আরামবাগ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তৃণমূল কর্মীকে দেখতে হাজির দিলীপ যাদব (বাঁ দিকে)। ফ্লেক্স ছেঁড়ার প্রতিবাদে বিজেপি কর্মীদের অবরোধ বাউড়িয়ায়। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ ও সুব্রত জানা
বাদ গেল না দোল উৎসব। ভোটের আবহে রবিবার দুই জেলার নানা জায়গায় রাজনৈতিক গোলমাল হল। মারধর, বাড়িতে হামলা, পতাকা-ফেস্টুন-ফ্লেক্স ছেঁড়ার অভিযোগ উঠল। রক্ত ঝরল।
পতাকা লাগানো নিয়ে গোলমালে রবিবার দুপুরে সিঙ্গুরের দিয়াড়া দুলেপাড়ায় দুই বিজেপি কর্মীকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। আহতদের সিঙ্গুর গ্ৰামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে তাঁদের দেখতে যান বিজেপি প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য-সহ স্থানীয় নেতারা। সিঙ্গুর থানায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে বিজেপির তরফে। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি।
বিজেপির অভিযোগ, দুপুরে দলের কর্মীরা পতাকা লাগাচ্ছিলেন। তৃণমূলের লোকেরা বাধা দেন। বচসার মধ্যে তৃণমূলের লোকেরা বাঁশ, লাঠি নিয়ে ঝন্টু মালিক ও কার্তিক মালিক নামে ওই দুই বিজেপি কর্মীর উপরে ঝাপিয়ে পড়ে। স্থানীয় মহিলারা প্রতিবাদ করলে হামলাকারীরা তাঁদের শ্লীলতাহানি করে বলেও বিজেপির অভিযোগ। বিজেপি নেতা সঞ্জয় পাণ্ডে বলেন, ‘‘দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক।’’ সিঙ্গুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি গোবিন্দ ধাড়ার দাবি, ‘‘কলে জল নেওয়াকে কেন্দ্র করে মারামারি হয়েছে। এতে রাজনীতির যোগ নেই।’’
সকালে গোঘাটের বেলেপাড়ায় পতাকা-ফেস্টুন ছেঁড়া নিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপির লোকেদের মধ্যে সংঘর্ষের উপক্রম হয়। দু’পক্ষই বাঁশ-লাঠি হাতে পরস্পরের দিকে তেড়ে যায়। স্থানীয় বিজেপি নেতা নারায়ণ মালিক এবং তৃণমূল নেতা কাশীনাথ মালিক মারমুখি লোকজনকে থামান।
দুপুরে খানাকুলের বালিপুরের গুছাইতপাড়ায় ভোট প্রচারে তৃণমূল ও বিজেপি কর্মীদের মধ্যে মারামারিতে দু’পক্ষের অন্তত ৭ জন জখম হন। তিন তৃণমূল নেতা-কর্মীকে বাঁশ ও লাঠিপেটার অভিযোগ ওঠে। তাঁদের মধ্যে শেখ মইনুদ্দিন আশঙ্কাজনক অবস্থায় আরামবাগ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দু’দলের ৬ জন আহতের প্রাথমিক চিকিৎসা হয়। পুলিশের দাবি, কোনও পক্ষই থানায় অভিযোগ দায়ের করেনি।
বালিপুরের গুছাইতপাড়া এলাকাটি পুরশুড়া বিধানসভায় পড়ে। আহত দলীয় কর্মীকে দেখতে হাসপাতালে যান তৃণমূল প্রার্থী দিলীপ যাদব। তাঁর অভিযোগ, দুপুরে বাড়ি ফেরার সময় বিজেপি পরিকল্পিত ভাবে হামলা চালায়। বিষয়টি পুলিশ এবং নির্বাচন কমিশনকে জানানো হচ্ছে। বিজেপি প্রার্থী বিমান ঘোষের দাবি, ‘‘ওরা আমাদের ছেলেদের উপরে হামলার চেষ্টা করলে গ্রামবাসীরা প্রতিরোধ করেছেন।’’ আরামবাগের হরহরে এলাকায় তৃণমূলের পতাকা ছেঁড়ার অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। উত্তেজনা প্রশমনে পুলিশ টহলদারির ব্যবস্থা করে।
শ্রীরামপুরের মাহেশ কলোনিতে বিজেপির দলীয় পতাকা ছেঁড়া এবং এক কর্মীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এক সমর্থকের বাড়িতে তৃণমূলের ছেলেরা চড়াও হয় বলেও অভিযোগ। ঘটনার পরে বিজেপি প্রার্থী কবীরশঙ্কর বসু সেখানে যান। তৃণমূল অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পান্ডুয়াতেও গোলমাল হয়।
রবিবার রাতে হাওড়ার উলুবেড়িয়া পূর্ব কেন্দ্রের বাউড়িয়া ফোর্ট গ্লস্টারে বিজেপি প্রার্থী প্রত্যুষ মণ্ডলের ফ্লেক্স-পতাকা ছিঁড়ে দেওয়া হয়। তৃণমূল এবং সংযুক্ত মোর্চা ওই কাণ্ড ঘটিয়েছে, এই অভিযোগে সোমবার সকালে পথ অবরোধ করে বিজেপি। অভিযোগ মানেনি তৃণমূল ও সংযুক্ত মোর্চা। রাতে উলুবেড়িয়া উত্তরের মাগুরখালিতে বিজেপি প্রার্থী চিরণ বেরার সমর্থনে লাগানো ফ্লেক্স ছেঁড়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এ ক্ষেত্রেও বিজেপি পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছে। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি।