West Bengal Assembly Election 2021

Bengal Polls 2021: প্রশ্ন নিয়েই ভোট পথে যমজ জনপদ

গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর, দুই বিধানসভার প্রতিটি চা বাগানে ডেরা বেঁধেছেন আরএসএসের প্রচারকেরা। কেউ এই রাজ্যের, কেউ ভিন্‌ রাজ্যের।

Advertisement

সব্যসাচী ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২১ ০৪:৫১
Share:

প্রতীকী ছবি।

চা বাগান, পাহাড়ি জমি, বছরভর জংলা পোশাকের এসএসবি জওয়ানদের টহলদারি— পাশাপাশি দুই জনপদের ছবি একই। যেন দুই যমজ বোন। মালবাজার-নাগরাকাটা। জেলা সদর থেকে দূর অনেকটাই। দুই বিধানসভার গণনাকেন্দ্র জেলা থেকে পৃথক, ভোটকর্মীদের প্রশিক্ষণ শিবিরও পৃথক। জেলার অন্যান্য শহর বা জনপদ থেকে এই দুই ‘যমজ’ জনপদের ভূগোল-অর্থনীতিও ভিন্ন। চৈত্র মাসে বৃষ্টি হলে জলপাইগুড়ির গ্রামে চাষিদের মুখে অন্ধকার নামে, জমির আলুর দফারফা হয়ে গেল। হাসি ফোটে মালবাজার-নাগরাকাটার মুখে, এ সময়ের বৃষ্টি চা পাতার জন্য বড্ড ভাল। নিজেদের মতো দুই যমজ জনপদের রাজনীতির রকমসকমেও বেজায় মিল। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের মুখে মালবাজারের সিপিএমের বিধায়ক বুলুচিক বরাইক আচমকা তৃণমূলে যোগ দেন। এ বারের বিধানসভা ভোটের মুখে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন নাগরাকাটার বিধায়ক শুক্রা মুন্ডা। একই চিত্রনাট্য। তবে ২০১৬ সালে সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়ে জোড়াফুল টিকিটে মালবাজারেই প্রার্থী হয়েছিলেন বুলুচিক বরাইক। মালবাজারে জিতেছিল তৃণমূল। কিন্তু শুক্রা দলে যোগ দিলেও টিকিট দেয়নি বিজেপি।

Advertisement

এখান থেকেই বদলাতে শুরু করেছে চেনা চিত্রনাট্যও। যে চিত্রনাট্যের শুরু ‘গোঁসা ঘর’ দিয়ে।

যে দিন বিজেপি জলপাইগুড়ি জেলার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছিল, সে দিন দলের ভোট প্রস্তুতি নিয়ে সভা করছিলেন শুক্রা মুন্ডা। প্রার্থী তালিকায় নাম নেই শুনে সোজা বাড়ি চলে যান। ঘরে ঢুকে খিল দেন। মোবাইল বন্ধ করে রাখেন টানা দু’ঘণ্টা। তার পরে বাইরে বেরিয়ে বলেন, ‘‘দলের সঙ্গেই রয়েছি।’’ যদিও দলের প্রার্থী, প্রাক্তন বিএসএফ জওয়ান পোনা ভেংগ্রার হয়ে প্রচারে শুক্রাকে তেমন দেখাই যাচ্ছে না। শোনা কথা, ওই ঘণ্টাখানেকের ‘গোঁসা ঘর’ থেকে অনুগামীরা অনেকেই নাকি নানা নির্দেশ পেয়েছিলেন। তাঁরা নাকি ভোটের দিন দাদা-র ‘অপমানের’ বদলা নিতে তৈরি হচ্ছেন। গত লোকসভা ভোটের নিরিখে নাগরাকাটা আসনে অনেক ভোটে এগিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী। কিন্তু দাদার ‘গোঁসা’ অস্বস্তিতে রেখেছে গেরুয়া শিবিরকে।

Advertisement

সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে ফিরে আসার লড়াইয়ে নামা জোসেফ মুন্ডা। গত বিধানসভা ভোটে তৃণমূল প্রার্থী শুক্রা মুন্ডার কাছে মাত্র হাজার তিনেক ভোটে হেরেছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী জোসেফ। সেই জোসেফ এ বার তৃণমূল প্রার্থী। জেতার জন্য দিন-রাত এক চা বাগান থেকে অন্য বাগানে ঘুরছেন। দেখা হলে হাসছেন। বলছেন, ‘‘সবই তো হাতের তালুর মতো চেনা। সব চেয়ে বড় কথা আমাদের দলে কারও কোনও রাগ নেই।’’

তৃণমূল নেতারা ঘনিষ্ঠ মহলে বলছেন, ‘‘ক্ষোভ মিটলেও গত লোকসভা ভোটের হিসেব তো মেটেনি। গত লোকসভা ভোটে মালবাজার বিধানসভায় বিজেপি প্রার্থী এগিয়ে ছিল প্রায় ৩৪ হাজার ভোটে। সেই হিসেব ডিঙানো শক্ত নয়?’’ পার্টি অফিসে বসে একই প্রশ্ন শুনে হাসছেন তৃণমূল প্রার্থী।

লোকসভা ভোটে সিপিএম প্রার্থী মালবাজার বিধানসভায় পেয়েছিলেন ৯ হাজারের কিছু বেশি ভোট। এক সময়ের বাম দুর্গ বলে পরিচিত মালবাজারে বামেদের ভোট এতটা কমতে পারে? উত্তর হল, হ্যাঁ কমেছিল। তার পরে প্রশ্ন হল, এ বার কী হবে? সংযুক্ত মোর্চার তরফে মালবাজারে সিপিএম প্রার্থী মনু ওঁরাও চা শ্রমিক। তিনি বলছেন, ‘‘আমাদের ভোট বাড়বে কোনও সন্দেহ নেই।’’

গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর, দুই বিধানসভার প্রতিটি চা বাগানে ডেরা বেঁধেছেন আরএসএসের প্রচারকেরা। কেউ এই রাজ্যের, কেউ ভিন্‌ রাজ্যের। দুই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থীও করেছে সঙ্ঘেরই পছন্দে। তাতেই ভরসা রাখছে গেরুয়া শিবির। সে পথও মসৃণ নয়। হিসেব বদলে দিতে পারে দুই বিধানসভায় পরপর ছ’টি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত গ্রাম পঞ্চায়েত গুলির ভোটও। এমনই বহু জিজ্ঞাসা নিয়েই ভোট পথে পা বাড়িয়েছে ডুয়ার্সের যমজ দুই জনপদ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement