Sitalkuchi

Bengal Polls: আঙুল পরস্পরের দিকে, শীতলখুচিতে ‘চক্রান্তের মাস্টারপ্ল্যান’ দেখছেন মোদী, মমতা ২ জনেই

ঘটনার আগে কে কে মিটিং করেছে, কারা কারা গুলি চালিয়েছে, ঠিক কী পরিকল্পনা ছিল, সব বার করে আনবেন বলে জানিয়েছেন মমতা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২১ ১৮:৩৪
Share:

শীতলখুচি নিয়ে পরস্পরকে দোষারোপ মোদী-মমতার। —ফাইল চিত্র।

ভোটের সকালে কোচবিহারের শীতলখুচিতে কী হয়েছিল, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ব্যাখ্যা’ ভিন্নতর। সোমবার দু’জনেই ভোটপ্রচারের মঞ্চ থেকে ঘটনার আলাদা আলাদা ‘ব্যাখ্যা’ দিলেন। মোদী বললেন, ‘এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছাপ্পাভোট মাস্টার প্ল্যানের অংশ’। অন্য দিকে, মমতার দাবি, ‘শীতলখুচির ঘটনা অমিত শাহের ষড়যন্ত্র’।

Advertisement

শনিবার ভোটগ্রহণের দিন শীতলখুচির জোড়পাটকির ১২৬ নম্বর বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে ৪ জনের মৃত্যু হয়। গুলিবিদ্ধ হন আরও ৪ জন। গণতন্ত্রের উৎসবে এই রক্তক্ষয় নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠলেও গোটা ঘটনায় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ক্লিনচিট দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বিজেপি-র শীর্ষ নেতৃত্বও কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তার পর থেকে গত দু’দিনে বাংলায় একাধিক জনসভা করেছেন মোদী। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘেরাও করার যে ‘বিধান’ মমতা দিয়েছিলেন, তার জন্যই শীতলখুচিতে ওই ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেন তিনি।

কিন্তু সোমবার নদিয়ার কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে আয়োজিত জনসভায় মোদী সেই দাবির সঙ্গে অন্য তত্ত্বও জুড়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘সামনে পরাজয় দেখে নতুন রণকৌশল তৈরি করছেন দিদি। তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিকে ভোট দিতে দিচ্ছেন না। ওই শ্রেণির মানুষের ভোটদান রুখে, নিজের গুন্ডাদের দিয়ে ছাপ্পাভোট দেওয়ানোর ষড়যন্ত্র করছেন। তার জন্যই প্রকাশ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘেরাও করতে বলা হচ্ছে, যাতে দিদির বাকি সমর্থকরা সেই সুযোগে বুথে ঢুকে ছাপ্পা ভোট দিতে পারে। কোচবিহারে যা হয়েছে, তা দিদির এই ছাপ্পাভোট মাস্টারপ্ল্যানের অংশ ছিল।’’

Advertisement

যদিও মমতার দাবি, বিজেপি-ই কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে শীতলখুচিতে রক্তক্ষয়ী ভোট করেছে। সোমবার তিনি দাবি করেন, ‘‘এক মহিলাকে এই ষড়যন্ত্রের অংশ করা হয়েছিল। মমতার অভিযোগ, আগে থাকতে ঠিক ছিল যে বাচ্চা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে এক মহিলা বুথে গিয়ে উত্তেজনা তৈরি করবেন। তাতে হট্টগোল শুরু হলে গুলি চালাবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। অমিত শাহ নিজে এই পরিকল্পনায় যুক্ত ছিলেন বলে এবং নরেন্দ্র মোদীও গোটা ব্যাপারটা জানেন বলে দাবি করেছেন মমতা। রানাঘাটের সভায় মমতা বলেন, ‘‘২০-২২ বছরের ছেলেদের মেরে দিয়েছে। ষড়যন্ত্র করে মেরেছে। প্রথমে একটি মেয়ে দৌড়ে আসে। এসপি-র সঙ্গে বসে ষড়যন্ত্র করেছে বিজেপি। এটার তদন্ত আমি তো করাবই। আসল ঘটনা বার করে আনবই। ঘটনার আগে কে কে মিটিং করেছে, কারা কারা গুলি চালিয়েছে, ঠিক কী পরিকল্পনা ছিল... প্রথমে একটা মেয়েকে পাঠায়। সে বলে, আমার বাচ্চা লুটে নিয়ে গেল। সমস্তটা বসে ষড়যন্ত্র করেছে এবং ষড়যন্ত্র করেই গুলি চালিয়েছে। বুক ঝাঁঝরা করে দিয়েছে। তার পর ক্লিনচিটও দিয়েছে।’’

ওই দিন কারা গুলি চালিয়েছিল, সিআইএসএফ-এর (সেন্ট্রাল আর্মড পুলিশ ফোর্স) কাছ থেকে তার পুরো তালিকাও তিনি জোগাড় করে ফেলেছেন বলে দাবি করেন মমতা। পাশাপাশি তিনি আরও তথ্য জোগাড় করবেন বলেও দাবি করেন। একই সঙ্গে অমিতের ষড়যন্ত্রেই গোটা ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে দাবি করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। মানুষকে তাতিয়ে তুলতে তাদের প্ররোচনা দেওয়া হচ্ছে। গোটাটাই অমিত শাহ করেছেন। আমি এখনও বিশ্বাস করি, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ষড়যন্ত্র করেছেন। প্রধানমন্ত্রী জানেন। গুলি করে খুন করার পর উনি ক্লিনচিট দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর এটা শোভা পায় না।’’

বিজেপি যাঁর সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্র করেছে বলে অভিযোগ করেছেন মমতা, কোচবিহারের সেই পুলিশ সুপার দেবাশিস ধর ঘটনার দিনই কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ক্লিনচিট দেন। ধস্তাধস্তির সময় উত্তেজিত জনতা রাইফেল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করাতেই বাহিনীকে গুলি চালাতে হয় বলে দাবি করেন তিনি। তাতে যদিও বিতর্ক থামেনি। স্থানীয় মানুষরাই প্রশ্ন তুলেছেন যে, আত্মরক্ষার্থেই যদি গুলি চালায় বাহিনী, সে ক্ষেত্রে পায়ে গুলি না করে, অব্যর্থ নিশানায় সরাসরি বুকে কেন গুলি করা হল। এখনও পর্যন্ত তার সদুত্তর মেলেনি। সেই আবহেই সোমবার নিজের নিজের মতো করে ঘটনার ব্যাখ্যা দিলেন মোদী ও মমতা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement