নিজস্ব চিত্র
বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরে কলকাতা-সহ জেলায় জেলায় বিজেপি কর্মীরা আক্রান্ত বলে দাবি গেরুয়া শিবিরের। বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবরও আসছে। তবে বিজেপি-র দাবি, সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দলের ৬ কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়াও কর্মীদের বাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে বলেও সোমবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক করে দাবি করেছেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
দিলীপ বলেন, ‘‘আমাদের কাছে যেটুকু খবর আসছে সেটাই ভয়ঙ্কর।’’ এ নিয়ে রাজ্যপাল, নির্বাচন কমিশন থেকে রাজ্যের মুখ্যসচিব সকলেরই কাছেই দরবার করেছে বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু এতে সন্তুষ্ট নন, বিজেপি কর্মীরা। তাঁদের অনেকের অভিযোগ, হেরে যাওয়ার পরে অনেক নেতাই আর ফোন ধরছেন না।
তবে কোন এলাকায় কারা আক্রান্ত তা জানতে উদ্যোগী হয়েছে বিজেপি। কর্মীদের জন্য একটি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ পাঠানো হয়েছে। যদিও তা বিজেপি-র পক্ষে যে পাঠানো হয়েছে তার উল্লেখ নেই। সেই মেসেজে কোন ফরম্যাটে নিজেদের আক্রান্ত হওয়ার খবর, ছবি ও ভিডিয়ো পাঠাতে হবে বলে জানানো হয়েছে।
শুধু বিজেপি নয়, উদ্যোগী হয়েছে আরএসএস-ও। সঙ্ঘের নেতা বিদ্যুৎ মুখোপাধ্যায়ের নাম লেখা ওই মেসেজে কী ভাবে সাবধানে থাকতে হবে তার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বলা হয়েছে কী ভাবে কোথায় অভিযোগ জানাতে হবে। কিন্তু সেখানে কর্মীরা বিপদে পড়লে কোথায় যোগাযোগ করবেন এমন কোনও ফোন নম্বরের উল্লেখ নেই। রাজ্য বিজেপি অবশ্য দলের ৫টি সাংগঠনিক জোনের জন্য আলাদা আলাদা ফোন নম্বর দিয়েছে কর্মীদের জন্য।
এই মেসেজ নিয়ে কর্মীরা যে ক্ষুব্ধ, তা মানছেন রাজ্য নেতারাও। রাজ্য বিজেপি-র এক নেতার বক্তব্য, ‘‘এই মেসেজ পাঠানো নিয়ে দলেই দ্বিমত রয়েছে। কিন্তু এর বাইরে কিছুই করার নেই। ব্যক্তিগত ভাবে অনেকে আমায় জানিয়েছেন যে, অনেকেই ঘরছাড়া হয়ে রয়েছেন। থানায় গিয়ে অভিযোগ জানানোর উপায়ও নেই। অনেকে আবার বাড়ি থেকে বেরোতেই পারছেন না। তাদের পক্ষে মেসেজের নির্দেশ মতো ছবি, ভিডিয়ো পাঠানোও সম্ভব নয়।’’ এটুকুই নয়, বিজেপি কর্মীদের অনেকেই বিপদের সময়ে নেতাদের ফোন করে পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ওই নেতার বক্তব্য, ‘‘এটা ভুল অভিযোগ নয়। নেতারাও অনেক জায়গায় আক্রান্ত। ফলে তাঁরা অন্যদের পাশে দাঁড়ানোর জায়গায় নেই।’’
দিলীপ অবশ্য সোমবার বলেন, ‘‘যাঁরা জিতেছেন এবং যাঁরা হেরে গিয়েছেন তাঁদের সবাইকে এলাকায় থাকতে বলা হয়েছে। কর্মীদের পাশে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ তবে রাজ্য বিজেপি-র এক নেতার কথায়, ‘‘দিলীপদা যা বলেছেন সেটা ঠিক। কিন্তু রাজ্যের অনেক আসনেই প্রার্থী হয়েছিলেন বাইরে থেকে আসা নেতা। কেউ কেউ আবার মূল বাসিন্দা অন্য রাজ্যের। ফলে কর্মীরা অনেক জায়গাতেই যে কার্যত অনাথ হয়ে রয়েছেন, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।’’