সিঙ্গুরে বিজেপির নির্দল প্রার্থীর দেওয়াল লিখন। ছবি: দীপঙ্কর দে
উত্তরপাড়া, তারকেশ্বরের পরে এ বার সিঙ্গুর। বিজেপির ‘নির্দল-কাঁটা’ বাড়ছে হুগলিতে।
দলীয় প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে মানতে না-পেরে সিঙ্গুরে নির্দল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন বিজেপির মণ্ডল সহ-সভাপতি গৌতম মোদক। তাঁর নামে দেওয়াল-লিখন শুরু হয়ে গিয়েছে রবিবার থেকে। গৌতমবাবু শীঘ্রই মনোনয়নও জমা দেবেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল জানিয়েছে। তারকেশ্বরে ‘নির্দল’ প্রার্থী হয়েছেন বিজেপি নেতা সুকুমার খাঁড়া। বিজেপির প্রার্থী-তালিকা প্রকাশের পরে উত্তরপাড়া কেন্দ্রে প্রথম ‘নির্দল’ হয়ে দাঁড়ান দলের প্রাক্তন জেলা সভানেত্রী কৃষ্ণা ভট্টাচার্য।
পরিস্থিতি যাতে হাতের বাইরে চলে না-যায়, সে জন্য নড়ে বসেছেন দলের জেলা নেতৃত্ব। তাঁরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ‘বিক্ষুব্ধ’দের বাগে আনার চেষ্টা শুরু করছেন। বিশেষ করে তাঁদের নজরে সিঙ্গুর। বিজেপির হুগলি (সদর) সাংগঠনিক জেলা সভাপতি গৌতম চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে। অনেকটাই মিটে গিয়েছে। যেটুকু সমস্যা আছে সোমবার আমি সিঙ্গুরে সকলের সঙ্গে বৈঠক করে মিটিয়ে দেব।’’ তারকেশ্বর নিয়ে দলের আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সহ-সভাপতি গণেশ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ভুল বোঝাবুঝি মেটানোর চেষ্টা করা হবে।’’
তবে, দলের জেলা নেতৃত্বেরই একাংশের আশঙ্কা, অন্তত সিঙ্গুরের ক্ষেত্রে প্রার্থী নিয়ে টানাপড়েন সহজে মেটার নয়। এখানে পরিস্থিতি জটিল। দলের জেলাস্তরের নেতা সঞ্জয় পাণ্ডের বাড়িতে গত শুক্রবার ভাঙচুর-লুটপাটের অভিযোগে আট ‘বিদ্রোহী’ নেতার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ পর্যন্ত দায়ের হয়ে গিয়েছে। এক ‘বিদ্রোহী’র উষ্মা, ‘‘দল এখনও রাজ্যে ক্ষমতায় আসেনি। তার আগেই নিজেদের লোকজনের উপর দমন-পীড়নের রাস্তা নেওয়া হচ্ছে। সে দিন হঠাৎ উত্তেজনার বশে ওই কাণ্ড অবশ্যই অনভিপ্রেত। তা বলে দলের নেতাই থানা-পুলিশ পর্যন্ত যাবেন, ভাবা যাচ্ছে না।’’ ‘নির্দল’ প্রার্থী গৌতমবাবুর খেদ, ‘‘যাতে আমরা নির্দল প্রার্থী দিতে না পারি, তাই অভিযোগ দায়ের হয়েছে। হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি ভাল, শিক্ষিত, ভদ্র ছেলেমেয়েরা কেন আজ রাজনীতিবিমুখ। এই পরিবেশে কে রাজনীতি করবে?’’ সিঙ্গুরে বিজেপির আহ্বায়ক সৌরেন পাত্রের ক্ষোভ, ‘‘আমরা দলের পুরনো কর্মী। বহু খেটে সিঙ্গুরে সংগঠন তৈরি করেছি। তাই লোকসভায় আমাদের প্রার্থী সিঙ্গুর থেকে জিতেছেন। কিন্তু আমাদের এ ভাবে প্রার্থী নিয়ে হেনস্থা হতে হচ্ছে? পুলিশ দেখানো হচ্ছে? ভাবা যায় না।’’
জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, ওই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে নানা মামলা থাকেই। আদালত থেকে জামিন পেয়ে গেলে সমস্যা নেই। কিন্তু কেউ বিষয়টাকে গুরুত্ব না দিলে আদালত থেকে ‘অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট’ বের হলে সমস্যা আছে।
উত্তরপাড়ার ‘নির্দল’ প্রার্থী কৃষ্ণাদেবী বলেন, ‘‘আমরা বহু কষ্ট, ত্যাগ স্বীকার করে দলকে এই জায়গায় এনেছি। আর সদ্য দলে যোগ দেওয়া একজনকে টিকিট দেওয়া হল?’’ তারকেশ্বর থেকে ‘নির্দল’ হয়ে দাঁড়ানো সুকুমার খাঁড়া বিজেপির টিকিটে ১৯৯৬ সালে লড়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে যারা সংগঠন করে আসছেন, তাঁদের সম্মান দেয়নি বিজেপি।’’