বাংলা নিজের বাংলা চায়: কলকাতার অভিজাত ইংরেজি মিডিয়ামের ছাত্রী। মুখে অনর্গল ইংরেজি। কিন্তু মেদিনীপুরের গ্রামে টানা বাংলায় কথা বলছেন। চেষ্টা করছেন, একটিও ইংরেজি শব্দ মুখ থেকে না বেরোয়। হাজার হোক, বাংলা তো নিজের বাংলাই চায়।
বাংলা নিজের মেয়েকেও চায়: পাশ্চাত্য পোশাকে তিনি অনায়াস। কিন্তু এসব সেসব পরলে বিপদ আছে! এখন বাড়ি-বাড়ি যাওয়ার সময় তাঁর পরিধেয় খাদির সাদামাঠা শাড়ি। কপালে টিপ। মাথায় ধরা তৃণমূল-ছাপ তেরঙা গার্ডেন আমব্রেলা। হুডখোলা জিপে দাঁড়িয়ে প্রচার করছেন অবিরাম। আপাতত প্রত্যন্ত গঞ্জে ধুলোয় মাখামাখি তিনি।
ভিত্তি মেদিনী: প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণীর পড়াশোনা অবিভক্ত মেদিনীপুরে। ফলে মেদিনীপুরের মেদিনীতে শিকড়়বাকড়ের ইতিহাস রয়েছে। আপাতত মেদিনীপুরেই রাত্রিবাস।
স্থানীয়দের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালই লাগছে।
জীবন খাতা: প্রতিটি পাতাই খোলা। আসলে খাপখোলা। তলোয়ারের মতো। সম্পর্ক সম্পর্কে আনখশির সৎ মানুষ বলে টালিগঞ্জে পরিচিত। নিজের শর্তে জীবনে বেঁচেছেন। টানা ‘লিভ ইন’ সম্পর্কে থেকেছেন। লুকোছাপা করেননি। মাথা উঁচু করে বেঁচেছেন। এখনও বাঁচেন।
লড়াই-লড়াই-লড়াই চাই: ভোটের লড়াইয়ের আগে ব্যক্তিগত জীবনেও লড়াই করেছেন। জিতেছেন। খুব ছোটবেলায় প্রথম বিয়ে। ছেলে আর মেয়ে, শিবাঙ্গী ও শিবেন্দ্রকে নিয়ে ভরা সংসার। কিন্তু ক্রমশ মতের অমিল হতে থাকায় একসঙ্গে থাকা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। দুই সন্তানকে নিয়ে সংসার ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। তার পর শুরু হয় জীবনের লড়াই। বাবার মৃত্যুতে জীবনযুদ্ধ আরও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু হার মানেননি। মাথা উঁচু করে লড়াই করেছেন। সঙ্কটসময় কাটিয়ে উঠে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। মা এবং দুই সন্তানের দেখভাল করেছেন। তার সঙ্গে পেশাও সামলেছেন একাহাতে।
বিক্রম বে-তাল: মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার যুদ্ধে নাচ ছিল তাঁর আরও এক জীবন। সেই ছন্দের সূত্রেই বিখ্যাত তালবাদ্য বাদকের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক। জীবনে ছন্দ এসেছিল প্রবল বিক্রমে। কিন্তু সে সম্পর্ক টেকেনি। তাল কেটেছিল পথিমধ্যে। কিন্তু তিক্ততা হয়নি। দু’জনে দু’জনের জীবনের আলাদা পথে এগিয়ে গিয়েছেন।
সৌরভ গৌরব: দীর্ঘদিনের বন্ধু সৌরভ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন ২০১৯ সালে। নতুন করে দ্বৈতজীবনে প্রবেশ। বিয়ের পর জন্মদিন থেকে বিয়ের বর্যপূর্তি পালন করেন মহা সমারোহে। কে বলে প্রেম একবারই আসে নীরবে! জুন বলতে পারেন, ‘‘এসেছো প্রেম এসেছো আজ কী মহা সমারোহে!’’
দ্বিতীয় প্রেম: রাজনীতি। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলে আনুষ্ঠানিক যোগ। দিদির সঙ্গে দীর্ঘ সুসম্পর্ক তো বটেই। সেই সূত্রেই তৃণমূলের প্রার্থী। তা ছাড়া, ছেলে-মেয়ে এখন স্বাবলম্বী। তাই বাংলার মানুষের জন্য কিছু করার সময় এসেছে মনে করছেন।
প্রথম প্রেম: প্রার্থী হওয়ার আগে থেকেই রাজ্য নারী ও শিশুকল্যাণ বিভাগের সদস্য হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে মানুষের সঙ্গে কাজ করে আসছেন। তবে তা নিয়ে প্রচার বা বড়াই করার পথে হাঁটেননি কখনও। নীরবেই নিজের কাজটা করেছেন। রাজনীতির আগে মানবনীতির পাঠ নিয়েছেন একান্তে।
কালা চশমা: ভোটের প্রচারে সকাল থেকে রাত হচ্ছে। দিনে ১২-১৪ ঘণ্টা করে প্রচার। ঝলসে যাওয়া আগুনে রোদ। তবে কোনও সমস্যা হচ্ছে না। ভরসা কালো চশমা।
মৌরিগ্রাম: সঙ্গে থাকছে মৌরির কোটো। মৌরি তাঁর নিত্যসঙ্গী। প্রচারে বেরিয়ে অনুরোধে বিভিন্ন জায়গায় চা এবং টুকটাক খেতে হচ্ছে বটে। কিন্তু তার পর মুখশুদ্ধি হিসেবে মৌরি বাঁধা।
চিংড়ি-মালাই: প্রচারে ব্যস্ত অভিনেত্রী তাঁর রান্নার নেশা আপাতত শিকেয় তুলে রেখেছেন। তবে এ বারেও বরের জন্মদিনে নিজের হাতে রান্না করে অতিথিদের গলদা চিংড়ির মালাইকারি খাওয়াবেন।
বুদ্ধং শরণং: সব ঈশ্বরেই ভরসা। তবে বৌদ্ধধর্মের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ তাঁর। প্রধান কারণ—নৈঃশব্দ্য। মন্দিরে ঈশ্বরের সঙ্গে একাত্ম হতে চান জুন। ভরসা নীরবতা।
তথ্য: স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়। রেখাচিত্র: সুমন চৌধুরী