Sujata Mondal Khan

Bengal polls: সুজাতার জুলুমেরই প্রতিবাদ, দাবি গ্রামের

এ দিন ওই গ্রামের অনেক প্রবীণ মানুষকে মঙ্গলবারের ঘটনার কাটাছেঁড়া করতে দেখা গিয়েছে।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

আরামবাগ শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২১ ০৬:৪৮
Share:

ফাইল চিত্র।

কোনও মহিলা বাটনা বাটছেন, কেউ রান্না বসিয়েছেন, কেউ স্নান সেরে উঠোনে তুলসী-মঞ্চে জল দিচ্ছেন।

Advertisement

বুধবারের দুপুর। কে বলবে, ২৪ ঘণ্টা আগে, মঙ্গলবার দুপুরে আরামবাগের আরান্ডির দক্ষিণপাড়ার ওই মহিলাদেরই একাংশ রান্নাবান্না ছেড়ে বাঁশ-লাঠি নিয়ে তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা মণ্ডলকে ধাওয়া করেছিলেন! বাঁশপেটাও করেছিলেন!

‘‘প্রতিবাদ করব না? উনি (সুজাতা) অযথা গ্রামে ঢুকে সবাইকে বিজেপির দুষ্কৃতী বলে ঘরে ঘরে ঢুকে হুমকি দিতে শুরু করলেন। বোমা খুঁজতে শুরু করলেন। ভাতের হাঁড়ি পায়ে করে উল্টে ফেলে দিলেন। অন্তঃসত্ত্বা এক গ্রামবাসীকে ধাক্কা মেরে ফেলে
তাঁর হাতও মাড়িয়ে দেন। তাঁর হাতে চিড় ধরে। এতেই মহিলারা তেতে ওঠেন। নিজেকে সামালতে পারিনি। প্রতিবাদে তাঁর মাথায় হাল্কা করে মেরেছি।”— অকপট ওই গ্রামের বাসন্তী মালিক।

Advertisement

বাসন্তীর পড়শি সীমা মালিক, তাঁর শাশুড়ি কাকলিদেবী, বিনা বাগ, রিতা হাজরা, সুজাতা মালিক— সকলেই মানছেন, তাঁরাও মঙ্গলবার বাঁশ-লাঠি-চেলাকাঠ নিয়ে সুজাতাকে ধাওয়া করেছিলেন।

গ্রামের প্রৌঢ় নবকুমার মালিক বলেন, “কাকে বাঁশ তুলে মারতে দেখা গিয়েছে, সেটা বড় কথা নয়। কেন এক জন মেয়ের গায়ে হাত পড়ল, গ্রামের মেয়েদের কেন বাঁশ-লাঠি নিয়ে মাঠে ছোটাছুটি করতে হল— সেটা পুলিশ, প্রশাসন, সাধারণ মানুষরা কেউ খতিয়ে দেখছেন না। রাতারাতি আমাদের গ্রামটা যেন আতঙ্কের জায়গা হয়ে উঠেছে।”

মঙ্গলবারের ভোট-পর্বে সুজাতার উপরে হামলার ঘটনায় তোলপাড় হয় রাজ্য। ধানখেত ধরে সুজাতাকে ছুটতে দেখা গিয়েছে। পিছনে বাঁশ-লাঠি নিয়ে ধেয়ে যাচ্ছিলেন একদল মহিলা-পুরুষ। সুজাতা জানিয়েছিলেন, বিজেপি পথ আটকানোয় আরান্ডির দক্ষিণপাড়ার মহলাপাড়ার সংখ্যালঘু বাসিন্দারা সাঁতরাপাড়া দিয়ে ভোট দিতে যেতে পারছেন না বলে তিনি অভিযোগ পান। বেলা ১১টা নাগাদ সুজাতা সেখানে যান। তিনি ভোটারদের নিয়ে এগোতেই বিজেপির লোকজন বাঁশ, চেলাকাঠ, হাঁসুয়া নিয়ে তাড়া করে বলে অভিযোগ। ধানখেতে দিয়ে দৌড়ে পালাতে গিয়েও সুজাতা রেহাই পাননি।

গ্রামবাসীরা তাঁর উপরে জুলুমের অভিযোগ তুললেও সুজাতা মানেননি। তাঁর দাবি, ‘‘আমি তো ভীত-সন্ত্রস্ত ভোটারদের নিয়ে বুথে যেতেই পারিনি। মাঠেই আটকে দিয়ে আমাকে খুন করার চেষ্টা করেছিল বিজেপির দুষ্কৃতীরা। ভাতের হাঁড়ি ওল্টানো বা অন্তঃসত্ত্বা বধূর গল্প সাজানো হয়েছে। ওই বুথে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে কমিশনকে
চিঠি দিয়েছি।”

মঙ্গলবার রাতেই আরামবাগে সুজাতার সিটি স্ক্যান হয়েছে। তাতে কিছু পাওয়া যায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আপাতত বিশ্রামে আছি। গায়ে কালশিটে পড়ে গিয়েছে। কলকাতায় গিয়ে আর এক বার সিটি স্ক্যান করাতে হবে। ডাক্তারও
দেখাতে হবে।’’

২০ জন বিজেপি নেতাকর্মীর নামে থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন সুজাতা। তার ভিত্তিতে মঙ্গলবারই ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়। এসডিপিও (আরামবাগ) অভিষেক মণ্ডল বলেন, “বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”

এ দিন ওই গ্রামের অনেক প্রবীণ মানুষকে মঙ্গলবারের ঘটনার কাটাছেঁড়া করতে দেখা গিয়েছে। তাঁরা জানান, আরামবাগের মানুষ ‘নির্বাচনী সন্ত্রাস’ দেখতে অভ্যস্ত হলেও দক্ষিণপাড়ায় কোনও দিন এমন অশান্তি হয়নি। কংগ্রেস বা বাম আমলে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভোট দিতে হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কোনও দিন মারপিট বা রক্তপাত হয়নি। বছর পঁচাত্তরের ফেলারাম হাজরার কথায়, ‘‘এ ভাবে গ্রামের মানুষদের একজোট হয়ে কোনও দিন খেপে উঠতেও দেখিনি।” বিমল মালিক নামে আর এক বৃদ্ধের দাবি, ‘‘তৃণমূলের অত্যাচার সামলাতেই মানুষ বিজেপির দিকে ঝুঁকেছেন। ভালমন্দ বিচার করার মতো অবস্থায় কেউ নেই।’’

দরিদ্র গ্রামটির বাসিন্দাদের সকলেই তফসিলি বর্গক্ষত্রিয়। অধিকাংশেরই পেশা দিনমজুরি। সরকারি প্রকল্পে ঘর না-পাওয়া, আমপানে ক্ষতিপূরণ না-পাওয়া নিয়ে ক্ষোভও প্রচুর। এ দিন দুপুরে ওই গ্রামে যান বিজেপি প্রার্থী মধুসূদন বাগ। তিনি আহত অন্তঃসত্ত্বাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য সাহায্যের আশ্বাস দেন। তৃণমূল পার্থী এবং তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে থানায় পাল্টা অভিযোগ করার পরামর্শ দেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement