ফাইল চিত্র।
জেলার কয়লা-মাফিয়াদের নিয়ে সম্প্রতি বহু চর্চা হচ্ছে রাজ্যে। সে কারবারের ‘দাগ লেগে থাকা’ পশ্চিম বর্ধমানে ভোট-প্রচারে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘মাফিয়া-রাজের’ প্রসঙ্গে বিঁধলেন তৃণমূল ও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগকে খারিজ করে পাল্টা তোপ দেগেছে তৃণমূলও।
জামুড়িয়ার নিঘার সভা থেকে শনিবার প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘দিদি (মমতা) এখানে চার দিকে মাফিয়া-রাজ তৈরি করেছেন। আসানসোলের প্রাকৃতিক সম্পদ লুট করতে কয়লা মাফিয়া, নদীর বালি লুট করতে বালি মাফিয়া, সরকারি জমি বেদখল করতে জমি মাফিয়া রয়েছে।’’ এর পরে তিনি রীতিমতো নাম করে সালানপুর, রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া, বারাবনি, রানিগঞ্জ, উখড়া, বল্লভপুর থেকে বাঁকুড়া সীমানা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় ‘অবৈধ’ কয়লা-কারবারের সাম্রাজ্য চলছে বলে অভিযোগ করেন। পাশাপাশি, তাঁর অভিযোগ, ‘‘এখানকার কয়লা, বালি ও অন্য খনিজ সম্পদকে ‘কালো মাল’ বলে। কার-কার কাছে তা পৌঁছয়, তা সকলেই জানেন।’ অবৈধ কারবার সম্পর্কে ওয়াকিবহালদের একাংশের দাবি, এই মুহূর্তে জেলায় হাজার পাঁচেক ‘অবৈধ’ কুয়ো-খাদ, ১৬টি ‘অবৈধ’ খোলা মুখ কয়লাখনি রয়েছে।
পাণ্ডবেশ্বর, জামুড়িয়া, হিরাপুর, কাঁকসায় বেশ কিছু বালি তোলার অবৈধ ঘাট রয়েছে। আসানসোলের নানা প্রান্তে জমি-মাফিয়াদের উৎপাতের অভিযোগ বহু বার সামনে এসেছে। তবে সূত্রের দাবি, এই মুহূর্তে সব অবৈধ কারবারে ‘ভাটা’ চলছে। কারণ, সিবিআই, ইডি-র মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি গত কয়েকমাসে বিভিন্ন কারবারের ‘মাথা’দের বিরুদ্ধে তদন্ত-অভিযান চালিয়েছে।
সম্প্রতি অবৈধ কয়লা-কারবারের ‘মূল মাথা’ অনুপ মাজি ওরফে লালার সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে সরব হন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-সহ বিজেপির তাবড় নেতৃত্ব।
একাধিক ‘কারবারে’ জড়িত অভিযোগে উঠেছে তৃণমূলের যুব-নেতা বিনয় মিশ্রের নাম। কয়লা কারবারে জড়িত সন্দেহে ধৃত বিনয়ের ভাই বিকাশ মিশ্র সিবিআই-হেফাজতে রয়েছেন। সে সূত্রেই এ দিন প্রধানমন্ত্রী তৃণমূলকে বিঁধেছেন, মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ।
যদিও প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ মানছেন না তৃণমূলের নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, কয়লা-চুরি নিয়ে সিআইডি-ও তদন্ত করছে।
কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তে ইসিএল-সহ একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার আধিকারিকদের নাম উঠে এসেছে। কয়লার অবৈধ কারবারের ‘নিয়ন্ত্রক’ বলে ওয়াকিবহাল মহলে পরিচিত জয়দেব খাঁ, রাজু ঝা-সহ একাধিক ব্যবসায়ী বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। সে সব উল্লেখ করে তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহই বলে দিচ্ছে, অবৈধ কয়লা কারবারে কারা যুক্ত। প্রধানমন্ত্রী, অমিত শাহ-সহ বিজেপি নেতৃত্ব অপপ্রচার করছেন।’’