নিমপুরার এক বুথে দেখা হতেই হাত মেলালেন দুই প্রার্থী। ছবি: কিংশুক আইচ।
এ যেন দুই অভিনেতার বাস্তবের বিধায়ক হওয়ার চিত্রনাট্য।
একজন মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ‘বায়োপিক’-এ নিজের চরিত্রেই অভিনয় করেছেন। তিনি রেলশহরের বিধায়ক তথা তৃণমূল প্রার্থী প্রদীপ সরকার। অপরজন একাধিক বাংলা ছবির রুপোলি পর্দার নায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়। আসন পুনরুদ্ধারে বিজেপি এ বার তাঁকে রেলশহরে প্রার্থী করেছে। বৃহস্পতিবার খড়্গপুর সদর কেন্দ্রে হাড্ডাহাড্ডির লড়াইয়ের মধ্যেই শেষবেলায় দুই প্রার্থীর সৌজন্য নজর কেড়েছে শহরবাসীর।
দিনের শুরুতে অবশ্য ছিল দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর রাজনৈতিক লড়াই । নির্বাচন শেষে তৃণমূল প্রার্থী অবশ্য বলেছেন, “নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলব না। বিভিন্ন বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী রীতিমতো বিজেপির হয়ে কাজ করেছে। এমনকি কয়েকটি ওয়ার্ডে আমাদের ছেলেদের উপর কেন্দ্রীয় বাহিনী লাঠিচার্য করেছে। আমাকে বুথে ঢুকতে দেয়নি।” অবশ্য প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী বলেন, “আগের রাত থেকে সন্ত্রাস তৈরি করেছিল। কিন্তু নির্বাচনের দিনে মানুষ যে ভাবে ভোট দিয়েছে, তাতে বোঝা গেল মানুষ এই সন্ত্রাসের প্রতিবাদ জানিয়েছে। আমি তো দেখেছি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে।”
এ দিন সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে কালীমন্দিরে পুজো দেওয়ার পর যেখানেই গন্ডগোল বুঝেছেন, ছুটে গিয়েছেন প্রদীপ। এক সময়ে শহরের সিএমই গেটে সিস্টেম টেকনিক্যাল স্কুলের তিনটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী ভোটারদের বিজেপির হয়ে ভোট দিতে বলছে বলে অভিযোগ ওঠে। সেখানে বুথে ঢুকতে বাধা দেওয়ায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে বাক্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন প্রদীপ। নিজের ভোটদানের পরেই হিতকারিণী হাইস্কুলে ভোট দিতে এসে বিজেপির কর্মীর হাতে এক রেলকর্মী ভোটার প্রহৃত হওয়ার অভিযোগ পেয়ে প্রদীপ থানায় যান। একই ভাবে এ দিন সকালে শহরের চাঁদনিচক দুর্গামন্দিরে পুজো দিয়ে তালবাগিচা থেকে শহরের একাধিক ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ঘোরেন হিরণ। পুরভবনের ভোট কেন্দ্রে তৃণমূলের শহর সভাপতি রবিশঙ্কর পাণ্ডেকে দেখে প্রণাম করেন হিরণ। তাঁর কথায়, “আগামী দিনে পথ দেখাবেন।”
দুপুরে সাংসদ কার্যালয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম সেরে ফের হিরণ সদলবলে পৌঁছন নিমপুরার কুষ্ঠ কলোনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রে। সেখানে বুথের সামনে ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান তোলে শতাধিক বিজেপি কর্মী। এই ঘটনার খবর পেয়েই ছুটে এসে কেন্দ্রীয় বাহিনী বিজেপির এমন জমায়েতে প্রশ্রয় কেন দিচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তৃণমূল প্রার্থী। সেই সময় মুখোমুখি হয়ে করমর্দন করেন হিরণ-প্রদীপ। হিরণ বলেন, “ভালই হল আপনার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল।” প্রদীপ বলেন, “আবার দেখা হবে। জয় পরাজয় বড় কথা নয়। যেন দু’জনে মানুষের জন্য কাজ করতে পারি।” প্রত্যুত্তরে হিরণ বলেন, “একদম।” কিন্তু বুথের সামনে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রদীপ। হাসিমুখে হিরণ জবাব দেন, “নিষেধ করলেও ওঁরা শুনছে না। কেউ যদি আবেগে জয় শ্রীরাম বলে আমি কী করব!” অদূরে নিমপুরা আদর্শ হিন্দি প্রাথমিকের বুথে তখন ছিলেন সাধারণ পর্যবেক্ষক নিতিশ ছাবড়া। তাঁর নির্দেশে বিজেপি কর্মীদের কয়েকজনের বাইক আটক করেন এসডিপিও।