শ্যামপুর গাদিয়াড়া বাসস্ট্যান্ড। ছবি: সুব্রত জানা।
অনেকটা বদলে গিয়েছে শ্যামপুর। তৈরি হয়েছে ঝাঁ চকচকে বাগনান-শ্যামপুর ও শ্যামপুর-গাদিয়াড়া রাস্তা। গাদিয়াড়া পর্যটনকেন্দ্রে তৈরি হয়েছে বাসস্ট্যান্ড, রূপনারায়ণের পাড়ের সৌন্দর্যায়ণ করা হয়েছে। সংস্কার হয়েছে গাদিয়াড়া জেটিঘাটের। সরকারি টুরিস্ট লজেরও আমূল সংস্কার হয়েছে। পাড়ায় পাড়ায় তৈরি হয়েছে ঢালাই রাস্তা। চালু হয়েছে বেলপুকুরে আইটিআই কলেজ। গত পাঁচ বছরে এই বিধানসভা কেন্দ্রে এমনই।
কিন্তু না পাওয়ার তালিকাতেও আছে একাধিক বিষয়। এখনও প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছায়নি। পরিবহণ সমস্যা এখানে প্রকট। বাসস্ট্যান্ড তৈরি হলেও বাড়েনি বাসের সংখ্যা। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার পরে শ্যামপুর বা গাদিয়াড়া থেকে কোনও বাস পাওয়া যায় না। নতুন কোনও শিল্প এখানে গড়ে ওঠেনি।
এই এলাকার অর্থনীতি নির্ভর করে ইটভাটার উপরে। এই বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে প্রায় দেড়শো ইটভাটা আছে। তার বাইরে আর কোনও শিল্প গড়ে না ওঠায় এলাকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়নি। এই বিধানসভা এলাকায় দু’টি হাসপাতাল আছে। তা হল শ্যামপুর-২ ব্লকের ঝুমঝুমি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং শ্যামপুর-১ ব্লকের কমলপুর গ্রামীণ হাসপাতাল। দু’টি হাসপাতালেই গুরুতর কোনও রোগীর চিকিৎসা হয় না বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, হাসপাতাল দু’টি এই বিধানসভা কেন্দ্রের এক প্রান্তে অবস্থিত। ফলে প্রত্যন্ত এলাকার রোগীরা এই দু’টি হাসপাতালে যাওয়ার থেকে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে যাওয়াই শ্রেয় মনে করেন। স্থানীয় বাসিন্দা উত্তম রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘শ্যামপুরে একটি ১০০ শয্যার
উন্নত মানের হাসপাতাল গড়ার খুব দরকার ছিল।’’
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, একটি মহিলা কলেজের। ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা অসিতবরণ সাউ বলেন, ‘‘উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরে বেলপুকুর কলেজে অনেক ছাত্র-ছাত্রীই ভর্তি হতে পারে না আসন কম থাকায়। ছাত্রেরা অন্য কলেজে চলে গেলেও ছাত্রীদের পক্ষে অনেক সময়ে তা সম্ভব হয় না। একটা মহিলা কলেজ এখানে খুব দরকার।’’ গাদিয়াড়া-গেঁওখালি পাকা সেতু করার দাবিও জানালেন অনেকে। তাঁদের আরও দাবি, শ্যামপুরে একটি ফুটবল স্টেডিয়াম করার। কিন্তু কোনওটিই হয়নি।
শ্যামপুর-১ ব্লকের ৬টি এবং শ্যামপুর-২ ব্লকের ৮টি পঞ্চায়েত নিয়ে শ্যামপুর বিধানসভা এলাকা। ২০০১ সাল থেকে এই বিধানসভা তৃণমূলের কংগ্রেসের দখলে। ২০০১ সাল থেকেই বিধায়ক কালীপদ মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘অনেক গ্রামেই আমরা বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছে দিতে পেরেছি। উলুবেড়িয়ার কালীনগরে ১৪০০ কোটি টাকা খরচ করে একটি পানীয় জল প্রকল্প তৈরি হচ্ছে। সেটির কাজ শেষ হলে জেলার ছয়টি ব্লকে বাড়ি বাড়ি পানীয় জল দেওয়া হবে। তার মধ্যে শ্যামপুর ১ এবং ২ ব্লকও আছে।’’
হাসপাতাল পরিষেবার ঘাটতির কথাও স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘শ্যামপুরের মাঝে একটি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল করা দরকার। আমরা জমি খুঁজছি। জমি পাওয়া গেলেই প্রস্তাবটি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠাব।’’ অটো এবং টোটোর দৌরাত্ম্যের জন্যই যে বাসের সংখ্যা বাড়ছে না সেটাও স্বীকার করেন বিধায়ক। তিনি বলেন, ‘‘অটো এবং টোটোর জন্য আমরা আলাদা রুট করব। তা নিয়ে অটো এবং টোটো সংগঠনের সঙ্গে একাধিকবার বসেছি। আবার আলোচনায় বসব।’’ মহিলা কলেজ এবং স্টেডিয়াম তৈরির ব্যাপারে চেষ্টা চালাচ্ছেন বলেও বিধায়ক জানান।