ফুঁ দিয়ে খা: ভোটের লড়াইয়ে নেমেই সিনেমার মারহাব্বা ডায়ালগ দিয়েছেন— ‘‘মার গুড় দিয়ে রুটি, চিনি দিয়ে চা, ফুঁ দিয়ে খা!’’
নিতি নৃত্যে: নাচতে বরাবর ভালবাসেন। কেরিয়ারও শুরু হয়েছিল ২০১২ সালে রিয়্যালিটি শো ‘নাচ ধূম মচা লে’-তে। এরপর সায়ন্তিকা ‘টার্গেট’, ‘হ্যাংওভার’, ‘মনে পড়ে আজও সে দিন’-এর মতো ছবিতে কাজ করেছেন। এর বেশিরভাগই বক্স অফিসে ভাল ব্যবসা করেনি। তবে প্রতিটি ছবিতেই সায়ন্তিকার নাচ, যাকে বলে সুপারহিট! বাঁকুড়ার মানুষও নাকি সায়ন্তিকার নাচে মুগ্ধ। প্রচারে বেরিয়ে গনগনে রোদেও বাঁকুড়ার মেঠো সুরে ধামসা-মাদলের তালে নেচে উঠছেন। বোঝাতে চাইছেন, আমি তোমাদেরই লোক। সেই থেকেই সায়ন্তিকার দৃঢ় বিশ্বাস, বাঁকুড়ার মানুষ ভোটটা তাঁকেই দেবেন।
বাঁকুড়ার ঘোড়া: বাঁকুড়া-বিষ্ণুপুরের পোড়ামাটির ঘোড়া জগদ্বিখ্যাত। সেই বাঁকুড়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ঘোড়া’ সায়ন্তিকা। পোড়ামাটির মতো টেকসই হবেন কি না, তা অবশ্য ভবিষ্যৎ বলবে। এমনিতে অবশ্য বাঁকুড়ার সঙ্গে সায়ন্তিকার তেমন কোনও সম্পর্ক নেই। তবে ‘মাচা’ করতে যাওয়ার সুবাদে জায়গাটা ভাল ভাবে চেনেন।
আওয়ারা হুঁ: ২০১২ সালে জিৎ-এর বিপরীতে ‘আওয়ারা’ ছবিতে অভিনয় সায়ন্তিকার কেরিয়ারের একটা মাইলফলক। তার পর থেকেই বদলাতে থাকে তাঁর কেরিয়ারের লেখচিত্র। ‘বিন্দাস’, ‘হিরোগিরি’, ‘অভিমান’, ‘ব্যোমকেশ পর্ব’-এর মতো একাধিক ছবিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
বাঘিনী বন্দি: সায়ন্তিকার শেষ অভিনয় ২০১৮ সালে হরনাথ চক্রবর্তী পরিচালিত ‘বাঘবন্দি খেলা’ ছবিতে। তবে ২০১৯ সালে রাজ চক্রবর্তী পরিচালিত ‘শেষ থেকে শুরু’ ছবিতে একটি আইটেম সংয়েও দেখা গিয়েছিল তাঁকে। এখন সেই আইটেম সংয়ের পরিচালক এবং নাচিয়ে অভিনেত্রী— দু’জনেই রাজনীতির আইটেম। বিধানসভা ভোটে ভাগ্যপরীক্ষায় নেমেছেন। ঘটনাচক্রে, একই দলের হয়ে অবশ্য। শুরু থেকে শুরু।
গুলাব গ্যাং: টলিউডের ছবিতে নিয়মিত অভিনয় করার সময় মিমি চক্রবর্তী, নুসরত জাহান, তনুশ্রী চক্রবর্তীর সঙ্গে সায়ন্তিকার বন্ধুত্ব টলিপাড়ায় বেজায় চর্চার বিষয় ছিল। অনেকেই তাঁদের বলিউডের নারীকেন্দ্রিক ছবির আদলে ‘গুলাব গ্যাং’ বলে ডাকতেন। সেই গ্যাংয়ের বাকি দু’জনের রং আগেই গোলাপি থেকে সবুজ হয়েছে। মিমি এবং নুসরত এখন জনপ্রতিনিধি। সাংসদ। এবার সায়ন্তিকারও রং-বদলে সেই সবুজই হল। তবে গ্যাংয়ের চতুর্থ সদস্য তনুশ্রী গিয়েছেন গেরুয়া শিবিরে। সে গ্যাং-ও আর নেই। এখন নাকি পরস্পরের সঙ্গে আর কথাও হয় না! তাই? সায়ন্তিকা বলেন, ‘‘হ্যাঁ। প্রত্যেকেরই কোনও না কোনও ব্যক্তিগত কারণ ছিল। কারও ব্যস্ততা, কেউ সময় দিতে পারেনি, কারও সঙ্গে কারও মনোমালিন্য হয়েছে...। কী কী কারণে আমাদের সম্পর্ক ভেঙেছে, তা নিয়ে যদি আমরা সকলে পরস্পরের সঙ্গে কথা বলি, তা হলেও কি পরিস্থিতি বদলাবে? সমস্যার সমাধান আমাদের কাছেই থাকে। সেটা অন্য কেউ বলে দিতে পারে না।’’
জয় গুরু: সায়ন্তিকা ভগবানে বিশ্বাস করেন কি? কেউ সে ভাবে জানেন না। ভোটযুদ্ধের প্রচার অবশ্য দুর্গামন্দিরে পুজো দিয়ে শুরু করেছেন। তবে তিনি ঘোরতর ভাবে ‘গুরু’তে বিশ্বাসী। গুরুর আদেশ একটাই— শরীরের যত্ন নিতে হবে। প্রচণ্ড ফিট থাকতে হবে। সেই আদেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেন সায়ন্তিকা। সূর্য নমস্কার দিয়ে দিন শুরু। তার পর ঘণ্টায় ঘণ্টায় নির্দিষ্ট ব্যায়াম। রাতে গুরুর নির্দেশমতো খাওয়াদাওয়া। গুরুর নামও গুরু। গুরুপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন চাকুরে। বেজায় হ্যান্ডসাম। রাজ্যপালের পাইলট ছিলেন। চোখে এভিয়েটর সানগ্লাস লাগালে যৌবনে সিলভেস্টার স্ট্যালোন। নিজে ব্যায়ামবীর এবং জিমের মালিক। তিনি সায়ন্তিকার গুরু। সায়ন্তিকার বাবাও বটে। তবে গুরুর পাশাপাশি এক ঈশ্বরের নামেও ভরসা আছে সায়ন্তিকার। বিষ্ণু। শোনা যায়, প্রশিক্ষক বিষ্ণুর কাছে দীর্ঘদিন শরীরচর্চার তালিম নিয়েছেন তিনি।
এনজয় গুরু: সায়ন্তিকার ব্যক্তিগত জীবন একেবারেই নিস্তরঙ্গ এবং একঘেয়ে নয়। সহ-অভিনেতা জয় মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। তবে দীর্ঘ আট বছরের প্রেম ভেঙে গিয়েছে ২০১৮ সালে। জয়ের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগও এনেছিলেন সায়ন্তিকা। তবে এখন জয় নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বলেন, এখনও তাঁরা ‘বন্ধু’।
নেইরাজ্য: নিজের নামে কোনও জমি নেই। বাড়ি-টাড়িও নেই। সল্টলেকের লাবণি এস্টেটে বাবার ফ্ল্যাটেই থাকেন। মোট আটটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে তাঁর। তার মধ্যে তিনটি যৌথ অ্যাকাউন্ট। আটটির মধ্যএ চারটি অ্যাকাউন্টে ব্যালান্সের পরিমাণ? শূন্য! হাতে আপাতত নগদ ৪৩,১২৭ টাকা। অন্তত তাঁর হলফনামায় এমনই তথ্য দেওয়া রয়েছে।
বাসাবদল: বাঁকুড়ায় ভোট লড়তে গিয়ে প্রথমে একটি হোটেলে উঠেছিলেন। তবে এখন স্থানীয় একটি আবাসনে থাকছেন। অভিনেত্রী থেকে রাজনীতিবিদ হতে হবে তো! দূরের থেকে কাছের হতে হবে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্নাতক। ফলে রাজনীতি সম্পর্কে একটা প্রাথমিক ধারণা তো রয়েছে নিশ্চয়ই। ২০০৮ সালে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্নাতক ডিগ্রিধারী সায়ন্তিকা। কলেজের পাট চুকনোর দীর্ঘ ১৩ বছর পর ফলিত স্তরে রাজনীতির ময়দানে এসে পড়েছেন।
কিস্সা কুর্সি কা: বাঁকুড়ায় যে আবাসনে থাকছেন, জনসংযোগ বাড়াতে সেখানে মহিলাদের নিয়ে মিউজিক্যাল চেয়ার খেলছেন সায়ন্তিকা। তার সঙ্গে খেলতে পেরে আশপাশের মহিলারা বেজায় খুশি। সায়ন্তিকা জানেন, রাজনীতির খেলাটা আসলে চেয়ারের। যার কাছে চেয়ার আছে, তিনিই চেয়ারম্যান। থুড়ি, চেয়ারপার্সন।
ঋণং কৃত্বা: হলফনামা বলছে, বাজারে দেনা প্রায় ৪১ লক্ষ টাকা। কিন্তু তাতে কী! ২০১৮ সালে সাড়ে ৪৩ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি মার্সে়ডিজ গাড়ি কিনেছেন। সে বাবদে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে তাঁর গাড়ি-ঋণ প্রায় ২০ লক্ষ টাকা।
পেট না পেটারা: শরীরের যত্ন নেন ঠিকই। কিন্তু পেট নিয়ে কোনও মায়াদয়া নেই। যা পান, তাই খান। তেল কম, নুন কমের কোনও ভাবনা নেই। রবিবার দিন শুরু করেন কী দিয়ে? বিরিয়ানি! সকাল সকালই নাকি বিরিয়ানির থালা নিয়ে বসে পড়েন!
টিং টিং টি-টিং: শরীরচর্চা, নাচ আর অভিনয়ের পাশাপাশি গিটারও বাজান। বছর দুয়েক ধরে শিখছেন। সুযোগ পেলেই গিটারে টুং-টাং করতে বসে পড়েন। গিটার বাজানোর ভিডিয়ো তোলেন নেটমাধ্যমে। ব্যস, হু-হু করে লাইকের ঝড়।
ব্লো হট ব্লো কোল্ড: গরমে হটপ্যান্টই প্রিয়। কিন্তু লালমাটির বাঁকুড়ায় ভোট লড়তে গেলে কি আর সে সব পরা চলে! তাই প্রার্থী হওয়ার পর থেকে সালোয়ার-কামিজ-ওড়না ছাড়া বাইরে বেরোচ্ছেন না। দিদির পছন্দের রং নীল-সাদা। কিন্তু সায়ন্তিকার পছন্দ সাদা-কালো। ভোটের প্রচারেরও বেশির ভাগ সময় সাদাই পরছেন।
পোষ্যপ্রেম: বাড়িতে একাধিক চারপেয়ে সন্তান রয়েছে। আদর করে বাহারি নামও রেখেছেন। মাঝেমধ্যেই সায়ন্তিকার ইনস্টাগ্রামের দেওয়ালে ভেসে ওঠে তাদের ছবি।
তথ্য: স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়, রেখাচিত্র: সুমন চৌধুরী