উদ্বেগ: ভোটকর্মীদের মধ্যে সরঞ্জাম বিলির সময়ে শিকেয় করোনা-বিধি। শুক্রবার, সল্টলেকে। নিজস্ব চিত্র।
ঘরপোড়া তো সিঁদুরে মেঘে ডরাবেই!
২০১৫ সালের পুর নির্বাচনের ভয়াবহ স্মৃতি ছ’বছর পরে আবার যেন হঠাৎ করে ফিরে এসেছে। দোকানে-বাজারে আড্ডা, আলোচনা— সবই চলছে। কিন্তু কোথাও যেন সে সবের মধ্যে একটা জড়তা কাজ করছে। বিধানসভা ভোটের আগের দিন এমনই ছবি দেখা গেল নজরে থাকা বিধানসভা কেন্দ্র বিধাননগরের সল্টলেক এলাকায়। যদিও অনেকে মনে করছেন, সেই পুর ভোটের দিনের আতঙ্কের সঙ্গে এ বার দোসর হয়েছে কোভিডের আচমকা ঊর্ধ্বমুখী লেখচিত্র।
সল্টলেকের বিভিন্ন ব্লকে এ দিন ঘোরাফেরা করতে করতেই নজরে এসেছে থমথমে পরিবেশ। আপাত ভাবে শান্তিপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত সল্টলেকে অবশ্য অতীতেও পুর ভোটে অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। ওই ভোটে ২০০০ সালে মাত্র একটি ওয়ার্ডের ব্যবধানে সল্টলেকে পুর নির্বাচন জিতেছিল সিপিএম। ভোট ঘিরে সল্টলেকের এফডি ব্লকে সে বার ব্যাপক বোমাবাজি হয়। তৃণমূল ও কংগ্রেস, দুই দলই সেই ঘটনার দায় চাপিয়েছিল শাসক দল সিপিএমের উপরে। ২০০৫ সালেও সল্টলেকের একটি ওয়ার্ডে ব্যাপক গোলমাল হয়। বুথের সামনে গিয়ে র্যাফের হাতে মার খান প্রয়াত দুই সিপিএম নেতা।
সেই সব ঘটনার কথা সল্টলেকের মধ্যবয়স্ক বাসিন্দারা এখনও মনে করতে পারেন। তবে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা সল্টলেকে ভোটের দিনের অশান্তি দেখেছিলেন ২০১৫ সালে। সে বার বড় গোলমাল হয় এবি-এসি, এফডি, এটিআই-সহ একাধিক ব্লকে। বিডি ব্লকে বোমা পড়ে। ইট ছোড়াছুড়ি হয়। এক জন ভোটারকে মাটিতে ফেলে মারধর করা হয়। বহিরাগত দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবে সে দিন বুথমুখী হতে পারেননি বাসিন্দাদের অনেকেই। মার খান এক নির্দল প্রার্থী। এফডি ব্লক এবং এটিআই বুথে দুষ্কৃতীদের আক্রমণের মুখে পড়ে সংবাদমাধ্যমও। যে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে বিধাননগরের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসুর ঘনিষ্ঠ লোকজনের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনাকে ‘অতি উৎসাহ’ বলে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়ান নিউ টাউনের তৎকালীন তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত, যিনি এ বার বিজেপির হয়ে বিধাননগর কেন্দ্রে দাঁড়িয়েছেন তাঁর বরাবরের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী সুজিতবাবুর বিরুদ্ধে।
সেই দ্বৈরথের আঁচ যেন শুক্রবার থেকেই লাগতে শুরু করেছে সল্টলেক-সহ বিধাননগর কেন্দ্রের অনেক জায়গায়। বাসিন্দাদের কথায়, ‘‘পরিবেশ থমথমে। গোলমালের আশঙ্কা রয়েছে।’’ এক দোকানদারের কথায়, ‘‘বিক্রিবাটা কম।’’ ভয়ে ভয়ে দুই প্রবীণ বললেন, ‘‘প্রচারে যে ভাবে বাগযুদ্ধ হয়েছে, তাতে কিছুটা চিন্তা তো রয়েছেই।’’
যদিও বিধাননগর কমিশনারেটের দাবি, পুলিশ তৈরি রয়েছে যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলায়। পুলিশের টহলদারি চলছে। গাড়ি পরীক্ষা ও নাকা তল্লাশি নিয়মিত হচ্ছে। নজরে রয়েছে বিভিন্ন অতিথিশালা এবং হোটেলও। কেন্দ্রীয় বাহিনী ও ভোটকর্মীরাও বুথে বুথে পৌঁছে গিয়েছেন। এ সব সত্ত্বেও কিন্তু গন্ডগোলের আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারছেন না অনেক বাসিন্দাই। অতীতের নির্বাচনে আক্রান্ত এক প্রৌঢ়ের কথায়, ‘‘আগের মতো অচেনা মুখ এ বার দেখা যাচ্ছে না। তবে যে রকম গোলমাল সে বার হয়েছিল, তাতে ভয় থাকাটাই স্বাভাবিক।’’
অবশ্য বিধাননগরের রাজনৈতিক মহলের ছবিটা এ দিন ছিল অন্য রকম। প্রচার শেষের পরে সকলেই ব্যস্ত ছিলেন ভোটপর্বের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিয়ে। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের কেউ কেউ বহিরাগতদের প্রবেশ, হুমকি কিংবা ভয় দেখানোর অভিযোগও করেছেন। যদিও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীদের একাংশের কথায়, ‘‘অনেকে অযথা ভয় পাচ্ছেন।’’ পাশাপাশি, কোনও পক্ষই যে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বে না, তার ইঙ্গিতও মিলেছে। তবে এ সবের পাশাপাশি বাসিন্দাদের মধ্যে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি নিয়েও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে অনেকেই প্রাতর্ভ্রমণ, সান্ধ্যভ্রমণ কমিয়ে দিয়েছেন।