অদিতি এবং লাভলি
গত শুক্রবার আসন্ন বিধানসভার জন্য তৃণমূলের প্রার্থী ঘোষণার পরে দলের অন্দরেই ক্ষোভ দেখা যায়। নিশানায় মূলত তারকা প্রার্থীরা। সক্রিয় রাজনীতি না করে কেন নির্বাচনের আগেই তাঁরা ময়দানে নামলেন, তা নিয়ে ক্ষোভ জমাট বেঁধেছে দলের ভিতরে ও বাইরে। তারকা প্রার্থীদের মধ্যে দু’টি নাম উল্লেখযোগ্য, লাভলি মৈত্র এবং অদিতি মুনশি। বাংলা ধারাবাহিকের নিয়মিত দর্শকের কাছে লাভলি পরিচিত মুখ। অন্য দিকে, কীর্তনশিল্পী অদিতি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন গত বৃহস্পতিবার। শুক্রবারই তাঁর নাম ঘোষিত হয় রাজারহাট-গোপালপুরের প্রার্থী হিসেবে। লাভলি দাঁড়াচ্ছেন সোনারপুর দক্ষিণ থেকে।
লাভলি ও অদিতি নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু ভোটের ময়দানে দাঁড়াতে গেলে কয়েকটি সমীকরণ কাজ করে। লাভলির স্বামী সৌম্য রায় হাওড়া গ্রামীণের পুলিশ সুপার। অদিতির স্বামী দেবরাজ চক্রবর্তী বিধাননগর পুরনিগমের প্রশাসক মণ্ডলীর সদস্য। সৌম্য ও দেবরাজ দু’জনেই শাসকদলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। প্রার্থীরা লড়বেন তাঁদের নিজেদের যোগ্যতায়। কিন্তু প্রত্যক্ষ রাজনীতির কোনও অভিজ্ঞতা না থাকা এই দুই তারকাপ্রার্থীর ক্ষেত্রে তাঁদের স্বামীদের প্রভাব কতখানি?
রাজনীতির সঙ্গে পরিচয় কতটুকু? ‘‘যে দিন থেকে ভোট দেওয়ার অধিকার পেয়েছি, দিদির সঙ্গেই আছি। এত দিন সমর্থক হিসেবে ছিলাম। এ বার কর্মী হিসেবে যোগদান করলাম,’’ জবাব লাভলির। অদিতির উত্তর, ‘‘এর আগে রাজনীতির সঙ্গে কোনও যোগাযোগ ছিল না।’’
লাভলির স্বামী প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তা। ভোটে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে কী বললেন? ‘‘আমার সিদ্ধান্তে ওর সায় আছে। তবে নিজের সিদ্ধান্ত আমি নিজে নিতে পারি। কোন দলে যাব, সেখানে ভোটে দাঁড়াব কি না, সবটাই আমার সিদ্ধান্ত,’’ জবাব লাভলির। নিন্দুকদের মতে, তাঁর স্বামী শাসকদলের ঘনিষ্ঠ বলে টিকিট পাওয়া সহজ হয়েছে। জবাবে অদিতি বললেন, ‘‘এটা গণতন্ত্র, যে কেউ যা খুশি বলতে পারেন। আমার কিছু বলার নেই।’’
অদিতি ও লাভলি আপাতত ব্যস্ত তাঁদের প্রচারপর্ব নিয়ে। কী ভাবে এগোবেন, কতটা কী বলবেন সে ক্ষেত্রে আপনাদের স্বামী কি গাইড করছেন? ‘‘ওর গাইড করার কিছু নেই। আমার পার্টির সিনিয়র নেতারা আছেন। সোনারপুর দক্ষিণের আগে যিনি বিধায়ক ছিলেন, তাঁর সঙ্গেও দেখা করেছি,’’ জবাব লাভলির। অদিতির জবাব, ‘‘ও এই ফিল্ডে সিনিয়র। সাহায্য তো করবেই।’’
তবে ভোট-পর্ব সামাল দিতে গিয়ে দুই শিল্পীর পেশা সামলানোর দায়িত্বের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘মোহর’ ধারাবাহিকে অভিনয় করছিলেন লাভলি। ‘‘লীনাদির সঙ্গে কথা বলে কয়েক মাসের ছুটি নেব শুটিং থেকে।’’ অন্য দিকে আগামী ১৫ মার্চ গানের অনুষ্ঠান করবেন অদিতি। ‘‘অনুষ্ঠান করতে কোনও বাধা নেই। আগেও কখনও রাজনীতির কারণে বিরূপ অভিজ্ঞতার মধ্যে পড়িনি। আগামী দিনেও পড়ব না। কারণ গান সব কিছুর ঊর্ধ্বে,’’ জবাব তাঁর।
দুই প্রার্থী স্বামীর ভূমিকা অস্বীকার করলেও বাস্তব বলছে অন্য কথা। গত সোমবার লাভলির স্বামীকে কোনও ভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্যে রাখা যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।