গড়চুমুক পর্যটন কেন্দ্র। — নিজস্ব চিত্র।
উলুবেড়িয়ার গরুহাটা মোড় থেকে শ্যামপুরের আটান্ন গেট পর্যন্ত রাস্তা বেশ ঝাঁ চকচকে রাস্তা।
বীরশিবপুর থেকে বোয়ালিয়া পর্যন্ত রাস্তারও হাল ফিরেছে।
আটান্ন গেটে রয়েছে পর্যটনকেন্দ্র। এখানে তৈরি হয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা।
ধুলাসিমলা, বাগান্ডা, হাটগাছা, বোয়ালিয়ায় রাস্তার মোড়ে মোড়ে বসেছে হাইমাস্ট আলো।
এ সব দেখলে উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের গত পাঁচ বছরের পরিবর্তনটা বেশ চোখে পড়ে। শুধু কী তাই! এই বিধানসভা কেন্দ্রের হাটগাছা-১ পঞ্চায়েতে দামোদররকে ঘিরে মাছ চাষ হচ্ছে। তত্ত্বাবধানে আছে স্বনির্ভর গোষ্ঠী। বেশ কিছু ই-কমার্স সংস্থা ব্যবসা করছে উলুবেড়িয়ায়। তৈরি হয়েছে নামী সংস্থার খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কারখানা। বহু যুবকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। প্রায় প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুৎ এসেছে। কালীনগরে ১৪০০ কোটি টাকায় গঙ্গার জল শোধন করে পানীয় জলপ্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। তৈরি হয়েছে পাঁচটি কর্মতীর্থ। সেখানে বেকার যুবকদের স্টল নিয়ে ব্যবসা করার ব্যবস্থা হয়েছে।
উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের ৯টি এবং শ্যামপুর-১ ব্লকের ৪টি— এই ১৩টি পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত এই বিধানসভাকেন্দ্রে ৮০ শতাংশ গ্রামে ঢালাই রাস্তা তৈরি হয়েছে। উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের ধুলাসিমলা এবং শ্যামপুর-১ ব্লকের নবগ্রাম উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আধুনিকীকরণ হয়েছে। অসংখ্য অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র পরিণত হয়েছে ঝকঝকে শিশু আলয়ে। হয়েছে তাদের নিজস্ব ঘর।
এই বিধানসভা কেন্দ্রে শাসক দলের সাফল্য যদি এ সব হয়, তবে ‘কাঁটা’ও আছে। উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের মদাই গ্রামে রমরমিয়ে চলছে চোলাই মদের কারখানা। সেগুলি বন্ধ করা যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের জন্য নিজস্ব একটি কলেজের। তাঁদের বক্তব্য, উলুবেড়িয়া-১ এবং শ্যামপুর-১ ব্লকের প্রত্যন্ত এলাকার ছাত্রছাত্রীদের উলুবেড়িয়া কলেজে আসতে হয়। কিন্তু অনেকেই সেখানে ভর্তি হতে পারেন না। তখন তাঁদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন ব্যর্থ হয়ে যায়। নতুন একটি কলেজ হলে উচ্চশিক্ষার সমস্যা মেটে। কিন্তু সেই কলেজ আজও হয়নি।
বহু গ্রামে বাড়িতে বাড়িতে পানীয় জল যায়নি। ফলে, রাস্তার ধারে স্ট্যান্ড পোস্ট এবং নলকূপের উপরে চাপ পড়ে। গরমে আবার বহু নলকূপ বিগড়ে যায়। ফলে, সমস্যায় পড়েন গ্রামবাসী। বোয়ালিয়ায় দামোদরের উপরে একটি সেতুর দাবিও বহু বছর ধরে বাসিন্দারা করে আসছেন। তাঁদের বক্তব্য, সেতু হলে উলুবেড়িয়ার সঙ্গে বাগনান এবং শ্যামপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা সুগম হবে। কিন্তু সেতু হয়নি। ফলে, নৌকাতেই পারাপার করতে হয় বাসিন্দাদের।
সমস্যাগুলির কথা স্বীকার করেন এই কেন্দ্রের বিদায়ী তৃণমূল বিধায়ক পুলক রায়। মদাই গ্রামে চোলাই মদের কারখানাগুলির ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘‘বহু বছর ধরে এই গ্রামে চোলাই মদর কারখানাগুলি চলছে। তবে এখন তার প্রকোপ অনেক কম। ব্যবসায়ীদের বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা কী ভাবে করা যায় তা নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। কিছু প্রকল্প করা হয়েছে। আশা করা যায় সমস্যা আর থাকবে না।’’ কলেজ ও বোয়ালিয়ায় সেতুর ব্যাপারেও তিনি চেষ্টা করছেন বলে পুলকবাবু জানান। পানীয় জলের সমস্যার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘‘এখন অনেক গ্রামেই ঘরে ঘরে পানীয় জল সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে কালীনগর ১৪০০ কোটি টাকার যে প্রকল্প হচ্ছে সেটি রূপায়িত হয়ে গেলেই প্রতিটি বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে যাবে।’’