দলমত নির্বিশেষে সাধারণ ভোটারদের বড় অংশ কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকায় খুশি। ছবি: পিটিআই।
নন্দীগ্রামের মতো ডায়মন্ড হারবারও ছিল নির্বাচন কমিশনের বিশেষ নজরে। মঙ্গলবার সেখানে মোটের উপরে শান্তিতে ভোট মিটলেও কমিশন এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠল বিস্তর। এবং শুধু তৃণমূল কংগ্রেস নয়, আধাসেনার ভূমিকা নিয়ে সরব হল বিজেপি-ও।
এ দিন তৃতীয় দফার ভোট শুরু হতেই অভিযোগের ঢেউ আছড়ে পড়তে থাকে। ডায়মন্ড হারবার থেকেই অন্তত ৩৯টি অভিযোগ আসে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে। কোথাও দলের ব্লক সভাপতিকে মারধর, কোথাও মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে ভোটার-নিগ্রহ, কোথাও ভোটদান শেষ হওয়ার আগেই ভোটারদের বার করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাহিনীর বিরুদ্ধে। আগের দু’দফার মতোই আধাসেনার বিরুদ্ধে বিজেপির অনুকূলে ভোট প্রভাবিত করার অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। ডায়মন্ড হারবার ছাড়াও মগরাহাট পূর্ব ও পশ্চিম, ফলতা, রায়দিঘি থেকে একই অভিযোগ এসেছে দফায় দফায়।
ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দীপক হালদার বলেন, “নির্বাচন কমিশন ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা কার্যত হতাশাজনক।” ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী পান্নালাল হালদারের অভিযোগ, “কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যাপক অত্যাচার করেছে।” সিপিএম প্রার্থী প্রতীক-উর-রহমান বলেন, “খুব ভালও বলব না, আবার খারাপও বলব না।” ফলতা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী বিধান পাড়ুইয়ের কথায়, “কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা একেবারেই ঠিক নেই। বহু বুথ দখল হয়েছে, ছাপ্পা ভোট পড়েছে। হেলদোল দেখা যায়নি বাহিনীর আচরণে। বেশ কয়েকটি বুথে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানাব।”
বিস্তীর্ণ এলাকা ঘুরে দেখা গেল, ভোটারদের শরীরী ভাষা অন্য কথা বলছে। দলমত নির্বিশেষে সাধারণ ভোটারদের বড় অংশ কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকায় খুশি। ওই ভোটারদের বক্তব্য, এই সব এলাকায় ভোটের আবহে যে-আতঙ্কের ইতিহাস ছড়িয়ে রয়েছে, যে-কারণে ভোটের দিন তালাবন্দি থাকতে হয়েছে তাঁদের, বাহিনীর উপস্থিতি সেই আতঙ্ক কাটিয়ে দিয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় দফার ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দৃশ্যমানতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তবে এ বার বিভিন্ন এলাকায় টহল দিতে দেখা গিয়েছে আধাসেনা এবং রাজ্য পুলিশকে। ড্রোন উড়িয়েও পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছেন কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং রাজ্য পুলিশের কর্তারা।
আপাতদৃষ্টিতে এ দিনের ভোটে হিংসা প্রকাশ্যে না-এলেও চাপা উত্তেজনা ছিল সর্বত্র। রায়দিঘির লালপুর এলাকার একটি বুথে বিজেপির বিরুদ্ধে এক হাজার টাকার কুপন বিলির অভিযোগ নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আসে। ডায়মন্ড হারবারে সরিষা মোড়ের কাছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোটে বাধাদানের অভিযোগ তুলে জমায়েত করেন বহু মানুষ। তাঁদের বক্তব্য, শাসক দলের অত্যাচারে দীর্ঘদিন ঘরছাড়া থাকতে হয়েছে পারুলিয়া এলাকার হরিদেবপুর ১ নম্বর ব্লকের বাসিন্দাদের। এ দিন ভোট দিতে গেলে তাঁদের বাধা দেয় তৃণমূল। তাঁদেরই এক জন জাফর শেখ বলেন, “আমরা ভোটার কার্ড নিয়ে ভোট দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তৃণমূল ভোট দিতে দেয়নি।” বিজেপি প্রার্থী তাঁদের আশ্বস্ত করে কমিশনের হস্তক্ষেপ চান। তৃণমূল প্রার্থী পান্নালালবাবু অবশ্য বলেন, “অভিযোগ তো আমার কাছে কেউ জানায়নি। এই ধরনের ঘটনার অভিযোগ পেলে আমিই তো ব্যবস্থা করতে পারতাম।”
আপাত ভাবে সিপিএম কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও এ বার নিজেদের হারানো ভোট ফিরে পাওয়ার আশায় রয়েছেন তাদের প্রার্থী প্রতীক-উর। তিনি বলেন, “গত বিধানসভা, লোকসভা বা পঞ্চায়েত ভোটের তুলনায় এ বার হিংসা, ভোট লুঠ, বুথ দখলের ঘটনা অনেক কম। প্রায় সব জায়গাতেই এজেন্ট দেওয়া গিয়েছে। তবে শেষ বেলায় পারদায় আমাদের বুথ এজেন্টকে ব্যাপক মারধর করা হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সামনেই।”
ভোটের সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকদের বক্তব্য, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ওই সব বিধানসভা কেন্দ্র, বিশেষ করে ডায়মন্ড হারবারের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন কমিশন-কর্তারা। বিগত বিধানসভা ও লোকসভা ভোটে হিংসাত্মক ঘটনার তথ্যের ভিত্তিতে এ বার পৃথক কৌশল তৈরি করা হয়েছিল। তা বিফলে গিয়েছে, বলা যায় না। ভোট লুঠ, বুথ দখল নিয়ে অভিযোগের ব্যাপকতা শতাংশের বিচারে নগণ্য। বড় কোনও হিংসার ঘটনা ঘটেনি। কোনও রকম প্রশ্ন ওঠেনি আইনশৃঙ্খলা নিয়েও।