সিউড়িতে বাড়িতে ভোট দিলেন এক বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ভোটার। নিজস্ব চিত্র।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে বাড়িতেই আবদ্ধ থাকেন রোকাইয়া চৌধুরী। তাই বেশ কয়েক বছর আগেই ভোটাধিকার পেলেও সিউড়ির সোনাতোড়পাড়ার বাসিন্দা, বছর সাতাশের ওই তরুণী কখনও ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেননি। শুক্রবার বাড়িতে বসেই ভোট দিলেন রোকাইয়া।
অশক্ত শরীরে ভোটের লাইনে দাঁড়ানো কষ্টদায়ক ছিল দুবরাজপুরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের অশীতিপর বাসিন্দা পাঁচুগোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রমীলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে। সম্পর্কে তাঁরা দেওর-বৌদি। সেই কষ্ট এড়িয়ে শুক্রবার তাঁরাও ভোট দিলেন বাড়িতে বসে।
শুধু রোকাইয়া বা পাঁচুবাবুরা নন, জেলায় এ দিন নির্বাচন কমিশনের তরফে ভোটকর্মীরা ইচ্ছুক বহু প্রবীণ ও প্রতিবন্ধী ভোটারদের বাড়িতে পৌঁছে ভোট নিলেন। করোনা আবহে আশি ঊর্ধ্ব প্রবীণ এবং প্রতিবন্ধী (৪০ শতাংশের বেশি) ভোটারদের কষ্ট লাঘবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইচ্ছুক হলে তাঁরা বুথ পর্যন্ত না গিয়ে বাড়িতে বসেই তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন পোস্টাল ব্যালটে।
এই প্রথম বাড়িতে বসে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়ে রোকাইয়া খুশি। মেয়েকে প্রথম নাগরিক অধিকার প্রয়োগের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ দিয়েছেন রোকাইয়ার মা রওশনআরা চৌধুরী। কমিশনের উদ্যোগে খুশি পাঁচুগোপালবাবু ও প্রমীলাদেবীও। তাঁরা বলছেন, ‘‘অশক্ত শরীর তো বটেই, সব থেকে বড় সমস্যা করোনা সংক্রমণের জন্য ভোটের লাইনে দাঁড়ানোর ভয়। সেটা করতে হল না।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় ফর্ম (১২ডি) পূরণ করে সাড়ে ১২ হাজার ভোটার পোস্টাল ব্যালটে ভোটদানে সম্মতি জানিয়েছিলেন। পোস্টাল ব্যালট ছাপিয়ে সেই সব চিহ্নিত ভোটারের বাড়ি বাড়ি পৌঁছচ্ছেন ভোটকর্মীরা। সেই দলে রয়েছেন দুই ভোটকর্মী, এক জন মাইক্রো অবজার্ভার, কেন্দ্রীয় বাহিনীর ৪ জওয়ান ও পুলিশকর্মী, এক জন ভিডিয়োগ্রাফার থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পোলিং এজেন্টরা।
বীরভূমের অতিরিক্ত জেলাশাসক (ইলেকশন) সব্যসাচী সরকার জানান, জেলায় সাড়ে বারো হাজার এমন ভোটারের ভোট নেওয়ার জন্য ২০০টিরও বেশি টিম তৈরি হয়েছে। ধাপে ধাপে ২০ তারিখ পর্যন্ত টানা সকলের বাড়িতে গিয়ে ভোট নেওয়া হবে। প্রথমদিনের পোস্টাল ব্যালটে ভোট দান শান্তিপূর্ণ ভাবে হয়েছে।
দুবরাজপুরে বাড়িতে ভোট নিতে যাচ্ছেন ভোটকর্মীরা। নিজস্ব চিত্র।
ভোট শান্তিপূর্ণ হলেও একটা বিষয় ভাবনায় ফেলেছে ভোটকর্মী থেকে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা জওয়ানদের। কারণ, জেলার করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক আকার নিয়েছে। যাঁরা পোস্টাল ব্যালটে ভোটদানে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, দেখা যাচ্ছে তেমন ভোটারদের কেউ কেউ বা তাঁদের পরিবারে কেউ কোভিড আক্রান্ত। তাঁদের ভোট গ্রহণের ক্ষেত্রে কী ধরনের সতর্কতা নেওয়া যায়, তা নিয়ে ধন্দ তৈরি হয়েছে। কারণ এক একটি ভোট নিতে প্রায় ২০ মিনিট সময় লাগছে।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘যাঁদের ক্ষেত্রে এমন সমস্যা হচ্ছে অথবা বাড়িতে গিয়ে পাওয়া যাচ্ছে না, তাঁদের জন্য অন্য দিন রাখা হয়েছে। তেমন হলে পিপিই কিট পরে ভোট নেওয়া হবে।’’