জগন্নাথ সরকার। নিজস্ব চিত্র।
গন্ডগোলটা পাকছিল সকাল থেকেই। খবর পেয়ে এসে হাজির বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকার। গাড়ি থেকে নেমেই তিনি জুড়ে দিলেন চিৎকার, “কে হ্যাপি? কোথায় সে?”
তাঁর সঙ্গে তখন সংবাদ কর্মীদের ভিড়। তাঁদের দিকে তাকিয়ে জগন্নাথের অভিযোগ, “এই হ্যাপিই আমাদের কাউকে ভোট দিতে দিচ্ছে না। মেরেধরে ফিরিয়ে দিচ্ছে। পুলিশ, কেন্দ্রীয় বাহিনী কিছুই করছে না।” তার পর কোনও দিকে না তাকিয়ে হনহন করে তিনি হাঁটতে শুরু করলেন চাঁদকুড়ি গ্রামের দিকে।
পথে দেখা শান্তিপুর থানার ওসির সুমন দাসের সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী। তাঁকে দেখেই উত্তেজিত জগন্নাথ চিৎকার করে উঠলেন, “সকাল থেকে আমাদের লোকেদের মারধর করে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ কী করছে? সকাল থেকে এখানে দাঁড়িয়ে নকশা করছে?” চুপ করে থাকেন ওসি। জগন্নাথ আর না দাঁড়িয়ে হাঁটতে শুরু করেন। সঙ্গে তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা, পিছনে আধাসেনা।
হরিনদী গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৭১ নম্বর বুথ। এই বুথের ভোটার পাশের চাঁদকুড়ি গ্রামে প্রায় দু’শো ভোটার। বিজেপির দাবি, সকলেই তাদের ভোটার। সেই কারণে তৃণমূলের লোকজন রাস্তায় তাঁদের আটকে মারধর করে বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছে। ৭১ নম্বর বুথে বিজেপির পোলিং এজেন্টের বাড়িও ওই গ্রামে। তাঁকেও ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বিজেপির বুথ সভাপতি দেবু ঘোষকে মাঝপথেই মারধর করে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার পরেও দু’চার জন গ্রামবাসী ভোট দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাঁদেরও হুমকি দিয়ে মাঝরাস্তা থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জগন্নাথ হরিনদী পার হয়ে চাঁদকুড়ি গ্রামে ঢোকেন। গ্রামের মোড়ে তখন ভোটার কার্ড হাতে সন্ত্রস্ত জনতার ভিড়। জগন্নাথকে দেখে তাঁরা ‘জয়শ্রী রাম’ বলে চিৎকার জুড়ে দেন। তাঁদের আশ্বস্ত করে জগন্নাথ গ্রামের ভিতরে ঢোকেন। বেশ কয়েকটি বাড়িতে গিয়ে তিনি সবাইকে নির্ভয়ে ভোট দিতে যাওয়ার কথা বলেন। তার পরেও অনেকে জানান যে তাঁরা ভোট দিতে যাবেন না। কারণ ফেরার পথে মারধর করা হতে পারে। জগন্নাথ বলেন, “আমি আছি। দেখি, কে কী করে! আপনারা চলুন আমার সঙ্গে।” সঙ্গে করে কয়েক জনকে নিয়ে তিনি হাঁটা লাগান বুথের দিকে। সঙ্গে পোলিং এজেন্ট।
পথে আধাসেনার বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তোলেন জগন্নাথ। তাঁর অভিযোগ, এই এলাকার আধাসেনার সঙ্গে তৃণমূলের ‘সেটিং’ হয়ে গিয়েছে। তা না হলে কেন সব দেখেও চুপ থাকছে তারা? কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে কিছুটা তর্কাতর্কিতেও জড়িয়ে পড়েন তিনি। জগন্নাথের অভিযোগ, “কাল রাতে এই এলাকায় তৃণমূলের বাইক বাহিনী দাপিয়ে বেড়িয়েছে। আজ ভোট দিতে দিচ্ছে না। আমার পোলিং এজেন্টকে পর্যন্ত বুথে যেতে দেয়নি। কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকতে এটা কী করে হয়?”
খবর পেয়ে চলে এসেছেন পুলিশ পর্যবেক্ষক নওয়াল বাজাজ। তার সামনে কার্যত ক্ষোভে ফেটে পড়েন জগন্নাথ। প্রশ্ন তোলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে। পুলিশ পর্যবেক্ষক বলেন, “চিন্তা নেই। প্রচুর বাহিনী আছে।” জগন্নাথ পাল্টা বলেন, “থেকে কী হবে? পলাশির যুদ্ধেও তো সিরাজের পক্ষে প্রচুর সেনা ছিল। কিন্তু তাদের ব্যবহার করা হয়নি। এখানেও তাই হচ্ছে।”
পরে পুলিশ পর্যবেক্ষক ফিরে গেলে জগন্নাথ দাবি করেন, “আমার কাছে পাকা খবর আছে যে শুক্রবার রাতে শান্তিপুরের একটি হোটেলে তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করেছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর অফিসাররা। এই পুলিশ পর্যবেক্ষকের ভূমিকা নিয়েও আমার প্রশ্ন আছ। আমি নির্বাচন কমিশনের কাছে ওঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করব।”
এসব করতে-করতে ঘণ্টাখানেক কেটে যায়। জগন্নাথের গাড়ি আবার ছুটতে থাকে। বাগআঁচড়া ছাড়িয়ে গয়েশপুরের দিকে যেতে-যেতে জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে জগন্নাথ বলেন, “এক লক্ষ ভোটে জিতব। মিলিয়ে নেবেন।”