প্রতীকী ছবি।
হুডখোলা গাড়িতে চেপে তারাঞ্চি এলাকার দিকে যাচ্ছেন ইটাহারের তৃণমূল প্রার্থী। চড়া রোদে মাটির রাস্তায় গাড়ির ধুলো উড়ছে। দুর্গাপুর এলাকায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে রাস্তাটি গ্রামের ভিতরে গিয়েছে। রাস্তার ধারে ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকা বাসিন্দাদের উদ্দেশে হাত নাড়ছেন মোশারফ হোসেন। কখনও নমস্কার করছেন। এক সময়ে মোশারফের গাড়ি থামল। গাড়ি থেকে নেমে হাঁটছেন, এক বৃদ্ধা এসে তাঁর গলায় গাঁদা ফুলের মালা পড়িয়ে দিলেন। মোশারফ বলেন, “মাসিমা এ বারের লড়াই খুব কঠিন। ইটাহারের উন্নয়ন ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে ঘাসফুল চিহ্নে ভোট দিয়ে আমাকে জেতান। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিনিধি হিসেবে ভোটে লড়ছি। আসল প্রার্থী কিন্তু দিদি।”
২০১১ ও ২০১৬ সালে দু’বার ইটাহার বিধানসভা কেন্দ্রে জয় পায় তৃণমূল। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ইটাহারের ১২টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১০টি পঞ্চায়েত দখল করে তারা। দু’টি বিজেপির দখলে যায়। লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রবল হাওয়ার মধ্যেও ইটাহার বিধানসভা কেন্দ্রে প্রায় ২৮ হাজার ভোটে লিড পায় তৃণমূল। ওই বিধানসভা কেন্দ্রে ৫২ শতাংশেরও বেশি সংখ্যালঘু ভোটার। সেই ভোট ব্যাঙ্কের দখল নিয়েই লড়াই। যার একাংশ তৃণমূলের দিকে বলেই দাবি।
ইটাহারের পরপর দু’বারের তৃণমূল বিধায়ক অমল আচার্যকে এ বার তৃণমূল টিকিট দেয়নি। যাকে টিকিট দিয়েছে সেই মোশারফ এক সময় অমলেরই ছায়াসঙ্গী ছিল। বর্তমানে জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষও। তরুণ নেতা। সেই ক্ষোভে প্রার্থী ঘোষণার মধ্যে উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি অমল তাঁর দলবল নিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। বিজেপি তাঁকে প্রার্থী না করলেও তাঁর নেতৃত্বেই তাদের প্রার্থী অমিতকুমার কুণ্ডু এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন।
মারনাইয়ে এক প্রচার সভায় অমল বলছেন, “পিকে ও ভাইপো মার্কা তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বকে আমি তিন থেকে চার কোটি টাকা দিতে পারিনি। তাই তৃণমূল আমাকে ইটাহারের প্রার্থী না করে সংখ্যালঘু তাস খেলেছে।” তিনি বলেন, ‘‘ইটাহারের সংখ্যালঘুরা আমার সঙ্গে বিজেপিতে এসেছেন। উন্নয়নের স্বার্থে ইটাহারে তাঁরা বিজেপিকে জেতাবেন।” তাই অমলের দিকে থাকা তৃণমূলের ভোট ধরে রাখাতেই মোশারফের নজর।
তা ছাড়া ইটাহারে প্রার্থী দিয়েছে এমআইএম। নাম মোফাক্কেরুল ইসলাম। সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী হিসেবে সিপিআইয়ের টিকিটে ইটাহার থেকে লড়ছেন শ্রীকুমার মুখোপাধ্যায়। মোশারফ বলেন, “ইটাহারের মানুষকে সচেতন করছি যাতে তৃণমূলের ভোট অন্যত্র না যায়। সংখ্যালঘুরা ভোটাররা ভোট কাটাকাটি করে বিজেপিকে সুবিধা করে দেবেন না। এলাকার উন্নয়ন ও সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে তৃণমূলের পাশে থাকার আশ্বাস দিচ্ছেন মানুষ।”
এমআইএম প্রার্থী মোফাক্কেরুল বাড়ি বাড়ি প্রচারের জোর দিয়েছেন। বলেন, “এনআরসি আটকাতে ইটাহারের ৯০ শতাংশ সংখ্যালঘু, রাজবংশী ও আদিবাসীরা আমাকে সমর্থন করেছেন। ইটাহারের খেলা তো এ বারে আমিই ঘোরাবো।” সিপিআই প্রার্থী শ্রীকুমার অতীতে ইটাহার থেকে তিন বার বিধায়ক হন। বাম আমলে মন্ত্রীও ছিলেন। রায়গঞ্জের বাসিন্দা হলেও ইটাহারের বিভিন্ন এলাকার মানুষের সঙ্গে তাঁরও যোগ রয়েছে। শ্রীকুমার বলেন, “তৃণমূল ও বিজেপি দু’দলই হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদ করে নির্বাচনে লড়ছে। তবে মানুষ এ বারে সাম্প্রদায়িক বিজেপি ও কাটমানির দল তৃণমূলকে ভোট দেবে না। সংযুক্ত মোর্চাই বিকল্প আমরা তা বোঝাচ্ছি।’’