অনুব্রত মণ্ডল। —ফাইল চিত্র।
নজরবন্দি তাঁর কাছে নতুন কিছু নয়। অতীতের নির্বাচনেও কমিশনের কড়া ‘ম্যান মার্কিং’ ছিল বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের জন্য। এ বারেও ৬০ ঘণ্টার জন্য নজরবন্দি তিনি। তবে সেই ঘোষণার পরেই কেষ্ট জানিয়েছিলেন, কমিশনের ক্যামেরা চলতে থাকলেও তিনি খেলা চালাতে জানেন। প্রকাশ্যেই বলেন, ‘‘খেলা কি বন্ধ হয়? ঘরের ভিতরে চার জনে মিলে খেলা হয় না? খেলব মনে করলেই খেলা হবে।’’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সবার প্রচারেই ‘খেলা হবে’ শব্দবন্ধ শোনা গেলেও এ আসলে অনু-বাণী। অতীতে ‘গুড়-বাতাসা’ থেকে ‘নকুলদানা’, ভোট রাজনীতিতে অনেক মিষ্টি বিতরণের পরে এ বার ‘খেলা’ এনেছেন। আর সেই খেলা তিনি খেলবেন বলেও প্রত্যয়ী। তবে আউটডোর নয়, ইনডোর গেম। তৃণমূল সূত্রে যা জানা গিয়েছে, তাতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বোলপুরে দলীয় কার্যালয়ে থাকছেন তিনি। সে ভাবে বাইরে বেরনোর কোনও ঘোষিত কর্মসূচি নেই। কিন্তু তিনি কখন কী করেন সেটা আর হলফ করে কে বলতে পারে!
বুধবারই যেমন। বলা নেই, কওয়া নেই তিনি বেরিয়ে পড়েন বাড়ি থেকে। রীতিমতো নাকানিচোবানি খেতে হয় তাঁর উপরে নজর রাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিশন কর্তাদের। এ দিক, সে দিক ঘণ্টাতিনেক ‘লুকোচুরি’ খেলার শেষ তিনি নজরে আসেন তারাপীঠ মন্দিরে।
গত মঙ্গলবার কমিশন জানায়, ৩০ এপ্রিল সকাল ৭টা পর্যন্ত নজরবন্দি থাকবেন অনুব্রত। ভিডিয়োগ্রাফির মাধ্যমে নজর রাখা হবে। এ ছাড়াও সব সময়ের সঙ্গী হয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং এগ্জিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট। কিন্তু সবার চোখকে ফাঁকি দিয়েই বুধবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ বাড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে বার হন অনুব্রত। তাঁর পিছনে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও কমিশনের গাড়িও যায়। তিনি প্রথমে নানুর ও পরে লাভপুরে দলীয় কার্যালয়ে যান। কিন্তু লাভপুরের কার্যালয় থেকে বার হওয়ার কিছু ক্ষণ পরেই রাস্তার মধ্যে অনুব্রতর গাড়ি গতি বাড়িয়ে বেরিয়ে যায় বলে খবর। রাস্তায় অন্য গাড়ি এসে পড়ায় আটকে যায় কমিশন ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর গাড়ি। তার পর থেকেই নাকি অনুব্রতর গাড়ি আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। দুপুর ২টো নাগাদ অনুব্রতর খোঁজ মেলে তারাপীঠ মন্দিরে। ফের শুরু হয় নজরবন্দি।
তবে ভোটের দিনের জন্য কোনও ঝুঁকি নিতে চায়নি কমিশন। বুধবার নতুন করে অনুব্রতকে নোটিস পাঠিয়ে কমিশন জানিয়েছে, নজরদারি মানতেই হবে তাঁকে। নজরদারি এড়িয়ে তিনি বাইরে যেতেই পারবেন না। তবে গোটা দিন তিনি নজরেই থাকবেন কি না অষ্টম দফার ভোটের দিনে নজর থাকবে সেই দিকে। তবে এখনও পর্যন্ত যা খবর তাতে অফিসে বসেই জেলার ভোটে নজর রাখতে চান তিনি।