প্রতীকী ছবি।
একের পরে এক সন্ত্রাসের ঘটনার জন্য এক সময়ে প্রায়ই সংবাদ-শিরোনামে উঠে আসত এলাকা। বোমাবাজি, অগ্নিকাণ্ড থেকে খুন-জখমের ঘটনায় অতিষ্ঠ ছিলেন বাসিন্দারা। মঙ্গলকোট এখন আর সে রকম সন্ত্রাস-দীর্ণ নেই, প্রচারে বেরিয়ে দাবি করছে বর্তমান শাসক দল। বিরোধীদের পাল্টা দাবি, এখন আমদানি হয়েছে‘লাগামছাড়া’ দুর্নীতির।
টানা বামেদের দখলে থাকা মঙ্গলকোটে ২০১১ সালে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয় সিপিএম-তৃণমূলে। সে বার সিপিএম প্রার্থী সাজাহান চৌধুরীর কাছে মাত্র ১২৬ ভোটে হেরে যান তৃণমূল প্রার্থী অপূর্ব চৌধুরী ওরফে অচল। ২০১৬ সালে অপূর্ববাবুকে আর টিকিট দেয়নি দল। তৃণমূলের সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর কাছে হেরে যান সিপিএমের সাজাহান। মন্ত্রীও হন সিদ্দিকুল্লা। কিন্তু তার পরে এলাকায় বিধায়কের অনুগামীদের সঙ্গে ব্লক তৃণমূল সভাপতি অপূর্ববাবুর গোষ্ঠীর ‘দ্বন্দ্ব’ বারবার প্রকাশ্যে এসেছে। এ বার ভোট ঘোষণার আগে এলাকায় দলের একাংশ অসহযোগিতা করেছে অভিযোগ তুলে মঙ্গলকোটে আর না দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা জানান সিদ্দিকুল্লা। দল এ বার ফের ভরসা রেখেছে অপূর্ববাবুর উপরেই।
বিজেপি এ বার মঙ্গলকোটে প্রার্থী করেছে দলের জেলা (কাটোয়া) সহ-সভাপতি রানাপ্রতাপ গোস্বামীকে। বছর ছয়েক আগেও তিনি ছিলেন তৃণমূলে। দল সূত্রের দাবি, অপূর্ববাবুর ‘কাছের লোক’ বলেও পরিচিত ছিলেন তিনি। কিন্তু নানা বিষয় নিয়ে ‘মতান্তরের’ জেরে তিনি দল পাল্টেছেন। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে তৃণমূল তিন বছর আগে বিধানসভা ভোটের তুলনায় প্রায় ৫ শতাংশ ভোট বাড়িয়ে ৫১ শতাংশে পৌঁছয়। তবে প্রায় ৩৭ শতাংশ ভোট পেয়ে, বামেদের সরিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে বিজেপি। সংযুক্ত মোর্চার তরফে এ বার সিপিএমের হয়ে লড়াইয়ে নেমেছেন প্রাক্তন বিধায়ক সাজাহান। লড়াই তাই এ বার বেশ কঠিন হবে, মনে করছেন নানা দলের কর্মীদের অনেকেই।
১৮টি পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত এই বিধানসভা কেন্দ্রের বাসিন্দা অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবী। এলাকা দিয়ে বয়ে গিয়েছে অজয় নদ। তার চর থেকে বালি তোলা নিয়ে রয়েছে নানা নালিশ। পশ্চিম মঙ্গলকোটে নানা জায়গায় বালিঘাট রয়েছে। সেখানে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বালি পাচার চলে বলে অভিযোগ। এলাকাবাসীর একাংশ ও বিরোধীদের দাবি, তাতে মদত রয়েছে শাসক দলের। যদিও তা মানতে নারাজ তৃণমূল নেতারা। এ ছাড়া, সিঙ্গত গ্রামীণ হাসপাতালের ‘বেহাল’ অবস্থা, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল বরাদ্দ হলেও এখনও তার কাজ শেষ না হওয়া, শোলাশিল্পীদের অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে এলাকায়।
তবে সে সব ছাপিয়ে নেতা-প্রার্থীদের কথায় উঠে আসছে সন্ত্রাস ও দুর্নীতির প্রসঙ্গ। বিজেপি প্রার্থী রানাপ্রতাপবাবুর দাবি, ‘‘সিপিএমের আমলে খুন-জখম ছিল নিত্য ঘটনা। আর এখন শুধুই কাটমানি। মানুষ এ বার প্রকৃত পরিবর্তন আনতে আমাদের ভোট দেবেন। যেখানেই যাচ্ছি, প্রচুর সমর্থন পাচ্ছি।’’ তাঁদের সরকারের আমলে সন্ত্রাসের অভিযোগ অবশ্য মানতে নারাজ সিপিএম প্রার্থী সাজাহান। তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘উন্নয়নের কথা বলে তৃণমূল নেতারা শুধু পকেট ভরেছেন। আর বিজেপি বিভাজনের রাজনীতি আমদানি করেছে। মানুষ এ সব মানতে পারছেন না। আমি জিতব।’’
বাম আমলে ‘সন্ত্রাসের’ কথা তুলছেন তৃণমূলের অপূর্ববাবুও। তবে তাঁদের আমলে দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে তাঁর দাবি, ‘‘বিরোধীদের বক্তব্য নিয়ে চিন্তিত নই। কারণ, ওঁদের কোনও সংগঠনই নেই এলাকায়। আমাদের সরকারের উন্নয়ন এলাকার চেহারাই পাল্টে দিয়েছে। মানুষ সে দিকে তাকিয়েই ভোট দেবেন।’’