দিলীপ ঘোষ। ফাইল ছবি।
রাজনীতিতে যোগ দিয়েই রাজ্য সভাপতি। বিজেপি-তে এমন নজির খুবই কম। আদতে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রচারক দিলীপ ঘোষ অতীতে অনেক সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করলেও মাত্র ৬ বছর আগে ২০১৫ সালে রাজনীতিতে পা রাখেন। ভরসা করেছিল সংগঠন। রাজ্য রাজনীতি সাক্ষী যে, সেই ভরসার মর্যাদা দিয়েছিলেন দিলীপ। প্রথম থেকেই তাঁর কথা ছিল, ‘‘যে জিততে পারে, সেই জেতাতে পারে।’’
এক বছরের মাথায় ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে যান খড়্গপুর সদর আসনে। দীর্ঘ সময় কংগ্রেসের হাতে থাকা আসনে জয় পাওয়াটা কম ছিল না। দক্ষিণবঙ্গে একটি আসনেই বিজেপি জিতেছিল। আর দিলীপের নেতৃত্বে গোটা রাজ্যে ৩টি আসন। সেই বিজেপি-কে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ১৮ আসনে (বিধানসভার নিরিখে ১২১) জয়ী করার পিছনে মোদী-হাওয়া বড় ভূমিকা নিলেও দিলীপের পরিশ্রমের কথা অস্বীকার করা যায় না। গোটা রাজ্যে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি নিজেও জিতেছেন মেদিনীপুর আসন থেকে। বারবার তাঁর গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। দার্জিলিং থেকে দাঁইহাট হেনস্থার শিকার হয়েছেন অনেক জায়গায়, অনেকবার। কিন্তু হাল না ছেড়ে বাংলার এ মাথা থেকে ও মাথা ছুটে বেড়ানো দিলীপ সেই একই পথে চলেছেন বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার পর্বেও।
দিলীপের উপরে ভরসা রেখে পর পর ৩ বার তাঁকে রাজ্য সভাপতি করেছে বিজেপি। যেটা সাধারণ ভাবে পদ্ম শিবির হয় না। কিন্তু শুধু বিজেপি-র ভরসার জবাব দেওয়াই নয়, দিলীপের কাছে বড় প্রত্যাশা সঙ্ঘ পরিবারেরও। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের বাংলায় আরএসএস-এর কাজেরও ৮০ বছর পূর্তি ২০২১ সালে। সেখানে দাঁড়িয়ে সঙ্ঘের প্রতিনিধি হিসেবে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য অনেক প্রত্যাশা দিলীপের কাছে। এই নীলবাড়ির লড়াইয়ের সময়েও দিলীপ শুনিয়েছেন ভরসার জবাব, প্রত্যাশা পূরণের জন্য তিনি দায়বদ্ধ। এবং সেটা তিনি করে দেখাবেন বলেও প্রত্যয় দেখিয়েছেন বারবার।
বিধানসভা নির্বাচনের ফল যে তাঁর জীবনের ফাইনাল পরীক্ষা সেটা দিলীপ নিজেই ঠিক করে দিয়েছেন। চাপিয়ে দেওয়া না হলেও প্রত্যাশার চাপ যে রয়েছে তা অবশ্য দিলীপ নিজেও অস্বীকার করতে পারবেন না। বিজেপি-তে যোগদানের পরে এই প্রথম কোনও নির্বাচন যেখানে তিনি প্রার্থী নন। প্রকাশ্যে পদ পাওয়ার বাসনার কথা না বললেও তাঁর ঘনিষ্ঠরা মনে করেন ‘দিলীপদা’-ই বিজেপি-র একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী মুখ। সেই চাপটাও কম নয়। সেই কারণেই হয়তো নিজেই নিজেকে হোমটাস্ক দিয়েছেন। পরীক্ষায় দল, আরএসএস ও নিজেকে পাশ করাতে ২৯৪ কেন্দ্রে প্রচারে গিয়েছেন। ঘনিষ্ঠরা যেটা চাইছেন সেটা হয়তো দিলীপেরও ‘দিল কী বাত’।