সায়নী ঘোষ (তৃণমূল) , অগ্নিমিত্রা পাল (বিজেপি) এবং প্রশান্ত ঘোষ (সিপিএম) ।
তৃণমূলের ‘কাঁটা’ হতে পারে প্রার্থীর ‘বহিরাগত’ তকমাকে কেন্দ্র করে ‘কোন্দল’ এবং অবশ্যই লোকসভা ভোটের ফল। উল্টো দিকে, ‘ক্ষীণ’ হলেও বিজেপি ও সিপিএম প্রার্থীকে নিয়েও এলাকায় কিছু ‘অসন্তোষ’ রয়েছে। রয়েছে, নাগরিক নানা সমস্যার প্রসঙ্গও। চুম্বকে আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্র সম্পর্কে এমনই ধারণা, স্থানীয় রাজনীতির ওঠা-পড়ার নিয়মিত পর্যবেক্ষকদের একটা বড় অংশের।
২০১১-য় আসানসোল পুরসভার ২২টি ওয়ার্ড ও রানিগঞ্জের পাঁচটি পঞ্চায়েত নিয়ে এই কেন্দ্রটি তৈরি হয়েছে। শিল্প-কৃষি, দুই-ই আছে। এই কেন্দ্রে ২০১১-র ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে জেতে তৃণমূল। কিন্তু, ২০১৪-র লোকসভা ভোটে বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় প্রায় ২১ হাজার ভোটে ‘লিড’ পান। ২০১৬-র বিধানসভায় তৃণমূল আসনটি জিতলেও, তারা ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে বিজেপির থেকে প্রায় ৫৪ হাজার ভোটে পিছিয়ে পড়ে! এ বার এই কেন্দ্রে বিজেপি, তৃণমূল ও সিপিএম প্রার্থীরা যথাক্রমে, অগ্নিমিত্রা পাল, সায়নী ঘোষ ও প্রশান্ত ঘোষ।
তৃণমূলের একটি সূত্রের মতে, দলীয় ‘কোন্দল’ সামাল দিতেই অভিনেত্রী সায়নীকে প্রার্থী করা হয়েছে। কিন্তু প্রার্থী ঘোষণার পরেই বার্নপুর গ্রাম, আপার রোড, স্টেশন রোড-সহ নানা জায়গায় ‘বহিরাগত প্রার্থী চলবে না’, এই মর্মে স্লোগান দিয়ে সরব হন তৃণমূলের হিরাপুর ব্লক সভাপতি লক্ষ্মণ ঠাকুর ও ‘পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি’র রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্রের ‘অনুগামীদের’ একাংশ। তবে, গত এক মাসে লক্ষ্মণবাবুকে সায়নীর সঙ্গেই প্রচারে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এখনও অশোকবাবু বা তাঁর অনুগামীদের সায়নীর সঙ্গে প্রচারে দেখা যায়নি বলেই দাবি। এই পরিস্থিতিতে দলের সব অংশ সায়নীর সঙ্গে কতটা রয়েছেন, তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে তৃণমূলের অন্দরেই। যদিও, লক্ষ্মণবাবু ও অশোকবাবু কোনও দ্বন্দ্বের কথা স্বীকার করেননি। সায়নীরও প্রতিক্রিয়া, ‘‘কোথাও কোনও সমস্যা নেই। ভোটারেরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে ভোট দেবেন।’’
তৃণমূল প্রার্থী ‘বহিরাগত’, এই ‘গুঞ্জন’ যখন এলাকায়, তখন বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পাল মনে করাচ্ছেন, ‘‘আমার জন্ম বার্নপুরে। বাবা শিল্পাঞ্চলের বিশিষ্ট চিকিৎসক। ২৪ বছর আগে বিয়ের সূত্রে শহর ছাড়ি। কিন্তু আমি নিয়মিত আসানসোলে আসি।’’ তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মণ্ডল সভাপতি সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে বলেন, ‘‘এই কেন্দ্রে দলের সংগঠন বৃদ্ধিতে প্রার্থীর কোনও ভূমিকা নেই।’’ তবে প্রচারে দলের ওই অংশটিকেও দেখা যাচ্ছে বলেই দাবি এলাকাবাসীর একাংশের। ‘দল সঙ্ঘবদ্ধ’ জানিয়েও এই জল্পনা প্রসঙ্গে অবশ্য কোনও মন্তব্য করেননি অগ্নিমিত্রা। কিন্তু বিজেপির জেলা আহ্বায়ক শিবরাম বর্মনের প্রতিক্রিয়া, ‘‘দলের মহিলা মোর্চার রাজ্য নেত্রী হিসেবে অগ্নিমিত্রা এখানে বহু বার এসেছেন। মহিলাদের মধ্যে সংগঠন বিস্তারে তাঁর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।’’
এ দিকে, এই কেন্দ্রের বেশির ভাগ এলাকা শিল্পাঞ্চল। ফলে, শ্রমিক-ভোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সিপিএমের এরিয়া কমিটির এক যুব নেতার আক্ষেপ, ‘‘আমরা চেয়েছিলাম, এক জন শ্রমিক নেতাকে প্রার্থী করা হোক। কিন্তু যিনি প্রার্থী, তিনি শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নন।’’ পাশাপাশি, সিপিএম প্রার্থী প্রশান্তবাবুর জন্য দলীয় সংগঠনের ‘দুর্বলতা’ও একটি ‘মাইনাস পয়েন্ট’ বলে মনে করছেন এলাকার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। তবে প্রশান্তবাবুর মতে, ‘‘দল ও সংযুক্ত মোর্চার সকলেই প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। আমাদের সাংগঠনিক শক্তিও মোটেও কম নয়।’’ ‘শ্রমিক-নেতা’কে প্রার্থী করা নিয়ে যে তত্ত্ব, তা স্বীকার করেননি সিটুর জেলা সম্পাদক বংশগোপাল চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘আসানসোল দক্ষিণে অত্যন্ত শিক্ষিত ও দক্ষ এক জন কর্মীই আমাদের প্রার্থী। ফলে, দলের সবাই খুবই খুশি।’’
পাশাপাশি, জল, নিকাশি, কিছু ক্ষেত্রে বৃষ্টিতে জলমগ্ন হওয়ার মতো নাগরিক পরিষেবাগত সমস্যা রয়েছে এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দা রাজু পাসোয়ান, ফিরোজ কুরেশিরা জানান, নরসিংহবাঁধ, রহমতনগর, সুভাষপল্লির একাংশে পানীয় জল, শাস্ত্রীনগরে নিকাশি-সমস্যা প্রবল। তাঁদের আর্জি, ‘‘যে দলই জিতুক, সমস্যাগুলোর যেন সমাধান হয়।’’ প্রচারে নেমে কেন্দ্রীয় ‘অম্রুত’ প্রকল্পে জেলার জন্য ন’শো কোটি টাকা অনুদান দিলেও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ করছেন অগ্নিমিত্রা। পরিষেবার প্রশ্নে সরব সিপিএম-ও। তবে সায়নীর মতে, ‘‘নাগরিক সমস্যার কথা শুনেছি। তবে অনেক সমস্যা মিটে গিয়েছে। বাকিটাও দ্রুত মেটানোর জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।’’