীদের ওপর চড়াও হয়। কর্মীদের মারধরের পাশাপাশি প্রার্থীকেও বেধড়ক মারধর করে বলে অভিযোগ। ঘটনার পরই মগরাহাট থানার দ্বারস্থ হন বিজেপি প্রার্থী। চন্দনের দাবি, “আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবেই প্রচার চালাচ্ছিলাম। কিন্তু তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। নিজেদের অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছে বলে তৃণমূল এ সব কাজ করছে। ভোটে এই কেন্দ্র থেকে তৃণমূলকে মুছে দেবেন সাধারণ মানুষ।”
যদিও বিজেপি-র অভিযোগ মানতে নারাজ তৃণমূল। মগরাহাট পূর্ব কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী নমিতা সাহার পাল্টা দাবি, “হামলার ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের কেউ জড়িত নন। মিথ্যে অপপ্রচার আর কুৎসা করে প্রচারে আসার চেষ্টা করছে বিজেপি। কিন্তু এ সব করে কোনও লাভ হবে না। ওদের নাকিকান্নায় চিঁড়ে ভিজবে না।”
মগরাহাট ছাড়াও শনিবার কাকদ্বীপে দু’দলের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। দুপুরে কাকদ্বীপের শ্রীনগর গ্রামে প্রচার চালাচ্ছিল তৃণমূল এবং বিজেপি। প্রচারের সময় আচমকা দু'পক্ষ মুখোমুখি হতেই বচসা বাধে। কিছুক্ষণের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দু'পক্ষ। বিজেপি-র অভিযোগ, বেছে বেছে এলাকার বেশ কয়েক জন বিজেপি কর্মীর বাড়িতে ঢুকে তৃণমূল কর্মীরা হামলা চালিয়েছে। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে হারুউড পয়েন্ট উপকূল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেয়। সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৫ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ আটক যুবকদের ছেড়ে দেওয়ার দাবিতে কাকদ্বীপের বিজেপি প্রার্থী দীপঙ্কর জানার নেতৃত্বে কয়েকশো বিজেপি কর্মী-সমর্থক এবং স্থানীয় বাসিন্দারা হারুউড পয়েন্ট উপকূল থানা ঘেরাও করে। পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন বিজেপি প্রার্থী। থানার ভেতরে ওসি-র কাছে ঘটনার বিহিত চেয়ে দ্বারস্থ হন দীপঙ্কর। শনিবার রাত অবধি থানার সামনে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। দীপঙ্করের দাবি, “পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছে শাসকদলের। তাই তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা আমাদের কর্মীদের উপর হামলা চালিয়েছে। উল্টে পুলিশ আমাদের কর্মীদেরই আটক করে রেখেছে। যতক্ষণ না আমাদের কর্মীদের ছাড়া হবে, ততক্ষণ আন্দোলন চালিয়ে যাব।”
শনিবারের এই ঘটনায় জড়িত থাকা বা বিজেপি-র লোকজনকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। উল্টে বিজেপি-র বিরুদ্ধে হামলা চালানোর অভিযোগ তুলেছে শাসকদল। কাকদ্বীপ বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কমিটির সম্পাদক দেবব্রত মাইতির দাবি, “শনিবার জনা পাঁচেক কলেজ পড়ুয়া সাধারণ মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলির কথা বোঝাচ্ছিলেন। সেই সময় বিজেপি-র বেশ কয়েক জন দুষ্কৃতী ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের উপর হামলা চালায়। আগে এই দুষ্কৃতীরা লাল পতাকার আশ্রয়ে ছিল। এখন গেরুয়া ঝান্ডা ধরে এলাকায় অশান্তির পরিবেশ তৈরি করছে। ইতিমধ্যেই থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকেও বিষয়টি জানানো হচ্ছে। আশা করি সুবিচার পাব।”
দু’পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্তে নেমেছে হারউড পয়েন্ট উপকূল থানার পুলিশ।