ফাইল চিত্র।
নানা জট কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত পঞ্চম দফার ভোটের আগে রাজ্যে প্রচারে আসছেন রাহুল গাঁধী। এই দফায় উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখর ও দার্জিলিং জেলার মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি কেন্দ্রে আগামী ১৪ এপ্রিল, বুধবার দু’টি সভা করার কথা প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতির। তার পরে অন্যান্য দফার ভোটের প্রচারেও রাহুলের বাংলায় আসার পরিকল্পনা রয়েছে। কোয়রান্টিন-পর্ব মিটলে বাংলায় প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাকেও প্রচারে নিয়ে আসতে চাইছে কংগ্রেস।
কেরলের ওয়েনাড় থেকে সাংসদ হওয়ার পরে এ বার বিধানসভা ভোটে ওই দক্ষিণী রাজ্যেই প্রচারে সব চেয়ে বেশি সময় দিয়েছেন রাহুল। কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউডিএফের হয়ে প্রচারে গিয়ে সে রাজ্যে ক্ষমতাসীন বামেদের কড়া ভাষায় আক্রমণও করেছেন তিনি। বাংলায় আবার কংগ্রেসের জোটসঙ্গী সেই বামেরাই। এ রাজ্যে প্রচারে এসে রাহুল বাম এবং সেই সঙ্গে তৃণমূলের প্রসঙ্গে কী অবস্থান নেন, সে দিকে নজর থাকবে রাজনৈতিক শিবিরের। বস্তুত, কেরলের কংগ্রেসের প্রবল আপত্তিতেই কলকাতায় জোটের ব্রিগেড সমাবেশে আসতে পারেননি রাহুল। তামিলনাড়ু, পুদুচেরি ও অসমে ভোটের প্রচারে গেলেও এত দিন বাংলায় পা দেননি তিনি। কেরলে ভোট-পর্ব মিটে যাওয়ার পরেই রাহুলের বাংলা সফরের কর্মসূচি ঠিক করা হয়েছে।
বাম সূত্রের ইঙ্গিত, উত্তরবঙ্গে রাহুল এলেও এই দফায় তাঁর মঞ্চে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের তেমন কাউকে না দেখা যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী ও বিদায়ী বিধায়ক শঙ্কর মালাকারের সমর্থনে রাহুলের সভায় সিপিএম নেতা ও শিলিগুড়ির প্রার্থী অশোক ভট্টাচার্যকে পাঠানো হতে পারে। এখনও পর্যন্ত যা ঠিক আছে, ওই দিন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীরও সভার সূচি রয়েছে মুর্শিদাবাদের লালগোলা এবং তার পরে উত্তর ২৪ পরগনার নোয়াপাড়া ও উত্তর দমদমে। কংগ্রেস সূত্রের খবর, পরবর্তী পর্যায়ের ভোটের আগে নোয়াপাড়ার মতো কেন্দ্র এবং অন্য দিকে মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রচারে আসতে পারেন রাহুল।
প্রথম দিকের জড়তা কাটিয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বও এখন নেমে পড়েছেন বাম নেতাদের সঙ্গে একত্রে প্রচারে। চৌরঙ্গি কেন্দ্রে রবিবারই কংগ্রেস প্রার্থী সন্তোষ পাঠকের সমর্থনে রোড-শো’য়ে ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরবাবু ও বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। পরে পানিহাটির কংগ্রেস প্রার্থী তাপস মজুমজারের সমর্থনে রোড-শো’য়ে অধীরবাবুর পাশে ছিলেন সিপিএমের যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। রোড-শো’র পরে কামারহাটিতে সেখানকার সিপিএম প্রার্থী সায়নদীপ মিত্র ও পানিহাটির কংগ্রেস প্রার্থীর জন্য সভাও করেছেন অধীরবাবু। আবার অশোকনগরে এ দিনই সংযুক্ত মোর্চার সভায় ছিলেন বিমানবাবু, কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান এবং আইএসএফের প্রধান পৃষ্ঠপোষক আব্বাস সিদ্দিকী।
জোটের গোড়া থেকে আইএসএফ-কে নিয়ে তেমন উৎসাহ ছিল না কংগ্রেসের। মালদহ, মুর্শিদাবাদে বারবার আইএসএফ দাবি করার পরেও তাদের কোনও আসন ছাড়েনি কংগ্রেস। কিন্তু এখন কংগ্রেস প্রার্থীরা সিপিএম মারফত অনুরোধ পাঠাচ্ছেন তাঁদের কেন্দ্রে আব্বাসকে নিয়ে সভা করার জন্য! দু’দিন আগেই বাদুড়িয়ায় কংগ্রেস প্রার্থী আব্দুস সাত্তারের সমর্থনে আব্বাসের সমাবেশে উপচে পড়া ভিড় দেখা গিয়েছে। হাওড়া ও হুগলিতেও কংগ্রেস প্রার্থীদের জন্য সভা করেছেন আব্বাস। এখন মালদহ ও মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসের কিছু কেন্দ্রে আইএসএফ প্রার্থী দাঁড় করানোর কথা বলায় ওই দুই জেলা থেকেও কংগ্রেস প্রার্থীরা আব্বাসের মাধ্যমে জোটের বার্তা দিতে চাইছেন। সিপিএমের পলিটবুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের মতে, ‘‘সংযুক্ত মোর্চার বক্তব্যে মানুষ যত সাড়া দিচ্ছেন, বিপদ দেখে বিজেপি নেতারা তত হুঙ্কার দিচ্ছেন। প্ররোচনা দিয়ে তৃণমূলও বিভাজনের রাজনীতিতেই পাল্টা মদত দিচ্ছে।’’